parbattanews

রামগড় হানাদার মুক্ত দিবসের স্মৃতি

আজ ৮ই ডিসেম্বর রামগড় হানাদার মুক্ত দিবস। রামগড় পাক সেনাদের দখলমুক্ত হওয়ার পর আনন্দের বন্যায় ভেসে যায় সাব্রুমও। তরুণরা বিজয়ের আনন্দ উন্মাদনায় মেতে উঠে। শত্রু  মুক্ত হওয়ার পর বিজয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে দলে দলে মানুষ সীমান্তবর্তী ফেনীনদী পার হয়ে সাব্রুম থেকে ছুটে যায় রামগড়ে ।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার রামগড় সীমান্তঘেঁষা মহকুমা সাব্রুমের মানুষের অনুভূতি অবদানের এসব স্মৃতিকথা ভার্সচুয়াল আলাপচারিতায় জানালেন ত্রিপুরার বিশিষ্ট কলামিস্ট ও গবেষক অশোকানন্দ রায়বর্ধন। সাব্রুমের রায়বর্ধন বলেন, ২৫ মার্চের কালো রাতে অপারেশন সার্স লাইট নামে পরিচালিত পাকবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের পর বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে সাব্রুমে আসতে থাকে বাংলাদেশের বাস্তুহারা মানুষ। প্রথম দু সপ্তাহেই ১০-১৫ হাজার শরণার্থী আশ্রয় নেয় এখানে। পরের তিন সপ্তাহে ৩০-৩৫ হাজার।

২ মে শেষ বেলায় পাক বাহিনী রামগড়ের দখল নিয়ে পুলিশ স্টেশন, হাসপাতাল, রামগড় বাজারসহ সীমান্তবর্তী বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নারকীয় ধ্বংসলীলা চালায়। সেদিন রাতের রামগড়ের আগুনের লেলিহান শিখা, মানুষের আর্তচিৎকার আর গেলাবারুদের শব্দে সাব্রুমের মানুষও ঘুমাতে পারেনি।

রামগড় শত্রু মুক্ত  হওয়ার খবরে সাব্রুমের মানুষের অনুভূতির বর্ননা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ৮ ডিসেম্বর বিকেলের দিকে পাকবাহিনী রামগড ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং মুক্তিবাহিনী ও মুক্তিপ্রাপ্ত জনগণ সেদিন রামগড়ে বাংলাদেশ পতাকা উড়িয়ে দেন । সেদিন দুপুর থেকেই সারা সাব্রুমে প্রচন্ড উল্লাসের বাতাবরণ বয়ে যায় । মুহূর্তে স্কুল-অফিস-কাছারি ছুটি হয়ে যায় । বাজি পটকা ফুটতে শুরু করে ।

শরণার্থী শিবির থেকে খুঁজে আনা হয় বাংলাদেশের পতাকা । মাইকে বাজতে থাকে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ এবং ‘’শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রণি’ আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের রেকর্ড । রাজপথে শুরু হয়ে যায় রঙ মাখামাখি । সারা রাস্তায়, নদীর পাড়ে মানুষ গিজগিজ করে । কে শরণার্থী, কে স্থানীয় বোঝার উপায় ছিল না ।

রামগড় মুক্ত হওয়ার বার্তা পেয়ে কাতারে কাতারে মানুষ সব বাধা ঠেলে ফেনীনদীর উপর নির্মিত কাঠের সেতু পেরিয়ে, নদীর উপর দিয়ে হেঁটে ওপারে গিয়ে ওঠেন । একদল উৎসাহী এপার থেকে ঢাক ঢোল বাজাতে বাজাতে ওপারে গিয়ে রামগড়ের আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে তুলেছিলেন । সেদিনের সাব্রুমের তরুণ-কিশোরদের অধিকাংশই সেদিন ফেনী নদী পেরিয়ে রামগড় পৌছেছিলেন ।

৮ ডিসেম্বর বিকেলে রামগড়ে যখন আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা তখন ভারতের পক্ষে তদানীন্তন ব্লক কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট জ্ঞানেন্দ্র নারাযণ চৌধুরী ও উদযপুরের তরুণ সাংবাদিক স্বপন ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন।

Exit mobile version