parbattanews

রামুতে ৩ শিক্ষকের ইন্তেকাল, শিক্ষাঙ্গনে শোকের ছায়া

রামু প্রতিনিধি:

রামুতে ৩ শিক্ষকের মৃত্যুতে শিক্ষক সমাজে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এরা হলেন, রামুর ফাক্রিকাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইসহাক, রাজারকুল মাছুমিয়া ইসলামিয়া ছুন্নিয়া আলিম মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা মো. ছালামত উল্লাহ ও রামুর মেরংলোয়া গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার উত্তর দেয়াং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাকেরা বেগম।

রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ফাক্রিকাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইসহাক (৪৮) বৃহস্পতিবার ভোর ৩ টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আগেরদিন হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে সেখানে ভর্তি করা হয়। মো. ইসহাক ফাক্রিকাটা এলাকার মরহুম আবুল কাশেমের দ্বিতীয় ছেলে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২সন্তান রেখে গেছেন। মো. ইসহাক পার্শ্ববর্তী গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড় জামছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাশেমের ছোট ভাই।

বৃহস্পতিবার আছরের নামাজের পর ফাক্রিকাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মরহুমের জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।

উল্লেখ্য মো. ইসহাক ১৯৯৬ সালে কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের মৌলভীর কাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তিনি কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ফাক্রিকাটা, শুকমনিয়া এবং গর্জনিয়া ইউনিয়নের বোমাংখিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০০৯ সালে পদোন্নতি পেয়ে ঈদগড় উত্তর বড়বিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সেখান থেকে কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের গর্জনিয়া মড়েল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ ১০ বছর শিক্ষকতা করার পর নিজ গ্রাম ফাক্রিকাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। সব মিলিয়ে তিনি ২১ বছর শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।

রামু উপজেলার রাজারকুল মাছুমিয়া ইসলামিয়া ছুন্নিয়া আলিম মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা মো. ছালামত উল্লাহ (৬৫) বুধবার রাত আটটায় রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসেরচরস্থ বাড়িতে ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুর দিনও তিনি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন। সন্ধ্যায় আকস্মিকভাবে অসুস্থবোধ করেন এবং অল্পক্ষণেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৫ ছেলে রেখে যান। প্রবীন শিক্ষক মাওলানা মো. ছালামত উল্লাহর মত্যুর খবরে শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।

বৃহষ্পতিবার বাদ জোহর রামু কেন্দ্রিয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মরহুমের নামাজে জানা অনুষ্ঠিত হয়। পরে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

চট্টগ্রামে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন রামুর গৃহবধূ স্কুল শিক্ষক শাকেরা বেগম। বুধবার সকাল সাড়ে আটটায় চট্টগ্রাম শহরের কোতোয়ালী থানার নতুন ব্রিজ এলাকায় ট্রাকচাপায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। শাকেরা বেগম পটিয়া উপজেলার উত্তর দেয়াং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক এবং রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের বাসিন্দা চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রিয় চট্টগ্রাম পত্রিকার বিশেষ প্রতিবেদক গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রতিদিনের মতো শাকেরা বেগম নগরীর বাসা থেকে বের হয়ে পটিয়ায় উত্তর দেয়াং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন। নতুন ব্রিজ এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় দ্রুতগামী ট্রাক তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান তিনি।

বুধবার সন্ধ্যা সাতটায় শাকেরা বেগমের মৃতদেহ রামুর মেরংলোয়া গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এসময় স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এছাড়াও প্রতিবেশী, এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক সহ সর্বস্তুরের মানুষ সেখানে ছুটে যান।

শাকেরা বেগম ২ কন্যা সন্তানের জননী। এরমধ্যে বড় মেয়ে নাহিয়ান তাফান্নুম চট্টগ্রাম সরকারী মহিলা কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের এবং দ্বিতীয় মেয়ে জেবা ফারিহা বাংলাদেশ মহিলা সমিতি স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। বুধবার বাদে এশা রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের পশ্চিম মেরংলোংয়া এলাকায় মরহুমার নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

উল্লেখ্য ইতিপূর্বে শাকেরা বেগম কক্সবাজার সদর উপজেলার মুক্তারকুল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছিলেন। পরে স্বামীর কর্মস্থল হওয়ায় তিনিও চট্টগ্রামে বদলী হন।

রামুর ফাক্রিকাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইসহাক, রাজারকুল মাছুমিয়া ইসলামিয়া ছুন্নিয়া আলিম মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা মো. ছালামত উল্লাহ ও রামুর মেরংলোয়া গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী শিক্ষক শাকেরা বেগমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল।

এক বিবৃতিতে সাংসদ কমল বলেন, মানুষ গড়ার কারিগর এ তিন শিক্ষকের মৃত্যুতে যে শুণ্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা কখনো পূরণ হবে না।  তিনি নিবেদিতপ্রাণ তিন শিক্ষকের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন এবং শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

এদিকে ২০ ঘন্টার ব্যবধানে রামুর তিন শিক্ষকের মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পুরো উপজেলার শিক্ষাঙ্গনে বিরাজ করছে শোকাবহ পরিবেশ। রামু উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন, রামু প্রেসক্লাব, রামু রিপোর্টার্স ইউনিটি ও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষক মো. ইসহাক, মাওলানা ছালামত উল্লাহ ও শাকেরা বেগমের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং শোকাহত পরিবারের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

Exit mobile version