parbattanews

রামুতে ইটভাটায় যাচ্ছে উর্বর কৃষি জমির মাটি

রামু প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের রামুতে উর্বর কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি (টপ সয়েল) বিক্রির ধুম পড়েছে। প্রতিদিন শত শত মিনি ট্রাকে বিভিন্ন ইটভাটায় মাটি পাচার হচ্ছে। এভাবে মাটি কেটে ইটভাঁটাসহ বিভিন্ন স্থাপনায় সরবরাহ করার কারণে উপজেলার সর্বত্র পরিবেশের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

প্রতিদিন মাটি বহনকারী মিনি ট্রাক (ডাম্পার) এর চলাচলের কারণে প্রধান সড়ক এবং গ্রামীন সড়কগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ধুলো-বালিতে চরম দূর্ভোগের সম্মুখিন হচ্ছে পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

মাটি কাটা অব্যাহত থাকায় কৃষি জমিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফসলী জমির মাটি কাটার কারণে ধীরে ধীরে জমিগুলো উর্বরতা শক্তি হারিয়ে ফেলছে।

ইট ভাটার মালিক ও সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট স্থানীয় প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাদেরকে ম্যানেজ করে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই এসব আবাদি জমির টপ সয়েল (উর্বর মাটি) দিন-মজুর এবং এক্সেভেটর দিয়ে কেঁটে দেদারছে নিয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের পূর্ব নোনাছড়ি গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পূর্ব নোনাছড়ি হয়ে ইলিশিয়া পাড়া পর্যন্ত সড়কটি মাটি বহনকারী ডাম্পার চলাচলের কারণে বিভিন্নস্থানে ধ্বসে গেছে। এমনকি সড়কের উপর বিছানো ইট ধুলো-বালিতে একাকার ও তছনচ হয়ে গেছে।

এসময় সড়কের দুপাশে ফসলী জমিতে কয়েকটি স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছিলো। ওইসব মাটি মিনি ট্রাকযোগে আশপাশের ইটভাটা এবং বিভিন্ন স্থাপনায় সরবরাহ করা হচ্ছিলো। মাটি কাটার ফলে কয়েকটি স্থান পুকুরে পরিনত হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মুফিজুর রহমান জানান, পূর্ব নোনাছড়ি পাহাড়িয়াপাড়া এলাকার মৃত আবদুর রহমানের ছেলে আবদুল কাদের ও মৃত আলী আহমদের ছেলে রমজান আলীর নেতৃত্বে একটি বিশাল সিন্ডিকেট মাসের পর মাস এখানকার ফসলী জমি থেকে মাটি কেটে অন্যত্র সরবরাহ করে আসছে। এদের বিরুদ্ধে তাঁরা কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়াও কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে অভিযোগের অনুলিপি দেয়া হয়েছে।

গ্রামবাসী জানান, মাটি কাটার ফলে এলাকায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমে পানিবন্দি হওয়ার আশঙ্কা করছেন। এছাড়া মাটি বহনকারী ডাম্পার চলাচলের কারণে কয়েকবছর পূর্বে ব্রিক সলিং করা সড়কটি ভেঙ্গে তছনচ হয়ে গেছে। দিনরাত বিরামহীন মাটিবাহী গাড়ি চলাচল ও ধুলো-বালির আস্তরণ পড়ে সড়কটি শিক্ষার্থীসহ গ্রামবাসীর চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের পশ্চিম মেরংলোয়া, বাইপাস, উত্তর ফতেখাঁরকুল, চাকমারকুল ইউনিয়নের কলঘর বাজারের আশপাঁশ, শাহামদের পাড়া, জারাইলতলী, ফুঁয়ার চর, দক্ষিণ চাকমারকুল, তেচ্ছিপুল, মোহাম্মদপুরা, কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের লট উখিয়ার ঘোনা, লামার পাড়া, গনিয়া কাটা, স্কুলের পাহাড় এলাকা, জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের পূর্ব নোনাছড়ি, উত্তর মিঠাছড়ি, চা বাগান, ঘোনার পাড়া, ইলিশিয়া পাড়া ও রশিদনগর ইউনিয়নের মাছুয়া খালী, ধলির ছড়া, মামুন মিয়ার বাজারের আশপাঁশ, রাজারকুল ইউনিয়নের ছাগলিয়াকাটা, কাঁঠালিয়া পাড়া এলাকার বিস্তীর্ণ কৃষি জমিতে মাটি কাটা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বাঁকখালী নদীর দু’তীরেও সমানতালে চলছে মাটিকাটা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এসব এলাকার ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির পাশাপাশি, শীতকালে নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ার সুযোগে নদীর তীর এবং চরের মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে।

মাটি কাটায় নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, এসব মাটি দিয়ে ইটভাটায় ইট তৈরি করা হচ্ছে। জমির মালিকরা প্রতি এক হাজার ঘনফুটে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পাচ্ছেন।

রামু কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এককানি (৪০ শতক) কৃষি জমি চাষাবাদে প্রায় ৩৫ কেজি ইউরিয়া সার দরকার হলেও নির্বিচারে মাটি কাটার ফলে ওই জমিতে দ্বিগুণ সার দিতে হয়। অন্যদিকে জমিতে স্বাভাবিক ফলন উৎপাদন কম হয়। এভাবে মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এসব জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

রামু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জমির মালিকরা মোটা অঙ্কের টাকার লোভে ক্ষতিকর এ কাজ করছেন। তারা বুঝতে পারছে না যে, ভবিষ্যতে এ জমি পরিত্যক্ত হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া জমির হারানো পুষ্টি ফিরে পেতেও ১৫ থেকে ২০ বছর সময় লাগবে। জমির উপরিভাগের চার-ছয় ইঞ্চি মাটিতেই মূলত বেশি পুষ্টি থাকে, যা ফসল উৎপাদনে সহায়ক।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লুৎফুর রহমান জানান, মাটি কাটার জন্য কাউকে অনুমতি দেয়া হয়নি। জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান শুরু হয়েছে। পরিবেশ আইন ও ভূমি নীতিমালা অমান্যকারীদের ছাড় দেয়া হবে না।

Exit mobile version