parbattanews

রামুর অদম্য মেধাবি রিদুয়ানের দারিদ্রতা জয়

রামু প্রতিনিধি:

এমনিতেই অভাবের সংসার। ২০০৮ সালে ৬ বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর পর পরিবারে নেমে আসে আরও অন্ধকার। পিতৃহীন রিদুয়ান পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অর্জন করে জিপিএ-৫। জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এবং বৃত্তি পাওয়ার পরও আর্থিক দৈন্যতায় বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যালয়ে যাওয়া। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রানান্ত উৎসাহ, প্রচেষ্টা আর বড় ভাইদের সহযোগিতায় ফের শুরু হয় পড়ালেখা। পিতার শূণ্যতা আর দারিদ্রতা জয় করে সবার প্রচেষ্টা সার্থক করেছে রামুর অদম্য মেধাবি রিদুয়ান উদ্দিন।

রামুর কাউয়ারখোপ হাকিম রকিমা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র রিদুয়ান উদ্দিন গতকাল (৬মে) প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পেয়েছে জিপিএ-৫। ছেলের অসাধারণ সাফল্যে আত্মহারা বৃদ্ধ মা ফাতেমা বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা। খুশির ঝলক ছিলো বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং প্রতিবেশীদের মাঝেও।

অদম্য মেধাবি রিদুয়ান উদ্দিন রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের পূর্বপাড়ার মৃত মো. ইয়াছিন ও গৃহিনী ফাতেমা বেগমের কনিষ্ট ছেলে। রিদুয়ানের বড় ভাই মৌলানা মোহাম্মদ মহি উদ্দিন কাউয়ারখোপ খেনচরঘোনা নূরানী তালিমুল কোরআন মাদ্রাসায় স্বল্প বেতনে শিক্ষকতা করেন। বড় আরও তিন ভাই পেশায় কৃষক ও শ্রমিক। বিয়ের পর থেকে বড় ৩ ভাই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অন্যত্র পৃথকভাবে বসবাস করে আসছেন।

বড় ভাই মৌলানা মোহাম্মদ মহি উদ্দিন জানান, রিদুয়ান খুবই মেধাবি। তাকে শিক্ষা অর্জনের সব সহায়তা পারিবারিকভাবে দেয়া সম্ভব হয়নি। এরপরও তার মেধা শক্তি আর বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে এ কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন সম্ভব হয়েছে।

জিপিএ-৫ অর্জনকারি রিদুয়ান উদ্দিন জানান, শিক্ষক আর বড় ভাইদের সহযোগিতা না পেলে তার পড়ালেখা অনেক আগেই বন্ধ হয়ে যেত। শিক্ষকরা তাকে যেভাবে সহযোগিতা দিয়েছেন তা বলার মত নয়। এজন্য রিদুয়ান শিক্ষকবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। ভবিষ্যতে নিজের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে সংশয় জানিয়ে রিদুয়ান বলেন, ভবিষ্যতে সে চিকিৎসক হতে ইচ্ছুক। এ ইচ্ছা পূরণে সে সৃষ্টিকর্তার দোয়া এবং সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

কাউয়ারখোপ হাকিম রকিমা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কিশোর বড়ুয়া জানিয়েছেন, রিদুয়ান ছাত্র হিসেবে খুবই মেধাবি। দরিদ্র পরিবারের হওয়ায় বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে বিভিন্নভাবে সহায়তা দেয়া হয়েছিলো। এ সাফল্যে তাই শিক্ষকরাও বেশি আনন্দিত। তার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ভবিষ্যতেও এ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। তিনি সমাজের বিত্তবানদেরও রিদুয়ানের মত মেধাবি শিক্ষার্থীর পড়ালেখা চালিয়ে যেতে সহযোগিতা প্রদানের আহ্বান জানান।

কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ জানিয়েছেন, রিদুয়ান উদ্দিন দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এটা সবার জন্য গর্বের এবং আনন্দের। তার পড়ালেখা চালিয়ে যেতে তিনি সব প্রকার সহযোগিতা দিয়ে যাবেন। এমনকি কলেজে ভর্তি করা এবং বইসহ যাবতীয় শিক্ষা উপকরণও তিনি নিজ উদ্যোগে করে দেবেন।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, রিদুয়ান উদ্দিন পড়ালেখার সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে নিজের এবং সমাজের মুখ উজ্জ্বল করতে সক্ষম হবে। তাই তার মত মেধাবি ছাত্রকে এগিয়ে নেয়া সবার দায়িত্ব। তিনি ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদের মহৎ উদ্যোগকেও স্বাগত জানিয়েছেন।

Exit mobile version