রামুর ১২ বিহার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

আবদুল্লাহ নয়ন, কক্সবাজার:

কক্সবাজারের রামুতে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ধ্বংস হওয়া ১০টি বৌদ্ধ বিহার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টার যোগে রামু রাবার বাগান সংলগ্ন হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন। সেখান থেকে গাড়ী যোগে তিনি রামু উত্তর মিঠাছড়িস্থ বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী) বীর বাহাদুর এমপি ও ভাবনা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ করুনা শ্রী ভিক্ষু। তাদের সাথে ছিলেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া ও উর্দ্ধতন সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ।

প্রধানমন্ত্রীর সাথে এ সময় ভাবনা কেন্দ্রে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, শিল্প মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, বন ও পরিবেশমন্ত্র ড. হাসান মাহমুদ, আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ড্যান ম্যাজিনা, ভারতের রাষ্ট্রদূত পংকজ শরণ, রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত আলেকসান্দর নিকোলোয়েভ, নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস এডমিরাল জহিরুদ্দীন আহমদ। ভাবনা কেন্দ্রে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০০ ফুট দীর্ঘ মূর্তি ও ভাবনা কেন্দ্র ঘুরে দেখেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে বিহার নির্মাণের একটি ভিডিও চিত্র দেখান সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এরপরে প্রধানমন্ত্রী সেখানে স্থাপিত ভাবনা কেন্দ্রসহ ১০টি বৌদ্ধ বিহারের ফলক উন্মোচন করেন। উদ্বোধন হওয়া অপর বিহারসমুহ হল রামু উপজেলার লালচিং বিহার, সাদা চিং বিহার, আর্য্যবংশ বৌদ্ধ বিহার, অপর্ণাচরণ বৌদ্ধ বিহার, উচাই সেন বিহার, তেজবন বৌদ্ধ বিহার, বন বিহার, অজান্তা বৌদ্ধ বিহার ও বিবেকারাম বৌদ্ধ বিহার।

দুপুর একটার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাবনা কেন্দ্র থেকে মৈত্রী বিহারে যান। মৈত্রী বিহার উদ্বোধন শেষে সেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী সেনাসদস্যের উদ্দেশ্যে বলেন, আন্তরিকতার সাথে কাজ করার কারণে স্বল্প সময়ের মধ্যে এসব বিহারের কাজ সমাপ্ত করা সম্ভব হয়েছে। এ জন্য তিনি সেনা সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দেশ ও জাতির কল্যাণে তাদের ভূমিকা রয়েছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী যান সীমা বিহারে। সীমা বিহার উদ্বোধন শেষে সীমা বিহার সম্মেলন কক্ষে বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতাদের সাথে সুধী সমাবেশে মিলিত হন তিনি। ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতা সংঘরাজ ধর্ম সেন মহাথের, রামু সীমা বিহারের অধ্যক্ষ সত্যপ্রিয় মহাথের। এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বৌদ্ধ বিহারের স্থায়ী নিরাপত্তা বিধানের জন্য বিশেষ প্রশাসনের সেল বসানোর দাবী জানান, একই সঙ্গে ২৯ সেপ্টেম্বর ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাদের পাশে থাকার ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করতে তার সরকার সকল উ্দ্যোগ নেবেন। তিনি বলেন, এক সময় স্ব-পরিবারের রামু ভ্রমণে এসে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন। এখন নতুন নকশা ও শৈলীতে বিহার নিমার্ণ হয়েছে। এতে পর্যটক বিমুগ্ধ হয়ে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হবে। তিনি কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের বিকাশের আরো উন্নয়নমুখি কাজ করার ঘোষণা দেন। এদিকে নবনির্মিত বিহার উদ্বোধন ও প্রধানমন্ত্রীর আগমনে আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মাঝে দেখা দিয়েছে প্রাণ চাঞ্চল্য। তারা চাইছেন আবারো নতুন করে নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে এগিয়ে যেতে।

স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা জানান, মহাজোট সরকার অল্প সময়ের মধ্যে বিহার ও ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িঘর গুলো সংস্কার করে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এরপর দুপুর ২ টার দিকে হেলিকপ্টার যোগে ইনানী রেস্ট হাউসে যান। সেখানে বিশ্রাম শেষে দুপুর আড়াই টায় হেলিকপ্টার যোগে উখিয়ায় যান। উখিয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ ছাড়াও সমাবেশস্থলে কক্সবাজার জেলার অর্ধ শতাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। বিকাল ৫ টায় হেলিকপ্টার যোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে উখিয়া ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন