রামুর এসিড নিক্ষেপ ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল নিখিল বড়ুয়া ধরাছোঁয়ার বাইরে

fec-image

রামুতে দুই ভাইকে এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল নিখিল বড়ুয়াকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অপরদিকে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়ে ২৫ দিন পরও চমেক হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় দিনাতিপাত করছে টিপু বড়ুয়া। গত ২৫ অক্টোবর রাতে টিপু বড়ুয়া তার চাচাতো ভাই দিপক বড়ুয়াকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। ফেরার পথে চৌমুহনী স্টেশনে নিখিল বড়ুয়া ও অজ্ঞাত আরও ৩-৪ জন লোক তাদের লক্ষ্য করে অ্যাসিড নিক্ষেপ করে।

এসিড সন্ত্রাসের শিকার টিপু বড়ুয়া ও দীপক বড়ুয়ার স্বজনরা জানান, নিখিল বড়ুয়া বর্তমানে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং তাদের মামলা প্রত্যাহারের জন্য নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। নিখিল বড়ুয়া গ্রেফতার না হওয়ায় হতাশাও প্রকাশ করেন তারা। এসিড হামলায় মূল অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল নিখিল বড়ুয়া রামু উপজেলার হাজারীকুল গ্রামের মৃত প্রদীপ বড়ুয়ার ছেলে। তিনি বর্তমানে সিআইডি চট্টগ্রামের বিশেষ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত বলে জানা গেছে।

২৮ অক্টোবর পুলিশ কনস্টেবল নিখিল বড়ুয়াকে অভিযুক্ত করে রামু থানায় মামলা করেন অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার টিপু বড়ুয়ার মা প্রকৃতা বড়ুয়া। ২০০২ সালের অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনের ৫ (খ)/৭ ধারায় দায়েরকৃত এ মামলায় কনস্টেবল নিখিল বড়ুয়াকে এজাহারভুক্ত এবং অজ্ঞাত আরও ৩ থেকে ৪ জনকে আসামি করা হয়।

গত ৩ নভেম্বর এ মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে রিপন বড়ুয়া ধক্কা (২৮) নামের এক যুবককে আটক করা হয়। রিপন বড়ুয়া ধক্কা রামুর রাজারকুল ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের দুলাল বড়ুয়া রতন প্রকাশ মিন্টু বড়ুয়ার ছেলে।

রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আনোয়ারুল হোসাইন জানান, অভিযুক্ত নিখিল বড়ুয়া বর্তমানে পলাতক রয়েছে। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে। তাছাড়া তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছে।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা রামু থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আমীর হোসেন জানান, মামলাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত চলছে। ইতিপূর্বে টিপু বড়ুয়া ও দিপক বড়ুয়ার উপর প্রথম দফা ক্ষুর দিয়ে হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি রিপন বড়ুয়াকে আটক করা হয়েছে। রিপন বড়ুয়া এসিড হামলার সাথেও সম্পৃক্ত। বিজ্ঞ আদালত এসিড নিক্ষেপের মামলায় রিপন বড়ুয়াকে আটক দেখিয়েছে। এছাড়া এ ঘটনার প্রধান আসামি নিখিলকে আটকের চেষ্টা চলছে এবং নিখিলের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। সেখান থেকে দিকনির্দেশনা পেলে আরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভুক্তভোগী টিপু বড়ুয়া রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের দ্বীপ শ্রীকুল গ্রামের নিরধন বড়ুয়ার ছেলে ও দীপক বড়ুয়া একই গ্রামের সুবধন বড়ুয়ার ছেলে। আর অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য নিখিল বড়ুয়া অ্যাসিড হামলার শিকার টিপু বড়ুয়ার ভগ্নিপতি। তিনি রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের হাজারীকুল গ্রামের মৃত সীতানাত বড়ুয়ার ছেলে। সিআইডি সদস্য নিখিল বড়ুয়াকে সম্প্রতি কুমিল্লায় বদলি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয় এবং চারদিকে নিন্দার ঝড় ওঠে। ২৯ অক্টোবর রামু চৌমুহনী স্টেশনে এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং পুলিশ সদস্য নিখিল বড়ুয়াসহ জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্টিত হয়।

