parbattanews

রামুতে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মাদ্রাসার শিশু শিক্ষার্থীদের বলাৎকারের অভিযোগ

রামু প্রতিনিধি:

রামুতে একটি কওমী মাদ্রাসায় শিক্ষক কর্তৃক একাধিক ছাত্রকে যৌন হয়রানির (বলাৎকার) অভিযোগ পাওয়া গেছে। বলাৎকারের শিকার অনেক শিক্ষার্থী মাদ্রাসা ছেড়ে চলে গেছে। আরও একাধিক অভিভাবক বিষয়টি নিয়ে স্বোচ্চার হয়েছে। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রাম এলাকার তাহসিনুল কোরআন মাদ্রাসায়। এ ঘটনায় ওই এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা অভিযুক্ত শিক্ষকদের অভিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।

বর্বরতার শিকার ছাত্রদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ ঘটনায় মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হাফেজ হারুন অর রশিদ ওরফে অন্ধ হুজুর এবং সহকারী শিক্ষক মৌলানা কামাল জড়িত রয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ হারুন অর রশিদ ওরফে অন্ধ হুজুর (৪০) ওই এলাকার মৃত মোজাফ্ফর আহমদের ছেলে এবং মৌলানা কামাল (১৮) মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে।

ছাত্ররা জানান, হাফেজ হারুন অর রশিদের একটি চোখ সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন। অপর একটি চোখে সমস্যা থাকলেও দেখতে পান। একারণে হারুন অর রশিদকে তারা ডাকেন অন্ধ হুজুর হিসেবে।

হারুন অর রশিদের কাছে বলাৎকারের শিকার পেকুয়া উপজেলারর মিয়াজীপাড়ার এক শিশু শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থী জানিয়েছে, গত ২ সপ্তাহে অন্ধ হুজুর তাকে ৩ বার বলাৎকার করেছে।

বান্দরবানের আলীকদম চিনারীবাজার এলাকার এক শিশু শিক্ষার্থী জানিয়েছে সে ৫ মাস ধরে এ মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। সম্প্রতি (৯/১০ দিন আগে) রাত ১টায় তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় ডেকে মাদ্রাসার ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে জোরপূর্বক বলাৎকার করে।

জোয়ারিয়ানালা গুচ্ছগ্রাম এলাকার ১২বছর বয়সী শিশু শিক্ষার্থী জানিয়েছে, ১ সপ্তাহের মধ্যে তাকে দুইবার বলাৎকার করেছে অন্ধ হুজুর। সর্বশেষ ২/৩দিন আগে বলাৎকার করার পর তার পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্তপাতও হয়েছে। বিষয়টি ওই ছাত্র তার অভিভাবকদেরও জানিয়েছে।

আলীকদমের আরও এক শিশু শিক্ষার্থী জানিয়েছে, গত ২২ এপ্রিল গভীর রাতে অন্ধ হুজুর তাকে নিজের কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে হুজুর শিশুটিকে চুমু খেতে বলে। এসবের এক পর্যায়ে শিশুটিকে জোরপূর্বক বলাৎকার করা হয়।

শিক্ষকের যৌন লালসার শিকার এসব শিশুদের অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা এসব অভিযোগ সত্য বলে জানান। তারা এ বিষয়ে আইনী ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান।

গুচ্ছগ্রাম এলাকার বাসিন্দা, মো. ইলিয়াছ, আসাদুজ্জামান, মনজুর আলম ও ৭০ বছর বয়সী মতিউর রহমান জানিয়েছেন, মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হারুন রশিদ প্রকাশ অন্ধ হুজুরের বিরুদ্ধে এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। মাদ্রাসার অপর শিক্ষক মৌলানা কামালও এসবের সাথে জড়িত চান। এসব অপকর্মের কারণে মাদ্রাসার পাশাপাশি পুরো এলাকার মান-সম্মান ভুলুণ্ঠিত হচ্ছে। তাই তারা পুলিশ প্রশাসনের কাছে বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।

রামু থানার ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, এ ঘটনায় কেউ থানায় অভিযোগ দেয়নি। এরপরও বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসাইন জানিয়েছেন, বিষয়টি এখন পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি নিজেও বিষয়টি শুনেছেন। এটি খুবই দুঃখজনক। সুষ্ঠু তদন্ত করে যেন প্রশাসন জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।

জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আমিনুর রশিদ রুবেল বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, হয়রানির শিকার অনেক ছাত্র ও তাদের অভিভাবক আমাকে বিষয়টি অবহিত করেছে। এ ব্যাপারে তিনি তাদের আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

এসব ঘটনায় অভিযুক্ত জায়ারিয়ানালা গুচ্ছগ্রাম তাহসিনুল কোরআন মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হাফেজ হারুন অর রশিদ ওরফে অন্ধ হুজুর বলাৎকারের সব ঘটনা অস্বীকার করেছেন। তিনি এসব এলাকাবাসীর ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন। এলাকাবাসী কেন আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এলাকায় তিনি কোন অশ্লীল নাচগান করার সুযোগ দেন না। কেউ করার চেষ্টা করলে প্রশাসন দিয়ে বাধা দেন। তাই কিছু কূচক্রী মহল তাকে এবং প্রতিষ্ঠানকে জড়িয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি আরও জানান, ২০১৩ সালে তিনি এ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এ মাদ্রাসা হেফজ বিভাগে ৩৮ জন ছাত্র রয়েছে।

তবে এ ঘটনায় অভিযুক্ত অপর শিক্ষক মৌলানা কামালকে মাদ্রাসায় গিয়ে পাওয়া যায়নি। ফলে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

Exit mobile version