রামগড়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ’র বাঁধার মুখে পাঁচ দিন ধরে আটকে আছে ‘মানবতা’

fec-image

ভারতীয় বিএসএফ’র নির্মম আচরণের শিকার হয়ে রামগড়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পাঁচ দিন ধরে আটকে আছে ‘মানবতা’। খাগড়াছড়ির রামগড় ও ভারতের সাব্রুম সীমান্তে তীব্র রোদ ও ঝড়বৃষ্টিতে ভিজে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন এক নারী। বাংলাদেশীরা ওই নারীকে মাঝে-মধ্যে খাবার সরবরাহ করছে। এতেও বাঁধা দিচ্ছে বিএফএস।

গত বৃহস্পতিবার(২ এপ্রিল) দুপুরে মানসিক ভারসাম্যহীন এ নারীকে ভারতীয় বিএসএফ রামগড়ের এসডিও বাংলো এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে জোরপূর্বক পুশইন করে। এ সময় কাঠালছড়ি এলাকার ভারতীয় গ্রামবাসীও সহযোগিতা করে। খবর পেয়ে বিজিবি ওই নারীকে আটক করে পাল্টা পুশব্যাক করে। এ সময় ভারতীয় বিএসএফও পাল্টা পুশব্যাক করে। সে থেকে ওই নারী দুই দেশের সীমান্ত রেখা ফেনী নদীর বালু চরে প্রচণ্ড রোদ ও বৃষ্টিতে ভিজে আটকা আছে।

সে থেকে ওই নারী বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নো ম্যান্স ল্যান্ডে ‘অমানবিকভাবে’ দিন কাটছে। দুই দেশের সীমান্ত বাহিনীর অস্ত্রের মুখে কোনো দেশেই প্রবেশ করতে পারছেন না ওই নারী। বিজিবি-বিএসএফ বিওপি পর্যায়ে তিন দফা বৈঠকের পর সর্বশেষ দুই বাহিনীর সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকও নিস্ফল হয়েছে। এরপর কোন পক্ষই আর কোন উদ্যোগ নেননি। সে থেকে খাগড়াছড়ির রামগড় ও ভারতের সাব্রুম সীমান্তের বালু চরে সারা দিন তীব্র রোধ আবার কখনো ঝড় বৃষ্টিতে দিন পার করছে। স্থানীয়রা জানায়, বাংলাদেশের নাগরিকরা খাবার দিতে গেলেও বিএসএফ বাঁধা দিচ্ছে। ফলে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে ওই নারী।

জানা গেছে, গত শুক্রবার (০৩ এপ্রিল) সকালে ফেনী নদীর পাড়ে বিজিবি ও বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে তিন দফা বৈঠক হলেও কোনো পক্ষ নারীকে গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। বিকালে নদীর মধ্যবর্তী স্থানে বাংলাদেশ ৪৩ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. তারিকুল হাকিম ও সাব্রুমের ৬৬ বিএসএফের কমান্ডার অফিসার রাজীব কুমার সিংয়ের নেতৃত্বে বৈঠক হয়। বৈঠকস্থলে ওই নারীও উপস্থিত ছিলেন। উভয়পক্ষ থেকে ওই নারীর নাম, পরিচয় জানার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে তাকে নদীর মধ্যবর্তী স্থানে রেখে দুই পক্ষ নিজ নিজ দেশে ফিরে যায়।

পরে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ফেনী নদীতে ভারতের নির্মাণাধীন মৈত্রী সেতুতে পুনরায় বিজিবি-বিএসএফের সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক হয়। এতে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন গুইমারা সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল জি এইচ এম সেলিম হাছান ও বিএসএফের পক্ষে উদয়পুর সেক্টরের ডিআইজি জামিল আহমেদ। প্রায় ৩০ মিনিটের এ বৈঠকও নিষ্ফল হয়।

রামগড়ের স্থানীয় সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন লাভলু বলেন, ঘটনাটি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। মানসিক ভারসাম্যহীন এই নারীর প্রতি সীমান্তে কোনো অংশ হতেই ন্যূনতম মানবিকতা দেখানো হচ্ছে না। তিনি বলেন, বিএসএফ অত্যন্ত নির্মম ও নির্দয়ভাবে মারধর করে ওই নারীকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে। অসহায় ওই নারীর জীবন বাঁচাতে জরুরী উদ্যোগ প্রয়োজন।

রামগড় ৪৩ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. তারিকুল হাকিম সাংবাদিকদের বলেন, বিএসএফই গত বৃহস্পতিবার(২ এপ্রিল) জোর করে ওই নারীকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায়। এখন তারা তা স্বীকার করছে না। বৈঠকগুলো কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বিএসএফ, ভারত-বাংলাদেশ, সীমান্তে
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন