রামুর ঈদগড় ও নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী এলাকায় অপহরণ ও ডাকাতি বৃদ্ধি

apohoron-500x330

উপজেলা প্রতিনিধি, রামু :

কক্সবাজারের রামুর ঈদগড়-ঈদগাঁও-বাইশারী সড়কে এবং দুর্গম পাহাড়ি বসতিতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও অপহরণের মত ঘটনা রেকর্ড সংখ্যক বেড়েছে। ওই সব এলাকা বর্তমানে অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এই অঞ্চরের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ভয় ও ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা ও বসবাস করে আসছে।

আজ শনিবার অজ্ঞাত স্থান থেকে ০১৮৫০৪০০০৭৪ মোবাইল থেকে স্থানীয় চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ ভুট্টোকে প্রাণনাশ ও তার ছেলে মেয়েকে অপহরণের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। এব্যাপারে প্রশাসনকে তিনি অবগত করেছেন। তিনি এলাকার ডাকাতি, অপহরণসহ চুরি ও ছিনতাই প্রতিরোধে  প্রত্যেক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মেম্বারদেরকে নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগীতায় পাহারা বসিয়েছেন।

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশী জনবল কম থাকার কারণে ডাকাতি, অপহরণসহ চুরি ও ছিনতাই বন্ধ করা যাচ্ছে না ।   

রামু থানার ওসি অপ্পেলা রাজু নাহা জানান, অপরাধীদের গ্রেফতারে প্রশাসনের সাড়াশি অভিযান অব্যাহত আছে। ইতিমধ্যে অনেক অপরাধীকে আটক করা হয়েছে।

এদিকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, চলতি মাসে ১০ ডিসেম্বর অপহরণের দুইদিন পর চার লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে অপহরণকারীদের হাত থেকে মুক্তি পেলেন বনি আমিন (৩৫) নামের এক ব্যবসায়ী। ১৭ ডিসেম্বর ঈদগড় বড়ইচর গ্রাম থেকে সোলাইমানের পুত্র আবু বক্কর ছিদ্দিককে অপহরণ করে ৫০হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দেয়।

১৯ ডিসেম্বর ঈদগড়-ঈদগাঁও সড়কের পানেরছড়া ঢালায় সশস্ত্র ডাকাত দল যাত্রীবাহি কয়েকটি সিএনজি গাড়ি ও ভাড়ায় চালিত মোটার সাইকেল আরোহীদের সর্বস্ব লুট করে এবং একই দিন একই স্থান হতে ঈদগড় বড়বিল গ্রামের ছিদ্দিক আহমদের পুত্র মোরশেদ কামাল মোটর সাইকেল যোগে ঈদগাঁও থেকে ঈদগড় আসার পথে সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে ১লক্ষ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়।

২১ ডিসেম্বর ঈদগড় বড়ইচর গোয়াইল্যাকাটা এলাকা হতে ঈদগড় বড়বিল গ্রামের আবদুল আজিজের পুত্র নুরুল হককে সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে। ২২ সেপ্টেম্বর সৌদি প্রবাসী নুরুল হকের বসত বাড়ীতে ডাকাতি সংগঠিত হয়। এসময় ডাকাতেরা ৭ ভরি স্বর্ণালংকার সহ প্রায় ৫ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে।

সর্বশেষ  ২৬ ডিসেম্বর সকাল ৮টার দিকে ঈদগাঁও থেকে ঈদগড় মুখী যাত্রীবাহী ১টি হিল লাইন নামক গাড়ীতে  ডাকাতি সংগঠিত করা হয়। এছাড়াও ঈদগড়ের বৌঘাটা সেগুনবাগিচা এলাকার সোলাইমানের পুত্র আবু বকর ছিদ্দিক অপহরণের পর মুক্তিপণ দিয়ে উদ্ধার করা হয়।

ঈদগাঁও-ঈদগড়-বাইশারী সড়কে ৬টি যানবাহন ডাকাতি সংগঠিত হয়। এসময় যাত্রী ও গাড়ীর চালকদের মারধর করে অর্ধ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে। ডাকাত দল প্রবাসী ছৈয়দ হোসেনসহ পার্শ্ববর্তী শাহ্ আলম, সিরাজ মিয়া ও নুরুল আলমের বাড়ীতে ঘরের দরজা ভেঙ্গে গৃহ কর্তাদের জিম্মি করে পাচঁ ভরি স্বর্ণ, নগদ ৫০ হাজার টাকা, ১০টি মোবাইল সেটসহ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে ।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায় , প্রতিনিয়ত রাস্তায় ডাকাতির ফলে এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ীসহ সাধারণ জনগণের জানমালসহ জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। ওই সড়কে পুলিশের পাহারা থাকলেও বন্ধ হচ্ছে না ডাকাতি। পুলিশ একটি নির্ধারিত স্থানে দাঁড়িয়ে থেকে পাহারা দেয়ার ফলে ডাকাত দল পুলিশের পাহারার স্থান থেকে মাত্র দুইশ গজ দূরে অবস্থান নিয়ে ডাকাতি করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়।

তারা আরো জানান, রোহিঙ্গাদের ব্যাপকহারে বন জঙ্গলে আশ্রয়স্থল হিসেবে বেচে নিয়ে ডাকাতিসহ নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে এবং পুলিশ ডাকাতি, অপহরণসহ মাদকদ্রব্য অস্ত্র চোরাচালান প্রতিরোধে সচেতনাতা সৃষ্টির লক্ষে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন ব্যক্তিদের নিয়ে মাঝে মাঝে মববিনিময় সভা করলেও পরিস্থিতি তেমন উন্নতি হচ্ছে না। তারা ঈদগড় এলাকায় যৌথ বাহিনীর সাড়াশী অভিযান পরিচালনা করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানান।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বাইশারী এলাকার রাবার বাগান ধ্বংশকারী আব্দু সবুর ওরফে বার্মাইয়া সবুর (২৮) ও মোহাম্মদ হোছনের পুত্র এহছানুল হক (২০) , মোঃ শফিক (২৪), রুট ডাকাত দলের সর্দার ৫টি ডাকাতি ও চাঁদাবাজি মামলার পলাতক আসামী নুরুল হক, ডাকাত আবু তাহের (৩২), ডাকাতি শেষে পালিয়ে যাওয়ার সময় ফিরোজ আহাম্মদ (২৮), মোঃ দিদার (২৮) ছৈয়দ আলম (২৬), রামু পানেরছড়া ঢালায় থেকে সশস্ত্র ডাকাত দল মোটর সাইকলারোহী ২ ব্যবসায়ী ব্যবসায়ী বনি আমিন ও আকবর আহম্মদ অপহরণ করে যায়। মুক্তিপণের জন্য এসে জনতার হাতে অপহরণকারী চক্রের ১ সদস্য আটক হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন