parbattanews

রাঙ্গামাটির বরকলে সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের ইট সলিং

রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার আইমাছড়ার রাস্তায় নিম্নমানের ইট সলিং নিয়ে অভিযোগ উঠছে। এলাকাবাসী রাস্তার কাজে বাঁধা দিলেও ঠিকাদার মো. হোসেন তোয়াক্কা না করে কাজ চালিয়ে গেছেন। পরে এলাকাবাসী উপজেলার জগনাথছড়া বিজিবি ক্যাম্পে অভিযোগ করলে কাজের নিম্নমানের জন্য রাস্তার সলিং কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়।

সরকারি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বরকল উপজেলার দিগলছড়ি হতে জগনাথছড়া ঘাট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তায় ইট সলিং এর কাজ চলছে। ওই কাজটি দেওয়া হয় দেওয়ান এন্ড কম নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।

প্রতিষ্ঠানটি সরকারি সিডিউলের শর্ত মতে কাজ করার কথা থাকলেও তা তারা মানছে না। সরকারের এই কাজে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয় করার কথা রয়েছে। কিন্তু যে নিম্নমানের ইট দিয়ে কাজ চলছে তাতে অর্ধেক টাকা দিয়ে কাজ হয়ে যাবে বলে স্থানীয়দের ধারণা। এতে এলাকাবাসী চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বরকল উপজেলা চেয়ারম্যান বিধান চাকমা জানান, এই রাস্তাটি অনেক দিন আগে এলাকাবাসী সংস্কার করে। রাস্তায় যখন ইটের সলিং করা হচ্ছে, তখন ইটের মান নিম্নমান হওয়ায় এলাকাবাসী তাঁর কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। পরিপ্রেক্ষিতে তিনি নিজেই কাজটি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি ইটের মান নিম্নমান হওয়ায় প্রকল্প কর্মকর্তাকে জানালে তারাই কাজ বন্ধ করে দেন।

স্থানীয় কার্বারী জীবন চাকমা জানান, যে সড়কে ইটের সলিং করা হচ্ছে,  সেখানে কিছু ইট ভালো মানের হলেও বেশিরভাগই নিম্নমানের। যার ফলে এই রাস্তা দিয়ে কোন গাড়ি চলাচল করলে রাস্তার ইটগুলো ভেঙ্গে যাবে। ফলে অল্পতেই রাস্তার বেশি ক্ষতি হবে।

উপজেলার সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান জানান, তার  কাছেও এই রাস্তা নিয়ে অভিযোগ এসেছে। রাস্তার ইট সলিং খুবই নিম্নমানের হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রায় ৩ কিলোমিটার একটি রাস্তার ইটের সলিং এর কাজ করছে ‘দেওয়ান এন্ড কম’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। যার মালিক হলেন কমল বিকাশ দেওয়ান নামের একজন ব্যক্তি।

‘দেওয়ান এন্ড কম’ প্রতিষ্ঠানের মালিক কমল বিকাশ দেওয়ান জানান, নোটারী পাবলিক আইনের মাধ্যমে তিনি এই প্রকল্পের কাজটি ঠিকাদার মো. হোসেন ও সোহেলকে হস্তান্তর করেন। তিনিও শুনছেন কাজে অনিয়ম হচ্ছে। তবে এরা যেভাবে কাজ করছে সম্পুর্ণ দায় এদের বলে তিনি জানান।

প্রতিবেদক কত টাকার বিনিময়ে কাজটি হস্তান্তর করেছেন জানতে চাইলে তিনি শুধু কাজের লাভের অংশ থেকে টাকা নিবেন বলে জানান।

বর্তমান উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুজন কান্তি দাশ জানান, এই ব্যাপারে তাদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে কিভাবে এই সমস্যা সমাধান করা যায়। তিনি রাস্তার ইট সলিং নিয়ে বলেন, রাস্তায় দুই নাম্বার ইট ব্যবহার করার কারণে ১০ থেকে ১২ দিন কাজ বন্ধ রাখা হয় এবং ঠিকাদারকে নির্দেশ দেয়া হয় এক নাম্বার ইট দিয়ে সলিং এর কাজ করার জন্য। না হলে কাজ বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

এদিকে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, এই রাস্তার কাজ করছেন মো. হোসেন নামের এক ব্যক্তি। মো. হোসেনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই রাস্তার কাজের জন্য ব্যয় হবে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এখানকার এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগে কাজ বন্ধ করে। তিনি এলাকাবাসীর এ অভিযোগ নিয়ে আরও জানান, কিভাবে এলাকাবাসি বুঝবে ইট নিম্নমানের দেয়া হচ্ছে।

রাঙ্গামাটি বরকল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এম মঞ্জুরুল হক জানান, বেশ আগে একবার অভিযোগ পেয়েছেন। পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাস্তাটি পরিদর্শন করেন। এসময় রাস্তায় প্রায় ২০ হাজার নিম্নমানের ইট পাওয়া গেছে এবং এই ইটগুলো বাদ দিয়ে পরবর্তীতে ভালোমানের ইট ব্যবহারেও নির্দেশ দেন তিনি।

তিনি আরও জানান, কোন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অন্য কাউকে দিয়ে কাজ করানো সম্পুর্ণ বেআইনী।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে গ্রমীন মাটির রাস্তাসমুহ টেকসই করণের লক্ষে হেরিংবন্ড (এইচবিবি) করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের অধীনে এ রাস্তা নির্মাণ কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা।

Exit mobile version