রামুতে থামছেনা গরু চুরি-ডাকাতি, বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

fec-image

কক্সবাজারের রামুতে প্রতিরাতে ঘটছে গরু চুরি-ডাকাতির ঘটনা। বিগত কয়েকবছর ধরে একাধিক অস্ত্রধারী চোর-ডাকাত চক্র নির্বিঘ্নে গরু চুরি-ডাকাতি করলেও জড়িতরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। গরু চুরি-ডাকাতির কারণে বর্তমানে অনেক গরুর খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি প্রান্তিক জনপদের লোকজনও গরু লালন-পালন করতে পারছে না। যারা গরু লালন-পালন করছে তাদের অনেকেই রাত্রি জেগে গরুর গোয়াল পাহারা দিতে হচ্ছে। এরপরও অস্ত্রধারী গরু চোর-ডাকাত চক্রের অপতৎপরতা বন্ধ হওয়া দূরের কথা উল্টো সাম্প্রতিক সময়ে গরু চুরি-ডাকাতি আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গরু চুরি-ডাকাতি চলাকালে অনেক গরুর মালিককে হত্যা এবং কুপিয়ে-মারধর করে আহত করার ঘটনাও ঘটছে। গরু চুরি-ডাকাতি বন্ধের দাবিতে খামারী এবং প্রান্তিক চাষিদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রবিবার (১৫ জানুয়ারি) বেলা ১২টায় রামু উপজেলা পরিষদ ভবন চত্বরে আয়োজিত এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন।

রামু উপজেলা ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক আকতার কামাল আজাদ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা “উদ্যোগী ও কর্মমুখী হোন” এ স্লোগানকে সামনে রেখে সারাদেশের মতো রামু উপজেলার অনেক প্রতিষ্ঠিত ও প্রান্তিক জনপদের ব্যক্তি এবং গ্রামের কৃষকরা গরু লালন-পালনে এগিয়ে এসেছে। এ কারণে রামু উপজেলায় ডেইরি শিল্পের প্রসার লাভ শুরু করে। দারিদ্রতা দূরীকরণের পাশাপাশি দেশের মাংস ও দুধের চাহিদা পূরণে রামু উপজেলা ডেইরি খামার ও গরু লালন-পালনকারী কৃষক অনন্য অবদান রাখছে। কিন্তু প্রতিরাতে সন্ত্রাসী কায়দায় অস্ত্রধারী ডাকাতদল কর্তৃক গরু চুরি-ডাকাতির ফলে রামু উপজেলায় ডেইরীিশিল্পের নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ব্যক্তি পর্যায়ে গরু লালন-পালন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। যা দেশের কৃষকদের জীবন-জীবিকায় বড় ধরনের সংকট তৈরি করছে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন রামু উপজেলা সভাপতি মাস্টার মোহাম্মদ আলম, রামু উপজেলা ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর আহমদ, সাধারণ সম্পাদক আকতার কামাল আজাদ, সদস্য মোহাম্মদ দিদারুল আলম, জাহাঙ্গীর হোসেন কোম্পানী, প্রান্তিক চাষি শিরিন আকতার ও জয়নাব বেগম প্রমুখ।

সভায় বক্তারা বলেন, গত ১০ জানুয়ারি রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের অফিসেরচর চরপাড়া এলাকায় কৃষক মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ গরু ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওইদিন রাতে সংঘবদ্ধ অস্ত্রধারী ডাকাতদল গৃহকর্তা মোহাম্মদ আলীর ভাতিজা যুবক মীর কাশেমকে নির্মমভাবে হত্যা করে দুটি বড় সাইজের গরু লুট করে নিয়ে যায় থানার সামনের সড়ক দিয়ে। রামু থানা থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরত্বে এ দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ ডাকাতি প্রতিরোধে কোন ভুমিকা পালন করেনি। এমনকি ঘটনার পরও পুলিশের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। যা গরু খামারী ও প্রান্তিক কৃষকদের আরো বেশি হতাশ করেছে।

বক্তারা আরও বলেন, গত ২০ নভেম্বর ভোরে রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মধ্যম মেরংলোয়া গ্রামের মোবাশ্বর আহমদের বাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে তিনটি গরু লুট করে নিয়ে যায়। একই দিন রাতে রামুর চাকমারকুল ইউনিয়নের নূর আহমদের বাড়ি থেকে বড় সাইজের দুইটি গরু নিয়ে যায় সংঘবদ্ধ ডাকাত। এছাড়া ৮ জানুয়ারি রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের সিকদারপাড়া এলাকার নুরুল হকের বাড়িতে অস্ত্রধারী ডাকাতদল হানা দিয়ে ৪টি গরু লুট করে নিয়ে যায়। গরুগুলোর আনুমানিক মূল্য চার লাখ টাকা। রামু উপজেলায় সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক দুর্ধর্ষ গরু চুরি-ডাকাতির ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধিতে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেবল গরু চুরি নয়, সাম্প্রতিক সময়ে রামু উপজেলায় বসত বাড়ি, মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানেও চুরি-ডাকাতি বেড়ে গেছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, রামু উপজেলায় গরু চুরি-ডাকাতিতে স্থানীয়দের পাশাপাশি পাশ্ববর্তী চকরিয়া উপজেলার একাধিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত থাকতে পারে। গরু চুরি-ডাকাতির বিষয়টি মহামারির মতো আকার ধারণ করলেও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কোন ভূমিকা দেখা যায় না। এমনিক রামু থানার দক্ষিণে এক কিলোমিটার দূরত্বে এবং উত্তর দিকে এক কিলোমিটার দূরত্বে দুটি দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা নির্বিঘ্নে সংগঠিত হয় খামার মালিক ও সাধারণ জনমনে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে গরু চুরি-ডাকাতি বন্ধের দাবিতে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মুস্তফার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন ডেইরী ফার্ম মালিক ও প্রান্তিক কৃষকরা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: গরু, মানববন্ধন, রামু
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন