দ্রুত সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চান নেতৃস্থানীয়রা

সরকারি ভূমি নিয়ে বিজিবি উপজেলা প্রশাসনের টানাপোড়েন

fec-image

খাগড়াছড়ির রামগড়ে প্রাচীন এসডিও বাংলো ও অফিস এলাকায় সরকারি জায়গার দখল নিয়ে ৪৩ বিজিবি কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে টানাপোড়ন চলছে।

সোমবার (১ আগস্ট) ওই এলাকায় বিজিবির দেয়া কাঁটাতারের বেড়ার মেরামতের কাজ করার অপরাধে দুই ব্যক্তির কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আবুল কালাম ও রুহুল আমীন নামে ওই দু’ব্যক্তিকে ৫ দিন করে কারাদণ্ড দেন।

এদিকে, এ ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার (২ আগস্ট) পোশাক পরিহিত বিপুল সংখ্যক বিজিবি সদস্য আলোচ্য স্থানে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ করেন। খবর পেয়ে উপজলা নির্বাহী অফিসার খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাত ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান।

এ সময় তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘২৩৫ নং নাকাপা মৌজার ১৪৮ নং হোল্ডিংয়ে বিভিন্ন দাগে উপজেলা পরিষদের নামে ৫ দশমিক ৪৫ একর রেকর্ডীয় জায়গাটি বিজিবি সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে দখল করেছে। পরিষদের এ জায়গায় ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত সাবেক প্রাচীন মহকুমা প্রশাসকের (এসডিও) অফিস ও বাসভবন (বাংলো) রয়েছে। এছাড়া উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিস, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও পল্লি সঞ্চয় ব্যাংক রয়েছে। এসব সরকারি অফিসসহ পুরো জায়গায় বিজিবি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করে।’

ইউএনও আরও বলেন, ‘ওই এলাকায় মোট জায়গা রয়েছে ৮ দশমিক ৪৫ শতক। এরমধ্যে পরিষদের নামে রেকর্ডীয় ৫ দশমিক ৪২ শতক জায়গা ছাড়াও অবশিষ্ট জেলা প্রশাসকের খাস খতিয়ানের ৩ দশমিক ৩ একর জায়গা আছে। এ জায়গার মধ্যে উপজেলা ভূমি অফিসের জন্য ১ দশমিক ৫০ শতক ও প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের মডেল মসজিদ ও ইসলামিক গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণের জন্য শূন্য দশমিক ৮৫ একর জায়গার প্রস্তাবনা রয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।

তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে বিজিবি রাতের অন্ধকারে উপজেলা পরিষদের রেকর্ডীয় এবং জেলা প্রশাসকের খাস খতিয়ানের পুরো জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, সীমান্ত-১ শাখা এর স্মারক নং- ৪৪.১০.০০০০.১১৬.২৪ .০২২.১৯ (অংশ-২)-১৯২, তারিখ ২৮/১১/২০১৯ মূলে অবৈধভাবে দখলকৃত জমির বিষয়ে বিদ্যমান আইন ও বিধিমালার আলোকে সরকারি স্বার্থ সংরক্ষণের নিমিত্তে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

ইউএনও জানান, উক্ত জমি হতে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে বারবার পত্র দেয়া হলেও বিজিবির পক্ষ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। বরং গত এপ্রিলে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক প্রাচীন এসডিও বাংলোর সংস্কার কাজেও বিজিবি বাধা দেয়।

তিনি আরও জানান, বিজিবির পক্ষ থেকে ৩ দশমিক ৫ একর জায়গা বন্দোবস্ত চেয়ে আবেদন করা হলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় থেকে তা খারিজ হয়ে । অপরদিকে, বিজিবির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ১৭৯৫ সালে ‘রামগড় লোবাল ব্যাটালিয়ন’ নামে রামগড়ে বিজিবির গোড়াপত্তনের পর থেকেই আলোচ্য জায়গাটি তাদের দখলে রয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রীয় রণকৌশলগত কারণে উক্ত স্থানে বিজিবির অবস্থান জরুরি।

সোমবার আলোচ্য জায়গায় বিজিবি সদস্যদের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ সম্পর্কে ৪৩ বিজিবির উপ অধিনায়ক মেজর মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বিজিবি তাদের বিশেষ ক্যাম্প এলাকায় কাঁটাতারের বেড়ার রুটিন ম্যান্টিনেন্সের কাজ করেছে।’

এদিকে, সরকারি জায়গা নিয়ে বিজিবি ও উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে চলা টানাপোড়নের ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা বলেছেন, ‘সকলের জন্য বিব্রতকর এ অবস্থার দ্রুত নিরসনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ জরুরি।’

রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কারবারি বলেন, ‘সরকারি জায়গা নিয়ে বিজিবি ও উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে সৃষ্ট মতবিরোধ অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ও সবার জন্য বিব্রতকর। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে সহজেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।’

রামগড় পৌরসভার মেয়র মো. রফিকুল আলম কামাল বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকে এ সমস্যা চলছে। এতদিনেও সমাধান না হওয়া দুঃখজনক। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত এর নিরসন না করলে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিভাগের মধ্যে আরও তিক্ততা বাড়বে।’

সাবেক রামগড় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাদের বলেন, ‘২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিষদ সংলগ্ন জায়গায় মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজে বিজিবির বাধা দেয়া এবং পুরো এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন ও বিজিবির মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়।’

তিনি বলেন, ‘সেক্টর কমান্ডার ও জেলা প্রশাসক আলোচ্য জায়গায় সরেজমিনে যৌথ পর্যবেক্ষণ ও আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এর সুরাহা সম্ভব।’

রামগড়ের প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব উপজেলা আওয়ামী লীগেরর সভাপতি মো. মোস্তফা হোসেন বলেন, ‘সরকারি জায়গা নিয়ে দুই সংস্থার সম্পর্কের যে অবনতি ঘটেছে তা মঙ্গলজনক নয়। চিঠি চালাচালিতে এ সমস্যার সমাধান হবে না। দুপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আলোচনার টেবিলে বসলেই সমাধান হবে।’

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উপজেলা প্রশাসন, বিজিবি, রামগড়
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন