parbattanews

রামুতে লাল বুড়ির চড়া সুদ বাণিজ্যে নিঃস্ব অসংখ্য দরিদ্র পরিবার

ছবি: অভিযুক্ত শাহিনা আকতার প্রকাশ লাল বুড়ি

কক্সবাজারের রামুতে এক নারীর রমরমা সুদ ব্যবসার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে এলাকার অসংখ্য দরিদ্র পরিবার। সুদের টাকা পরিশোধ করার পরও চেক ও স্ট্যাম্প ফেরত না দিয়ে ফের হুমকি-ধামকি দিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এভাবে মাত্রাহীন ও চড়াসুদের খপ্পরে পড়ে বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে এক প্রবাসীর স্ত্রী।

আবার নিজের প্রয়োজনের কথা বলে অনেক নারী-পুরুষের নামে বিভিন্ন ব্যাংক-সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে সেই টাকা আর পরিশোধ করছে না অভিযুক্ত শাহেনা আকতার প্রকাশ লাল বুড়ি নামের ওই নারী। এ কারণে বিপাকে পড়েছে অনেক পরিবার। এ নিয়ে একাধিক ভুক্তভোগী রামু থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান।

অভিযুক্ত শাহিনা আকতার প্রকাশ লাল বুড়ি রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মনিরঝিল দরগাহপাড়া এলাকার আবছার মিয়ার স্ত্রী।

কাউয়ারখোপ এবং পার্শ্ববর্তী রাজারকুল ইউনিয়নের দরিদ্র জনসাধারণের মাঝে দীর্ঘদিন সুদ বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও ব্যাংক থেকে স্থানীয়দের নামে ঋণ নিয়ে নিজে সেই অর্থ ব্যবসায়ীক কাজে ব্যবহার করছেন। পরে এসব ঋণ পরিশাধ না করায় নিরীহ লোকজন ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে চরম হয়রানির শিকার হয়ে আসছেন।

একই এলাকার মালয়েশিয়া প্রবাসী নুরুল আমিনের স্ত্রী লায়লা বেগম জানিয়েছেন, তার ছেলের চিকিৎসার জন্য তিনি নিরুপায় হয়ে আবছার মিয়ার স্ত্রী শাহিনা আকতার লাল বুড়ির কাছ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা নেন। এরমধ্যে তিনি ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। এরপরও টাকা দাবি করে আসছেন শাহিনা আকতার। এমনকি আরো টাকা পাওয়ার অজুহাতে সম্প্রতি লায়লা বেগমের কাছ থেকে খালি স্ট্যাম্প ও চেকে স্বাক্ষর লিখে নেন। এখন আরো টাকা না দেয়া লাল বুড়ি তাকে প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি ও মামলার ভয় দেখাচ্ছে।

সিরাজের স্ত্রী ছেনুআরা বেগম জানান, আড়াই বছর আগে শাহিনা আকতার প্রকাশ লাল বুড়ির কাছ থেকে ১ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। সেই থেকে প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা করে দিয়ে আসছেন। এ পর্যন্ত ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা শোধ করেছেন। এরপরও সম্প্রতি তার কাছ থেকে জোরপূর্বক একটি অলিখিত চেক নিয়েছে। এখন আরো টাকা না দিলে মামলার ভয় দেখাচ্ছেন শাহিনা আকতার।

গোল হোছনের স্ত্রী দিলোয়ারা বেগম জানান, ছেলের জন্য গাড়ি কেনার অজুহাতে শাহিনা আকতার লাল বুড়ি তার নামে মমতা নামের একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে কয়েকমাস পূর্বে ১ লাখ টাকা ঋণ নেয়। এখন শাহিনা আকতার সেই ঋণের কিস্তি পরিশোধ করছেনা। এ কারণে ওই সংস্থা থেকে তাকে টাকা দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে।

দিলোয়ারার অভিযোগ ‘আমার নামে টাকা নিয়ে সেই টাকা শাহিনা আকতার লাল বুড়ি নিজের ছেলের জন্য গাড়ি কিনে দিয়েছে। এ টাকা আমি ভোগ করিনি। ঋণের কিস্তি কেন আমি পরিশোধ করবো। এ কথা বললে শাহিনা আকতার উল্টো আমাকে হুমকি-ধমকি ও বকাঝকা করছে। আর তাকে এভাবে ঋণ নিয়ে দেয়ায় বর্তমানে আমাকে স্বামীর কাছে প্রতিনিয়ত অপমানিত হতে হচ্ছে। আমি প্রশাসনের কাছে লাল বুড়ির এ অপকর্মের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’ এ নিয়ে তিনি রামু থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানান।

রাজারকুল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পাহাড়পাড়া এলাকার আবদুল হালিমের স্ত্রী পারভীন আকতার জানান, ‘১ বছর আগে মমতা নামক সংস্থা থেকে আমাকে ২০ টাকা ঋণ নিয়ে দেয় লাল বুড়ি। আমি যথাসময়ে সেই টাকা পরিশোধ করেছিলাম। কয়েকমাস পূর্বে শাহিনা আকতার তার ছেলেকে টমটম গাড়ি কিনে দেয়ার অজুহাতে পারভীন আকতারের নামে মমতা নামের একটি সংস্থা থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেয়। পরে ১ মাস কিস্তি দিলেও এখন কোন কিস্তি শোধ করছে না। এখন ওই সংস্থা থেকে টাকা পরিশোধের জন্য তাকে চাপ দেয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ঋণ নিয়ে দেয়ায় পারভীন আকতার তালাক দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে স্বামী। শাহীনা আকতার লাল বুড়িকে ঋণ নিয়ে দিয়ে এখন তিনি চরম বিপাকে পড়েছেন। তিনিও এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করে রামু থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন বলে জানান।

এলাকাবাসী জানিয়েছে, শাহীনা আকতার দীর্ঘদিন রমরমা সুদ বাণিজ্য চালিয়ে এলাকার নিরীহ ও হতদরিদ্র লোকজনকে জিম্মি করে রেখেছে। টাকা পরিশোধ করার পরও অনেকে চেক ও স্ট্যাম্প ফেরত না দিয়ে আরও টাকা দাবি করে যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক থেকে স্থানীয়দের নামে নিজে টাকা নিয়ে এখন আর পরিশোধ করছে না। ফলে অনেক সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শাহীনা আকতার প্রকাশ লাল বুড়ি জানান, তার বিরুদ্ধে করা এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।

তিনি জানান, নিজের ৪টি গরু বিক্রি করে লায়লা বেগমকে কয়েক দফায় সাড়ে নয় লাখ টাকা ধার দিয়েছিলেন। লায়লা বেগম এখন তার টাকা পরিশোধ না করে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এছাড়া যাদের নামে বিভিন্ন সংস্থা থেকে টাকা নেয়ার কথা বলা হয়েছে তাও সত্য নয়। এসব ব্যক্তিরা নিজেদের প্রয়োজনে নিজেরা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করছে না। এখন সবাই এক হয়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন।

Exit mobile version