রাজস্থলী সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সসেবা চালকের কাছেই জিম্মি

fec-image

রাঙামাটির প্রত্যন্ত উপজেলা হিসেবে পরিচিত রাজস্থলী। এই উপজেলার ২০ থেকে ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষের জরুরি সেবায় রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২টি সরকারি এম্বুলেন্স । কিন্তু এম্বুলেন্স থাকলেও চালকের কাছে অনিয়ম ও কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে সময়মত চিকিৎসাসেবা নিতে পারছেন না রোগীরা।

এ অবস্থায় সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালককে সময়মত না পেয়ে জরুরি চিকিৎসাসেবা নিতে এই উপজেলার মানুষকে ভরসা করতে হয় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস অথবা ভটভটি, না হয় অটো রিকসার ওপর। এতে বাড়তি ভাড়া ও চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে এ উপজেলার রোগীদের।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায় , উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এর আগের চালক সালাউদ্দিন ১০ বছর আগে অনিয়মের দায়ে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার গাড়িচালক কিছুদিন অ্যাম্বুলেন্স চালকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে চাইঅং মারমা নামক একজন চালককে নিয়োগ করা হয় এম্বুলেন্স সেবাকে স্বাভাবিক করতে। কিন্তু তিনি যোগদান করার পর থেকে অনিয়ম ও কর্তব্যকাজে ফাঁকি দিয়ে আসছে নিয়মিত। গত শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টায় উপজেলার হাজি পাড়া নামক এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা সেলিম হার্টঅ্যাটাক করলে স্থানীয়রা হাসপাতালে নিয়ে আসে। তখনকার কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ফাহমিদা আকতার চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমক) রেফার করেন। কিন্তু প্রায় দুইঘন্টা অপেক্ষা করেও চালককে না পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার গাড়ি চালক দিয়ে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যায় রোগী।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজস্থলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গুরুতর রোগীদের এখান থেকে স্থানান্তর করা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও চন্দ্রঘোনা মিশন হাসপাতালে। স্থানান্তরিত রোগীদের পরিবহনের জন্য ছুটতে হয় প্রাইভেট গাড়ির কাছে আর সুযোগ বুঝে প্রাইভেট গাড়িগুলো সরকারি ভাড়ার তুলনায় অনেক বেশি অর্থ হাতিয়ে নেয়। বিপদে পড়ে বেশি টাকা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়মিত রোগী পরিবহন করেন রোগীর স্বজনরা।

বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের এক হত দরিদ্র পরিবারের মহিদুল ইসলাম নামের এক যুবক জানান, সপ্তাহ খানেক আগে তার স্ত্রীকে রাতের বেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যায়। রোগীর সমস্যা গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু মেডিকেলে যাওয়ার জন্য সরকারি এম্বুলেন্সের চালক উপস্থিত না থাকায় বেশি টাকায় প্রাইভেট একটি মাইক্রো নিয়ে আমাকে যেতে হয়। এতে টাকা বেশি লাগলেও মাইক্রো ম্যানেজ করতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে অনেক।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিক্লপনা কর্মকর্তা ডা. রুইহলা অং মারমা বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের এম্বুল্যান্সের চালক কাজ কর্মে ফাঁকি দেওয়ায় এবং প্রতিনিয়ত মদ্যপান করে মাতাল অবস্থায় থাকায় তাকে আমি কয়েকবার শোকজ করেছি। একই সাথে তার অনিয়ম ও কর্মস্থলে ফাঁকিবাজির তথ্য জানিয়ে শাস্তিমূলক বদলির জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জেলা পরিষদ, জেলা সিভিল সার্জন অফিসে অনেক লেখালেখি করছি। দুঃখের বিষয় অজ্ঞাতকারণে সে বহাল তবিয়তে আছে এখনো। তিনি আরো বলেন, শাস্তি হিসেবে চালক চাইঅং মারমার এ মাসের বেতন বন্ধ রাখার জন্য অফিস সহকারীকে নির্দেশ দিয়েছি আমি। তবুও সে অদৃশ্য খুঁটির জোরে রাজস্থলী সদর হাসপাতালে ধারাবাহিকভাবে অনিয়ম করে যাচ্ছে। ফলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত রাজস্থলী উপজেলার সাধারণ জনগণের শান্তি নেই।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অ্যাম্বুলেন্স, রাজস্থলী, হাসপাতাল
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন