রামুতে মহাসমারোহে শুরু শারদীয় দুর্গাপূজা

ramu puja

রামু প্রতিনিধি:
প্রাচীণ জনপদ কক্সবাজারের রামু উপজেলার ১১ ইউনিয়নের ২৭টি পূজামন্ডপে উৎসবমুখর পরিবেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উদযাপনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। রোববার মহাপঞ্চমীতে দেবীর বোধনের মাধ্যমে সনাতন ধর্মাবল্বীদের শারদীয়া দুর্গাপূজা শুরু হয়।

ইতোমধ্যেই উপজেলার প্রতিটি পূজামন্ডপ সরগরম হয়ে উঠেছে। মন্ডপে মন্ডপে বিশাল তোরণ নির্মাণসহ আলোকসজ্জার কাজও শেষ। শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজার সফল আয়োজনের জন্য উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনসহ সব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেছেন রামু উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ।

রামুতে নির্বিঘ্নে পূজার উৎসব পালনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিচ্ছে। এতে শান্তিপূর্ণভাবেই উদযাপিত হবে দুর্গাপূজা, জানিয়েছেন রামু সার্বজনীন কালী মন্দীর পরিচালনা পরিষদের সভাপতি রতন মল্লিক। তিনি বলেন, রামুতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হবে, এ দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির কোনো স্থান নেই।

পুরোহিত সজল কান্তি ব্রাহ্মণ চৌধুরী জানান, ঘোড়ায় চড়ে মন্ডপে ঝড়-বাদলের সাথে আগমণ ঘটলেও বিজয়া দশমীতে ফসলের মড়ক-জ্বরা সাথে নিয়ে দোলনায় চড়ে চলে যাবেন। রামু সর্বজনীন কেন্দ্রীয় কালী মন্দির পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রতন দেওয়ানজি বলেন, প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা পেলে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও শতভাগ শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা পালন সম্ভব হবে।

রাতে পূজামন্ডপ পাহারা দিতে সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো সমস্যা দেখা দিলে তৎক্ষণিক পুলিশ প্রশাসন ও পূজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করতে প্রতিটি মন্ডপে ফোন নাম্বার দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাতে রামু সর্বজনীন কেন্দ্রীয় কালী মন্দীরের দুর্গাপূজা মন্ডপ পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, মন্দিরের পুরোহিতসহ পূজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দ পূজামন্ডপের শেষ প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

রামু উপজেলায় এবারের দুর্গাপূজা সুন্দর ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হবে এবং আইন শৃংখলা পরিস্থিতিও সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকবে বলে আশা ব্যক্ত করেন, রামু সার্বজনীন কালী মন্দির পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দন দাশগুপ্ত।

রামু রামকুট তীর্থধাম পরিচালনা পরিষদ সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ সিকদার বলেন, সবার সহযোগিতায় এ বছরও নির্বিঘ্নে সনাতন ধর্মালম্বীরা বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করতে পারবে। রামুতে বহু বছর আগে থেকে সনাতনীদের দুর্গাপূজা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বৃহৎ উৎসবকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো অপশক্তি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটাতে না পারে সে জন্য তিনি সবাইকে সজাগ থাকার আহবান জানান।

কক্সবাজার জেলায় সর্বপ্রথম রামু সার্বজনীন কালী মন্দিরে দুর্গাপূজা উদযাপন শুরু করা হয় জানিয়ে তিনি আরো বলেন, রামুতে দুর্গাপূজা সম্প্রীতির মিলনমেলার অনন্য এক প্লাটফর্ম। পূজার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি হয়। বিজয়া দশমীতে সুদৃঢ় করে সে বন্ধন।

রামু সৎসঙ্গ আশ্রমের সভাপতি সুশান্ত পাল বাচ্চু জানান, আমাদের বাঙালির পূজোর আলাদা ঐতিহ্য আছে। বাঙালীয়ানা এ উৎসবে সব সম্প্রদায়ের মানুষ উৎসাহ ও উদ্বীপনায় অংশ নেয়। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আমাদের ধর্মীয় চেনতা ও আমাদের ঐতিহ্য সম্প্রীতির মাধ্যমে আমাদেরই রক্ষা করতে হবে।তিনি আরো জানান, এবারের রামুতে ২৭টি পূজা মন্ডপের মধ্যে ১৮টি প্রতিমা পূজা ও ৯টি ঘট পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আবদুল আজিজ বলেন, রামু উপজেলার প্রায় পূজামন্ডপ থানার কাছাকাছি জায়গায় অনুষ্ঠিত হবে। পূজার আয়োজন থেকে শেষ সময় পর্যন্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেয়া হয়েছে। তার পরও ইতোমধ্যে প্রতিটি মন্ডপে এলাকার জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ইমাম, পেশাজীবীসহ সবার সমন্বয়ে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।

রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা পালনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মন্ডপে শান্তি-শৃঙ্খলা কমিটি গঠনের পাশাপাশি নিয়োগ করা হবে আনসার ও পুলিশ।

তাছাড়া পূজা মন্ডপের কাছাকাছি সড়কে টহলরত অবস্থায় থাকেব স্ট্রাইকিং ফোর্স। সম্প্রীতির অঞ্চল রামুতে শতভাগ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। কেউ অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলেও তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন