parbattanews

রাঙ্গামাটিতে পিডিবির টেন্ডার ঘিরে আ’লীগের দু’গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে

tender-tenderbaji

নিজস্ব প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার ঘিরে রাঙ্গামাটিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পরস্পরবিরোধী দুটি গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। ১৫মে আরও ৮ গ্রুপের কাজের টেন্ডার গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। টেন্ডার জমা দেয়াকে সামনে রেখে উভয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। বুধবার যুবলীগের বিটু চাকমাকে কলার ধরে সিএনজিতে টেনে তুলে পিটিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। এই ঘটনায় উভয় গ্রুপে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও উত্তেজনা। ফলে বৃহস্পতিবার টেন্ডার জমাকে ঘিরে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করা হচ্ছে।

সোমবার ২৫ লাখ টাকার পাঁচ গ্রুপ কাজের টেন্ডারের সিডিউল জমা নেয়া হয়। টেন্ডার জমাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের মধ্যেও টেন্ডারের ৫ গ্রুপ কাজ বাগিয়ে নেয় টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ চক্রটি।

এর আগে গত ৩০ এপ্রিল ৭ গ্রুপ কাজের টেন্ডার আহবান সম্পন্ন হয়। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার তার বাসভবনে উভয় গ্রুপের নেতাদের ডেকে সমঝোতা করে দেয়ার চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি বলে জানা গেছে। জেলা যুবলীগের সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরী সমঝোতার জন্য বৈঠকে বসার বিষয়টি স্বীকার করেন।  

সোমবার অনুষ্ঠিত মাত্র ২৫ লাখ টাকার টেন্ডারের সিডিউল জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কিছু সংখ্যক নেতাকর্মী দুই গ্রুপে বিভক্ত  হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় শহরের বনরুপার চম্পকনগরের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্প অফিস ভাংচুর করা হয়। এ ঘটনায় পিডিবির স্থানীয় কর্তৃপক্ষ রাঙ্গামাটি কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে। ওইদিন দুই গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পিডিবি অফিসসহ আশেপাশের এলাকা। সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের অন্তত: ১০জন আহত হয়েছে। এদের তিনজনকে  গুরুতর অবস্থায় রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা হল যুবলীগ কর্মী মোঃ নজরুল ইসলাম, ছাত্রলীগ কর্মী মামুন ও বাবলা মহাজন।

সংঘর্ষের মধ্যেও ২৫ লাখ টাকার টেন্ডারের ৫ গ্রুপ কাজ বাগিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণকারী চক্রটি। ঠিকাদারদের থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে পিডিবির টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে সরকার দলীয় ওই টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ চক্র। তারা অন্য কেউ যাতে টেন্ডার জমা দিতে না পারে প্রতিটি টেন্ডারে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে টেন্ডার বাক্স পাহারা দিয়ে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। ওইদিন বঞ্চিত নেতাকর্মীদের একটি গ্রুপ টেন্ডার জমা দিতে গেলে দু’গ্রুপে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্প কার্যালয়ে আনুমানিক প্রায় সাড়ে ৯টার দিকে শুরু হয়ে সংঘর্ষ চলে দুপুর প্রায় ১২টা পর্যন্ত।

বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা জাকির হোসেন সেলিম জানান, দলের একটি চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ পিডিবির টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। তাদের টেন্ডারবাজির প্রতিবাদ করতে আমরা টেন্ডার জমা দিতে গেলে ওই চক্রের সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর সশস্ত্র হামলা করে।   

এদিকে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে ব্যাপক সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটলেও সোমবার টেন্ডার জমা নেয় পিডিবির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে নিজেদের নির্ধারিত ঠিকাদারদের সপক্ষে টেন্ডারগুলো জমা দিয়েছে নিয়ন্ত্রণকারীরা। অন্য কেউ টেন্ডার জমা দিতে পারেনি বলে নির্ভরযোগ্যরা নিশ্চিত করেছেন। টেন্ডারগুলো জমা দিয়েছে ইউনাইটেড বিল্ডার্স ৪টি, আরমান এন্টারপ্রাইজ ৪টি, এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা ১টি এবং মিরাজ ইন্টারন্যাশনাল ১টি।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রিত বিদ্যুৎ বিভাগ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্প ২৫ লাখ টাকার পাঁচ গ্রুপ কাজের একটি টেন্ডারের পুন:বিজ্ঞপ্তি আহবান করে। পাঁচ গ্রুপ কাজ হল পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্প বিউবো রাঙ্গামাটির অধীন খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলাধীন ৯নং প্রকল্প গ্রাম ও আশেপাশের এলাকায় ১১ কেভি ও এলটি লাইন নির্মাণ, একই উপজেলাধীন ২নং নতুন প্রকল্প গ্রাম বানছড়া ও আশেপাশের এলাকায় ১১ কেভি ও এলটি লাইন নির্মাণ, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলাধীন সুরেন্দ্র মাস্টারপাড়া হতে উক্রাপাড়া ও আশেপাশের এলাকায় ১১ কেভি ও এলটি লাইন নির্মাণ, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলাধীন ১নং রাবারবাগান হতে মণিন্দ্র লাল বাড়ি ও আশেপাশের এলাকায় ১১ কেভি ও এলটি লাইন নির্মাণ এবং খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলাধীন পুজগাং হাইস্কুল হতে বীরেন্দ্র কারবারিপাড়া ও আশেপাশের এলাকায় ১১ কেভি ও এলটি লাইন নির্মাণ। টেন্ডারের এসব কাজের সিডিউল জমা দেয়ার শেষদিন ছিল সোমবার।

সকালে সরকার দলীয় কিছু নেতাকর্মীর নিয়ন্ত্রণে টেন্ডার জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে দুটি গ্রুপ সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ে। সংর্ঘষে উভয়ের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গোটা রাঙ্গামাটি শহরে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

ওইদিন টেন্ডার বঞ্চিতরা শহরের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলে বিক্ষোভকারীরা দলীয় সুবিধাভোগী নেতাকর্মীদের নাম ধরে তাদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে টেন্ডার বাতিলের দাবি জানায়।
আহত সাবেক যুবলীগ কর্মী মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, জেলা যুবলীগ সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরী ও জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহ মোঃ ইমরান রোকন টেন্ডারবাজির সঙ্গে জড়িত। তাদের টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে বাধা দিতে গেলে তাদের গ্রুপের লোকজন লাঠিসোটা, দা ও রড নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়।

জেলা যুবলীগ সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরী ও জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহ মোঃ ইমরান রোকন জানান, দলের কিছু উশৃঙ্খল কর্মী সামান্য ভুল বুঝাবুঝির কারণে অকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্প (বিভাগ-১) এর নির্বাহী প্রকৌশলী অতিক্রম চাকমা জানান, ওইদিন কতিপয় সরকার দলীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মী সকালের দিকে অফিসে ঢুকে টেন্ডার বাক্স দখলে নেয়ার চেষ্টা করে। একটি গ্রুপ জোর করে টেন্ডারের কাজগুলো তাদের পক্ষে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালালে দুটি গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে খবর দিলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ব্যাপারে রাঙ্গামাটি কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

তিনি জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্পে মোট ২৫ লাখ টাকার ৫ গ্রুপ কাজে সিডিউল বিক্রি হয়েছে ২৭টি। তবে জমা পড়েছে মাত্র ১০টি।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার জানান, শুধু কাগজে কলমে টেন্ডার দেখানো হয়। আসলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অনিয়ম দুর্নীতির কোনো সীমা নেই। গত কয়েক মাস আগেও এ বিভাগের প্রায় ৫ কোটি টাকার কাজ ভাগাভাগি করা হয়েছে।

Exit mobile version