রামুর যুবলীগ নেতা পলক বড়ুয়া আপ্পু জানান, এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় ২৫দিন পার হলে এখনো পর্যন্ত মূল হোতা নিখিল বড়ুয়াকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। দুই দুইবার টিপু ও দিপক বড়ুয়ার উপর হামলা হলেও এখনো প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেফতার না করা লজ্জাজনক। তিনি পুলিশ সদস্য নিখিল বড়ুয়াকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান।

এসিড সন্ত্রাসের শিকার ভুক্তভোগী টিপু বড়ুয়া মুঠোফোনে জানান, মামলা করার পর থেকে নিখিল বড়ুয়া আমার পরিবারকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। মামলা প্রত্যাহার না করলে ভবিষ্যতে আমাদের হত্যা করারও হুমকি দিচ্ছে। এ কারণে আমার পরিবার-পরিজন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

টিপু বড়ুয়া আরও জানান, নিখিল তার ছোট বোনের জামাই। তার বোনকে বিয়ে করার কয়েক বছর পর ২০১৯ সালে আরেকটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে তাকে বিয়ে করে ফেলে। বিয়ের পর তার বোনকে বাদি বানিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হলে, পরে ওই মেয়েকে ডিভোর্স দেয় নিখিল। কিন্তু এর মধ্যে সে আমার ভাই, ভাইপো, চাচাসহ পরিবারের অনেককে জড়িয়ে মিথ্যা মামলা করে। এ অবস্থায় আমার বোনকে ম্যানেজ করে তার বিরুদ্ধে করা মামলাটি আপোষ করে ফেলে। এরপর থেকে নিখিল আমাকে হত্যার জন্য নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে। এরই জেরে এক মাসের মধ্যে দুইবার হামলা চালায়। সর্বশেষ আমরা দুই ভাইকে এসিড নিক্ষেপ করে।

রামু উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক জিৎময় বড়ুয়া বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে পুলিশের কনস্টেবল নিখিল বড়ুয়া এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এর আগে ছুরিকাঘাতের ঘটনার নেপথ্যেও আছে নিখিল। অভিযুক্ত নিখিল বড়ুয়া পুলিশ সদস্য হয়ে এসিড সন্ত্রাসের মত অপরাধ সংগঠিত করেছেন। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

ফতেখাঁকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক ভুট্টো বলেন, অপরাধী পুলিশ সদস্য হউক বা অন্য কেউ হউক, অপরাধীরা দেশ ও সমাজের শত্রু। তাদের আইনের আওতায় আনতেই হবে। তিনি বলেন, রামুতে এসিড সন্ত্রাসের মত ঘটনা কোন দিন ঘটেনি। এটি শান্ত রামুকে কলঙ্কিত করেছে।

কনস্টেবল নিখিল বড়ুয়ার বিরুদ্ধে আরও একাধিক প্রতারণা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ করেন টিপু বড়ুয়ার পরিবার। টিপু বড়ুয়ার চাচা বিমল বড়ুয়া জানান, কনস্টেবল হয়েও এএসআই পরিচয়ে আইডি কার্ড নিয়ে চাঁদাবাজি, আসল পিতা রাজারকুল গ্রামের সীতানাথ বড়ুয়া হলেও পিতার নাম বদলে প্রদীপ বড়ুয়া বলে ভুয়া পরিচয়ে পুলিশের চাকরি নেওয়া, অপ্রাপ্ত বয়স্ক এক মেয়েকে বিয়েসহ একাধিক অভিযোগ থাকলেও নিলিখ বড়ুয়া এখনো বেপরোয়া হয়ে নানান হুমকি ধমকি দিচ্ছেন।

এসিড আক্রান্তদের পাশে বণিক সমিতি। বর্বরোচিত এসিড সন্ত্রাসের শিকার টিপু বড়ুয়া ও দীপক বড়ুয়া রামু চৌমুহনী বণিখ সমবায় সমিতি লি. এর সদস্য। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সমিতির সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল আলম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ খোরশেদ আলমসহ সদস্যবৃন্দ। এছাড়া সমিতির পক্ষ থেকে এসিড আক্রান্তদের পরিবারকে অর্থ সহায়তাও প্রদান করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন