parbattanews

রাজস্থলীর চন্দ্রঘোনা সড়কে একটি সেতুর অভাবে জনদুর্ভোগ চরমে

কর্ণফুলী নদীতে একটি সেতুর অভাবে রাঙামাটি-রাজস্থলী-বান্দরবান সড়কের লিচুবাগান ফেরীঘাট এলাকায় যানবাহন সহ জন চলাচলে ভোগান্তি লেগেই আছে। যার ফলে চট্রগ্রাম রাঙামাটি বান্দরবান ও রাজস্থলী থেকে বিভিন্ন যানবাহন নিরাপদে এসে সবাইকে কর্ণফুলী নদীর লিচুবাগান এবং রাইখালীর অংশে থমকে যেতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সড়কের এই অংশে কর্ণফুলী নদীতে সেতু না থাকায় পারাপারে অতিরিক্ত সময় লেগে যায়। অনেক সময় পারাপারে প্রায় আধ ঘন্টার অধিক সময় লেগে যায়। যদি ফেরী অপর প্রান্তে থাকে তাহলে ১ ঘন্টাও সময় লেগে যায়। সেতু থাকলে এই অংশ পার হতে সর্বোচ্চ দুই এক মিনিট লাগতো। কিন্তু সেতু না থাকায় এই সড়কে চলাচলকারীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

গত ৩০ বছর যাবৎ সড়কের এই অংশে সেতু নির্মাণের দাবি করে আসছে এলাকাবাসী। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় উচ্চ পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ এসে সরেজমিন এলাকাটি পরিদর্শন করে বিভিন্ন আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু সেতু নির্মিত হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে কাপ্তাই ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে প্রবাহিত কর্ণফুলী নদীর উপর এই ফেরী যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। এছাড়া কক্সবাজার ও টেকনাফের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও কর্ণফুলী নদীর এই স্থানটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। প্রতিদিন এই ফেরীর উপর দিয়ে হাজারের অধিক ছোট বড় যানবাহন চলাচল করছে। তাছাড়া অসংখ্য মানুষ এই এলাকা দিয়ে নৌকা ও সাম্পানযোগে যাতায়াত করছে। সেতু না থাকায় সকলকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

কাপ্তাইয়ের রাইখালীতে অবস্থিত রাঙ্গামাটি জেলার একমাত্র পাহাড়ি কৃষি গবেষনা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলতাফ হোসেন বলেন, গবেষনা কেন্দ্রের প্রয়োজনে প্রতিদিন এই ফেরী দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। অনেক কর্মকর্তা এই গবেষনা কেন্দ্রে আসেন কিন্তু ফেরীর কারণে সহজ যাতায়াত করা সম্ভব হয়না। রাইখালী-লিচুবাগান ফেরীঘাঠে দ্রুততম সময়ে একটি সেতু নির্মানের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ অথবা সেতু মন্ত্রনালয়ের প্রতি অনুরোধ জানান।

চন্দ্রঘোনা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, অনেক সময় ফেরীর মধ্যে বা ফেরীতে উঠার সময় বিভিন্ন যানবাহন অচল হয়ে যায় এবং এসব যানবাহনে অনেক মুল্যবান জিনিসপত্র থাকে। রাত হলে ও গাড়ি সচল করতে না পারায় সেখানে পুলিশ পাহারা দিতে হয়। তাছাড়া ফেরী পারাপার নিয়ে অনেক সময় চালক এবং যাত্রীদের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি হলে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয় যার ফলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। এ নিয়ে থানা পুলিশের মাঝে একটা মানসিক চাপ বিরাজ করে থাকে। সেতু নির্মিত হলে এ ধরনের ঝামেলা পোহাতে হবেনা পুলিশকে।

এদিকে লিচুবাগান-রাইখালীর ফেরী ঘাঠে এ অংশে সেতু না থাকায় এ অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষি পণ্য এবং মৌসুমী ফলমুল বিশেষ করে আম, জাম, কলা, কাঁঠাল, আনারস সহ অন্যান্য মৌসুমী ফল পরিবহনে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। ফলে উৎপাদিত ফলমুল যথাসময়ে বাজারজাত করতে না পারায় কৃষক সহ সংশ্লিষ্টরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ ফেরীর উপর দিয়ে সাধারন জনগণের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের বিপুল সংখ্যক যানবাহন প্রতিদিন চলাচল করে থাকে। তারাও ফেরীর কাছে এসে পারাপারের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে থাকেন। বিশেষ করে ফেরী চলাচলকালীন ফেরীতে করে অনেক সাধারণ লোকজন যাতায়াত করে থাকে। কিন্তু নদীতে জোয়ারের সময় ফেরীর পাটাতনে হাটুসমান পানি জমে যায়। তখন হেটে চলা লোকজনকে কাপড় চোপড় ভিজিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এ সমস্যা নিত্য দিনের। আবার অতিবৃষ্টিতে ফেরীর পাঠাতন নদীতে ডুবে গেলে তখন ফেরী চলাচল বন্ধ হয়ে জনদুর্ভোগ আরো বৃদ্ধি পায়।

তাই এলাকাবাসীসহ তিন পার্বত্য জেলার মানুষের জনদুর্ভোগ এড়াতে এবং এই সড়কের গুরুত্ব অনুধাবন করে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে দ্রুত লিচুবাগান-রাইখালীর কর্ণফুলী নদীর এই অংশে সেতু নির্মানে জোর দাবি জানিয়েছে।

Exit mobile version