parbattanews

রিকসার প্যাডেল ঘুরাতে ঘুরাতে ক্লান্ত পানছড়ির মুজিবর

পানছড়ির বয়ো:বৃদ্ধ রিকসা চালক মুজিবরের বয়স প্রায় পঁয়ষট্টি ছুই ছুই। সারাদিন রিকসার প্যাডেল ঘুরিয়ে সরকারি হাসপাতালের প্যারাসিটেমল সেবন করেই শরীরের ব্যাথা দুর করে নিজেকে সচল রাখার চেষ্টা করে সব সময়।

তারপরও দীর্ঘ পয়ত্রিশ বছর ধরে প্যাডেল ঘুরাতে ঘুরাতে সে এখন ক্লান্ত। দশ বারো বছর আগে প্রচণ্ড পেটের ব্যাথার কারণে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে রেশন কার্ডটি বন্ধক দিলেও আজো উদ্ধার পারেনি। অভারের সংসারের চুলো চাঙ্গা রাখতে নিত্য সকালে প্যাডেল চাপতে চাপতে পানছড়ি বাজারের মুক্তিযোদ্ধা স্কয়ারে এসে রিকসার সিটে দু’পা তোলেই যাত্রীর অপেক্ষায় প্রহর গুনে।

মুজিবর যে বয়সের ভারে ক্লান্ত সেটা দেখলেই অনুমান করা যায় বলে অনেকের ধারণা। তাঁর সাথে কথা বলে জানা যায়, সে জিয়ানগর গ্রামের তাইজ উদ্দিন ও মোমেনা খাতুনের সন্তান। প্লাস্টিক ও বেড়ায় নির্মিত নড়বড়ে ঘরে তাদের মানবেতর বসবাস। তাছাড়া বেহাল দশার ঘরটি কালবৈশাখির চোবলে যে কোন মুহুর্তে উড়ে যেতে পারে। ছেলে জহিরুল পেটের ব্যাথায় কোন কাজ করতে পারেনা। ছেলের ঔষধের খরচ পর্যন্ত প্যাডেল মেরেই যোগাড় করতে হয়।

করোনার মহামারীতে লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিত্য মাস্ক ব্যবহার করেই জীবিকার সন্ধানে বের হয় সাত সকালে। কিন্তু বর্তমানে সারাদিন প্যাডেল ঘুরিয়ে সর্বোচ্চ ষাট থেকে সত্তর টাকা রোজগার হয়। মাঝে মাঝে খালি হাতে ঘরে ফিরতে হয়।

হতাশাগ্রস্ত মুজিবর জানায়, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর কিভাবে পেতে হয় তা তার জানা নাই। তাই কোন আবেদন-নিবেদন করা হয় নাই। তবে বন্ধকী রেশনকার্ডটি কোন রকমে ছুটাতে পারলেও অন্তত দু’মুঠো ভাত ঠিকভাবে খেতে পারতাম। প্রশাসন বা বিভিন্ন বাহিনী একটু নজর দিলে শেষ বয়সে অন্তত প্যাডেল ঘুরানো থেকে মুক্তি পেতাম।

স্থানীয় ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আবুল হাশেম হাসু মেম্বার জানান, মুজিবর একবারেই অসহায়। রিকসা চালিয়েই সংসার চালায়। প্রয়োজনে উপোস থাকবে কিন্তু কারো কাছে হাত পাতার অভ্যাস নেই। তার ঘরটিও নড়বড়ে। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর পাওয়ার দাবি রাখে সে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছেন তিনি।

Exit mobile version