রামগড় হাই স্কুলে নির্মিত খাগড়াছড়ির প্রথম শহীদ মিনারটি রক্ষা করলেন ইউএনও

Ramgarh 25.3 copy
রামগড় প্রতিনিধি :
রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যোগে স্থাপিত খাগড়াছড়ি জেলার প্রথম শহীদ মিনারটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছেন ইউএনও।

স্বাধীনতা দিবসের আগেই শহীদ মিনারটির প্রয়োজনীয় সংস্কারের ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা বাস্তবায়ন করেছেন উপজেলা নির্বাহি অফিসার(ইউএনও) মো. ইকবাল হোসেন। শুক্রবার (২৫ মার্চ) জরাজীর্ণ এ শহীদ মিনারের সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়।

এদিকে খাগড়াছড়ি জেলার প্রথম স্থাপিত এ শহীদ মিনারটি সংস্কারের মাধ্যমে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করায় রামগড়ের মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ উপজেলা নির্বাহি অফিসারের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গগত: উল্লেখ্য, গত ৯ মার্চ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের প্রস্তুতিসভায় শহীদ মিনারটির জরুরি সংস্কারের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহি অফিসার মো. ইকবাল হোসেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের আগেই এটির প্রয়োজনীয় সংস্কার করার ঘোষণা দেন।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ছালেহ আহম্মদ বলেন, রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠেই মুক্তিফৌজের প্রথম প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়। এ স্কুল মাঠ থেকেই অসহযোগ আন্দোলন, প্রতিরোধ যুদ্ধ সব কিছু পরিচালিত হয়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালি প্রভৃতি এলাকা থেকে আসা লক্ষ লক্ষ বাস্তুহারা মানুষ এ স্কুলে স্থাপিত আশ্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের ত্রিপুরায় প্রবেশ করে। এক কথায় রামগড় পতন না হওয়া পর্যন্ত এ হাই স্কুলটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম কেন্দ্র। এ কারণে দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা উদ্যোগ নিয়ে এ স্কুলের প্রবেশদ্বারে পুকুর পাড়ে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধা ছালেহ আহম্মদ বলেন, এটি খাগড়াছড়ি জেলার সর্বপ্রথম স্থাপিত শহীদ মিনার। মরহুম মুক্তিযোদ্ধা মুলকুতুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মরহুম সুলতান আহমেদ, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা দুলাল চন্দ্র দে এবং তিনি নিজে স্থানীয় আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে সাথে নিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেন। স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক বজলুর রহমানের অনুরোধে বিএসসি শিক্ষক এমআর খাঁন শহীদ মিনারের ডিজাইনটি সংগ্রহ করে আনেন। এরপর তাঁরা(মুক্তিযোদ্ধা) স্থানীয় অর্থশালী ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে টাকা সংগ্রহ করেন। প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় হওয়ার পর স্থানীয় রাজমিস্ত্রি মরহুম আব্দুর রউফকে দায়িত্ব দেয়া হয় শহীদ মিনারটির নির্মাণ কাজের। এটি নির্মাণের পর বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস এবং একুশে ফেব্রুয়ারীতে এ শহীদ মিনারেই শহীদদের প্রতি পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের অনুষ্ঠান হত।

কিন্তু ২০০৩ সালে হাই স্কুল সংলগ্নে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পর সেখানে জাতীয় দিবস সমূহে পুষ্পমাল্য অপর্ণ শুরু করার ফলে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে খাগড়াছড়ির প্রথম শহীদ মিনারটি। বছরের পর বছর অনাদরে, অবহেলায় পড়ে থাকায় শহীদ মিনারটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল।

রামগড় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মফিজুর রহমান বলেন, শহীদ মিনারটির প্রয়োজনীয় সংস্কার করে উপজেলা নির্বাহি অফিসার মো. ইকবাল হোসেন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির প্রতি সন্মান দেখিয়েছেন। এ জন্য মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের মানুষ তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।

রামগড় উপজেলা নির্বাহি অফিসার(ইউএনও) মো. ইকবাল হোসেন, বলেন, ‘খাগড়াছড়ি জেলার প্রথম নির্মিত এ শহীদ মিনারটি সংস্কারের মাধ্যমে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পেরে আমি নিজেও আনন্দিত ।’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন