parbattanews

রাঙ্গামাটিতে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল বিরানভূমিতে পরিণত

৬ লাখ একর সংরক্ষিত বন ধংস : হারিয়ে যেতে বসেছে জীববৈচিত্র

 চৌধুরী হারুনুর রশীদ, রাঙ্গামাটি থেকে
অবাধে গাছ কেটে নিধন করে পাচার করায় পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি সার্কেলের বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল উজাড় হয়ে গেছে। এ সার্কেলের প্রায় ৬ লাখ একরের অধিক সরকারি সংরক্ষিত বন ধংস হয়ে গেছে। অবশিষ্ট বন ধংসের দ্বারপ্রান্তে। এসব বিন্তীর্ণ বনাঞ্চল পরিণত হয়েছে বিরানভূমিতে। এতে পার্বত্যাঞ্চল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে জীবন্ত-বৈচিত্র। ইতিমধ্যে হারিয়ে গেছে বহু প্রজাতির বন্যপ্রাণী। এ পর্যন্ত পার্বত্য অঞ্চল থেকে পাচার হয়ে গেছে হাজার হাজার কোটি টাকার কাঠ। ফলে ন্যাড়া হয়ে গেছে পাহাড়। পরিবেশ হারিয়ে ফেলছে ভারসাম্য। ফলে পার্বত্যাঞ্চলে জলবায়ুর পরিবর্তনে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। যে কোন মুহূর্তে বড় ধরণের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটতে পারে।
পার্বত্যাঞ্চলে প্রাকৃতিক বন ছাড়াও কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বিশাল এলাকাজুড়ে সৃজন করা হয়েছিল সরকারি বন বাগান ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল। কিন্তু বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী, পাচারকারীরা  মিলে সেসব সমৃদ্ধ বনজ সম্পদ প্রকাশ্যে লুণ্ঠন করে সাবাড় করে ফেলেছে। এতে পার্বত্যাঞ্চল পরিণত হয়েছে বিরানভূমিতে।অনিয়ন্ত্রিত বনব্যবস্থাপনা এবং অবাধে বৃক্ষ নিধন ও বন উজাড়ের ফলে এখানকার বন ও বনজ সম্পদের অপরিমিত ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বর্তমানে টিকে রয়েছে শুধু কাপ্তাইয়ে সৃজিত জাতীয় উদ্যান। কর্ণফুলী নদীর কোল ঘেঁষে প্রায় ১৩ হাজার একর বিস্তৃত জায়গায় সৃজিত এ জাতীয় উদ্যানটি ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় সকল বনভূমি নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত সময়ে শুধু রাঙ্গামাটি জেলায় ৬ লাখ একরের অধিক সংরক্ষিত বনাঞ্চল ধ্বংস করা হয়েছে। ফলে পার্বত্যাঞ্চলের বিস্তীর্ণ বনভূমি মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। একারণে হারিয়ে গেছে অসংখ্য প্রজাতির বন্যপ্রাণী। একটি জরিপে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন যাবৎ অবাধ নিধন ও পাচারের ফলে ইতিমধ্যে রাঙ্গামাটি জেলার ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮৪০.৮ একর বন ধ্বংস হয়ে গেছে।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৮৬০ সালে চট্টগ্রাম জেলা সৃষ্টির দু’বছর পরে ১৮৬২ সালে বনজদ্রব্য থেকে রাজস্ব আদায়ের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টোল স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে শুরু হয় পার্বত্য চট্টগ্রামে বন ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া। অত:পর ১৮৬৯ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের বন এলাকার দায়িত্বে একজন সহকারী বন সংরক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। ১৮৭২ সালে জেলাপ্রশাসকের রিপোর্ট মতে, রাঙামাটিতে রিজার্ভ ফরেস্টের পরিমাণ ৭৬৩ বর্গমাইল ও বান্দরবানে রিজার্ভ ফরেস্টেও পরিমাণ ৬২০ বর্গমাইল।
 সরকারি তথ্য সূত্রে বলা হয়েছে, ১৮৭১ সালে তৎকালীন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার ৬,৮৮২ বর্গমাইল ভূমির মধ্যে ৫,৬৭০.০ বর্গমাইল ভূমিই সরকারি বন ঘোষিত হয়। এসব বনাঞ্চলের মধ্যে কাঁচালং সংরক্ষিত বন, রাইংখিয়ং সংরক্ষিত বন এবং বরকল সংরক্ষিত বন প্রায় ধংস হয়ে গেছে। ১৯০৯ সালে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে পৃথক হয়ে আত্মপ্রকাশ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বনবিভাগ। নিয়ন্ত্রণে আসে কাচালং, রাইংখিয়ং, সীতাপাহাড়, মাতামূহুরী ও সাংগু বনের আরও ১ হাজার ৬৫ বর্গমাইলের সংরক্ষিত বন এলাকা এবং ৪ হাজার ৩০ বর্গমাইলের অশ্রেণীভূক্ত বনাঞ্চল। ১৯৯০ সালে সরকারিভাবে বনের গাছ কর্তন বন্ধ ঘোষণা করা হলেও বন রক্ষায় আর কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে দিনের পর দিন অবাধে চলতে থাকে পার্বত্য এলাকার বৃক্ষ নিধন ও বনজ সম্পদ পাচার কাজ। এতে পার্বত্যাঞ্চলের বনভূমি ধংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছায়।  পাশাপাশি কাঠ পাচার অব্যাহত রয়েছে পূর্বের মতোই। এক্ষেত্রেও পূর্বের বনকর্মকর্তাদের মতো বর্তমান বন কর্মকর্তারাও পাচারকারীদের সাথে যুথবদ্ধ। বন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ চেক পোস্টে পোস্টিং নিতে এখনো বিপুল পরিমাণ টাকা গুণতে হয়। নিচ্ছেন উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা। কিন্তু সংরক্ষিত বাগানে নতুন করে কোন বাগান করার উদ্যেগ না নিয়ে ফ্রি পারমিটের আড়ালে নতুন করে সরকারী বাগানের কাঠ উজাড় হয়ে যাচ্ছে।  

Exit mobile version