রামগড়ে গৃহবধুর শ্লীলতাহানীর চেস্টাকালে গণধোলাইয়ে এক আওয়ামীলীগ নেতা আহত ॥ জনরোষে স্ত্রী ও পুত্র জখম

Ramgarh 24
নিজস্ব সংবাদদাতা, রামগড়:

রামগড় উপজেলার মধ্যম লামকুপাড়া গ্রামে গত শুক্রবার গভীর রাতে এক গৃহবধুর শ্লীনতাহানীর চেস্টাকালে গ্রামবাসীর গণধোলাইয়ে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহসভাপতি তাজুল ইসলাম বেদু গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে বাঁচাতে এসে স্ত্রী নুর নাহার(৪৫) ও পুত্র জাহিদুল ইসলাম(১৮)ও বিক্ষুব্ধ মানুষের হামলায় আহত হয়েছেন।

 

পুলিশ জনরোষ থেকে আহত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। এদিকে গতকাল শনিবার সকালে মধ্যম লামকুপাড়ার  কয়েকশ বিক্ষুব্ধ নারী পুরুষ রামগড় এএসপি সার্কেল অফিসে এসে সহকারী পুলিশ সুপারের কাছে বেদুর গ্রেফতার ও বিচারের  দাবী  জানায়। রামগড় ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার হাছিনা আক্তার জানান, মধ্যম লামকুপাড়া গ্রামে একের পর নারী নির্যাতন, চাঁদাবাজি, অন্যের বাগানের গাছপালা কেটে লুটপাটসহ  বিভিন্ন অপকর্মের কারণে আওয়ামীলীগের নেতা তাজুল ইসলাম বেদুর বিরুদ্ধে পুরো গ্রামবাসী দীর্ঘদিন ধরে বিক্ষুব্ধ।

গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে তিনি  বিবি কুলসুম আক্তার(৩০) নামে এক গৃহবধুর বাসায় গিয়ে তাকে নানা হুমকী ধমকী দেয়। এক মুহুর্তে তিনি ঐ গৃহবধুকে জোরপূর্বক শ্লীনতাহানীর চেস্টা করে। এ সময় তার আর্তচিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে। বিক্ষু্ব্ধ লোকজন তাকে গণধোলাই দিয়ে লামকুপাড়াস্থ রামগড় ইউনিয়ন পরিষদ ভবন প্রাঙ্গনে গাছের সাথে বেধে রাখে। স্ত্রী নুর নাহার ও ছোট ছেলে জাহিদ বেদুকে উদ্ধার করতে পরিষদ ভবন এলাকায় এলে তারাও জনরোষে পড়ে । গ্রামবাসীদের হামলায় তারা আহত হয়।

খবর পেয়ে রামগড় থানার এএসআই শাহাজালালের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে গিয়ে বেদু ও তার স্ত্রী পুত্রকে উদ্ধার করে আনার চেস্টা করলে বিক্ষু্ব্ধ গ্রামবাসীরা পুলিশের উপর চড়াও হয়। তারা রাস্তার উপর গাছের টুকরা ফেলে  ব্যারিকেড দেয়। পরে রামগড় সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো: শাহজাহান হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে বেদুর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে গ্রামবাসীরা শান্ত হন। পুলিশ ইউনয়ন পরিষদ এলাকা থেকে আহত অবস্থায় বেদু ও তার স্ত্রী,পুত্রকে উদ্ধার করে রাত সাড়ে ১২টার দিকে রামগড় হাসপাতালে ভর্তি করায়। 

বর্তমানে বেদুর স্ত্রী নুর নাহার রামগড় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বেদু ও তার ছেলে জাহিদকে ফেনী হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে বেদুর নির্যাতনের শিকার হওয়া গৃহবধু বিবি কুলসুম অভিযোগ করেন, এর আগেও বেদু কয়েক দফা তার শ্লীনতাহানী করে। ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর রাতে তার স্বামীকে বেঁধে রেখে বেদু তার শ্লীনতাহানী করে।

এ ঘটনার বিচার চেয়ে রামগড় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে সে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তার ভয়ে তিনি দীর্ঘদিন ছাগলনাইয়ায় এক আত্মীয়র বাড়িতে আশ্রয়ে ছিলেন। গত ৯ এপ্রিল তিনি তার সন্তানদের নিয়ে লামকুপাড়ার স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসেন। শুক্রবার রাতে হঠাৎ এসে বেদু তার উপর চড়াও হয়। থানায় অভিযোগ দেয়ার সে তাকে অশ্লিলভাষায় গালাগাল ও হুমকী ধমকী দেয়।

এক মূহুর্তে বেদু তাকে টানাহেঁচড়া করে শ্লীনতাহানীর চেস্টা করে। অন্যদিকে, বেদুর স্ত্রী নুর নাহার জানান, গ্রামের কতিপয় লোক বেদুর কাছে এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। এ চাঁদার জন্য তারা লামকুপাড়ায় বেদুর একটি মুদি দোকান ও ফার্নিচারের দোকান এক মাস ধরে বন্ধ করে দেয়। চাঁদাবাজির জন্য খাগড়াছড়ি কোর্টে মামলা দেয়ায় তারা পরিকল্পিতভাবে বেদুর উপর হামলা চালায়। তাকে বাঁচাতে গেলে তিনি ও তার পুত্রও হামলার শিকার হয়ে আহত হন।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা তার স্বামীর মুদি ও ফার্নিচারের দোকান ভাংচুর করে মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। রামগড় সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো: শাহজাহান হোসেন জানান, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে তিনি নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্দ গ্রামবাসীদের শান্ত করে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। এদিকে বেদুর গ্রেফতার ও শাস্তির দাবীতে মধ্যম লামকুপাড়ার কয়েকশ নারী পুরুষ গতকাল শনিবার সকালে সহকারী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সমবেত হয়। এসময় বেদুর নির্যাতনের শিকার ঐ গ্রামের জাহানার বেগম, বিবি কুলসুম, হাজেরা বেগম, ফরিদা বেগম, ছায়েরা খাতুন, রোকেয়া বেগম প্রমুখ নির্যাতিতা মহিলারাও উপস্থিত ছিলেন।

সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো: শাহজাহান হোসেন সমবেত গ্রামবাসীদের বেদুর বিরুদ্ধে সুনির্দিস্ট অভিযোগ দেয়া হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রিুতি দিলে লোকজন ফিরে যায়। এদিকে রামগড় থানার এসআই শহীদ জানান, গতকাল শনিবার তাজুল ইসলাম বেদুর বিরুদ্ধে গৃহবধু বিবি কুলসুমকে শ্লীনতাহানীর একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। ভিকটিম নিজে এ মামলার বাদী। এছাড়া বেদুর বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি  লিখিত অভিযোগ থানায় জমা দিয়েছে লোকজন। এ গুলো তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
                                      

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ, খাগড়াছড়ি, পার্বত্যনিউজ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন