parbattanews

রুমায় ক্যাশিয়ারের থেকে চাবি নিয়ে ব্যাংকে ডাকাতি

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় ভাঙচুর ও লুটের আগে মসজিদে ম্যানেজানকে খুঁজতে যায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। এসময় মসজিদে তারাবিহ নামাজরত মুসল্লিতে অস্ত্রের মুখে ঘিরে রাখে সন্ত্রাসীরা। পরে সেখান থেকে ব্যাংকের শাখা ম্যানেজারকে শনাক্ত করে তাকে তুলে নিয়ে যায়।

একইসাথে ব্যাংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের অস্ত্র আর গুলি লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে।

প্রত্যক্ষদশীরা জানান, ২৫-৩০ জন দুর্বৃত্ত ম্যানেজারকে খুঁজতে মসজিদে আধুনিক অস্ত্রসহ গিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে রুমা উপজেলা জামে মসজিদের ইমাম মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘তিন রাকাত নামাজ শেষ না হতেই দেখলাম আশপাশ ও সামনে অস্ত্র নিয়ে অনেকে দাঁড়িয়ে আছে। তারা মসজিদে ঢুকে সবাইকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে অস্ত্রধারীরা ব্যাংকের ম্যানেজারের কথা জিজ্ঞেস করে। প্রথমে তাকে চিহ্নিত করতে না পারলেও পরে তাকে চিহ্নিত করে তুলে নিয়ে যায়।’

তিনি আরো জানান, অস্ত্রসহ ২০ জনের মতো দুর্বৃত্ত মসজিদে প্রবেশ করেছিল। এসময় অস্ত্রধারীরা মুসল্লিদের কোনো কথা বলার সুযোগ দেননি। তবে অনেক মুসল্লি অভিযোগ করেছেন, তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছেন সন্ত্রাসীরা।

গত ২ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে হামলা ও ১৪টি অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া ব্যাংকের ম্যানেজার মো. নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

তবে ব্যাংকের টাকা লুট হয়নি বলে জানা গেছে।

বুধবার (৩ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ খালেদ জানান, ওই ব্যাংকের শাখা থেকে কোনো টাকা লুট হয়নি। ওই ব্যাংকের ভল্টে থাকা সব টাকা অক্ষত অস্থায় রয়েছে।

এদিকে সোনালী ব্যাংকের ওই শাখায় ভাঙচুর চালানোর আগে ব্যাংকের ক্যাশিয়ার উথোয়চিংয়ের কাছ থেকে চাবি নেওয়া হয়। এ সময় তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে ব্যাংকের ক্যাশিয়ার উথোয়চিং জানান, ‘ডরমেটোরিতে যাওয়ার পথে তারা অস্ত্রের মুখে তাকে ঘিরে ধরে। এরপর মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। পরে প্যান্টের পকেট থেকে ব্যাংকের চাবি এবং কাছে থাকা টাকা নিয়ে যায় চলে যায়। পরে ব্যাংকে গিয়ে ভাঙচুর অবস্থায় দেখতে তিনি।

এদিকে এ ঘটনায় বান্দরবানে ব্যাংকের লেনদেন স্থগিতসহ আরও দুই জেলায় সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন।

রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) দিদারুল আলমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে ১০টি অস্ত্র ও ৩৮০ রাউন্ড গুলি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের অদূরে থাকা আনসার ব্যারেক থেকে চারটি অস্ত্র ও ৩৫টি গুলি ছিনিয়ে দুর্বৃত্তরা।

এদিকে বান্দরবানের ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় কুকি চীনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

বুধবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।

এ ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই বুধবার দুপুরে থানচি উপজেলা শহরের সোনালী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।

বুধবার (৩ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আনসার ও সেনাবাহিনীর সদৃশ্য পোশাক ও হেলমেট পরিহিত অবস্থা তিনটি চাঁদের গাড়ি করে একই সময় সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের প্রবেশ করে সন্ত্রাসীরা। ১০ মিনিটের মধ্যে অস্ত্রধারীরা সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের ৩০ জন গ্রাহকের নিকট থেকে প্রায় ১৬-১৮ লাখ এবং ১৫টি স্মাট মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

খবর পেয়ে পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসার আগেই অস্ত্রধারীরা পালিয়ে যায়। তবে দুই ব্যাংকের ভল্ট খোলা সম্ভব না হওয়া এখনো অক্ষত আছে বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুটি গাড়িতে করে মোট ২৫-৩০ জনের একটি সশস্ত্র দল এ ডাকাতিতে অংশ নেয়।

থানচি থানার ওসি জসিম উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

সোনালী ব্যাংকের ক্যাশিয়ার ওমর ফারুক বলেন, ডাকতরা ব্যাংক থেকে টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। আমাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে অফিসিয়ালি ঠিক কত টাকা লুট হয়েছে তা তদন্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না।

ডাকাতির শিকার হওয়া সোনালী ব্যাংকের গ্রাহক ভুক্তভোগী আরমান বলেন, আমি ভেতরে ছিলাম, ডাকাতরা মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে মোবাইল ফোনসহ আমার সঙ্গে থাকা সব টাকা নিয়ে গেছে।

থানচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মামুন ঘটনা স্বীকার করে জানান, দু’টি ব্যাংকে গ্রাহকদের লেন দেনের সময় মোট ১৭ লাখ ৪৫ হাজার লুট করে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা।

এর আগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রুমায় সোনালী ব্যাংক থেকে অস্ত্র ও টাকা লুট করে একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা।

এ ঘটনা জেরে থানচি বাজারে ব্যবসায়ীরা ভয়ে সকল বাণিজ্যিক কেন্দ্রসহ দোকানপাট, হোটেল-মোটেল বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করেছে।

Exit mobile version