parbattanews

রুমায় অগ্রবংশ অনাথালয়ের ছাত্রাবাসটি নানা সমস্যায় জর্জড়িত

Ruma pic-1 copy

রুমা প্রতিনিধি:

উপজেলার একমাত্র অনাথ আশ্রম ‘অগ্রবংশ অনাথালয়ের ছাত্রাবাসটি এখন নানান সমস্যায় জর্জড়িত। জুলাইয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহে টানা ক‘দিন ধরে প্রবল বর্ষণের পর থাকা খাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা আরো বেড়ে যায়। ভবন দু‘টি ধসে পড়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখেন অনাথালয়ের বালকদের থাকা ভবনে উপর আড়া-আড়ি করে একটি গাছ পড়ে আছে। ভবন ওয়ালে প্রায় চার ফুট পর্যন্ত মাটি। প্রবল বর্ষণে উত্তর দিক থেকে পাহাড় ধসে ভবনের ওয়ালে এসব মাটি জমেছে। এখান থেকে পানি চুয়ে ভবনে ঢুকছে। একটি কক্ষে ভেতরে ফ্লোর ভিজা। আর বৃষ্টির কারণে পাহাড় থেকে মাটি দলা-দলায় ভবনের দিকে সরে আসাটা লক্ষ্য করা গেছে।

অনাথালয়ের মূল বৌদ্ধ বিহারের দক্ষিণ দিকে ছাত্রীদের থাকা ঘর। প্রায় ৪০ ফুট লম্বা। ছাদের ঢেউটিন দিয়ে গাছের খুঁটি বসিয়ে তৈরি করা হয়েছে এ ঘরটি। এটি খাঁড়া পাহাড় সীমানায় তৈরি হয়েছে। নীচে তাকালে যে কারোর চোখ শিউরে উঠবে নি:সন্দেহে। ঠিক একইভাবে দাঁড়িয়ে আছে রান্না ও স্টাডি ঘর।

উ. নাইন্দিয়া ভিক্ষু পাহাড় ধসের দিকে হাত দেখিয়ে বলেন ভবনের ওয়ালে যে মাটি জমেছে, এটি পুরোপুরি সরিয়ে ফেলতে অনেক শ্রমের প্রয়োজন। আর শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে গেলেও কমপক্ষে দুই লক্ষ টাকা দরকার। এটাকা পাবো কোথায়? মাটি সরিয়ে দিলে, তাও স্থায়ি সমাধান হবে না। ভবনের দিকে মাটি ধস বন্ধ করতে হলে রিটার্নিং ওয়াল করা প্রয়োজন। খাঁড়া পাহাড় হওয়ায় স্টাডি হল ও ছাত্রীদের ঘর এই দু‘টি ঘর রক্ষা করতে রিটার্নিং ওয়ালের বিকল্প নেই।

অনাথালয়ের বর্তমানে প্রায় ৯০ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে উল্লেখ করে নাইন্দিয়া ভিক্ষু বলেন ছেলেদের জন্য এভবনটি পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর ২০১১ সালে উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। তবে এখনো ছাত্রীদের জন্য কোনো পাকা ভবন নেই। এনিয়ে ইতোমধ্যে পার্বত্য মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে আবেদন করা হয়েছে। নাইন্দিয়া ভিক্ষু আরো বলেন অনাথালয়ের রাস্তায় একটি ছোট ঝিরি থাকায় আসা যাওয়ার দর্শনার্থীদের কষ্ট পোহাতে হয়। এঝিরিতে একটি বক্স কালভার্ট করা গেলে বিহার দর্শনার্থীর পাশাপাশি অনাথালয়ের অবস্থানরত শিক্ষার্থীদেরও স্কুল যাতায়তে সুবিধা হবে।

আশ্রম প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ উ. নাইন্দিয়া বলেন, অগ্রবংশ অনাথালয়টি বিগত ২০০৫ সালে প্রয়াত ভিক্ষু ভদন্ত উ. ইন্ডিগা মহাথের ওরফে অগ্রবংশ ভিক্ষু তার নিজের উদ্যোগে এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। তখন তিনি (নাইন্দিয়া) ৯ বছরের শিশু শ্রমন হিসেবে ছিলেন এ প্রতিষ্ঠানে। ২০০৬ সালে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অধীনে নিবন্ধিত হয়। তারপর থেকে সীমাব্ধতার মধ্যে বিভিন্ন পাড়ার অনাথ ও দরিদ্র ছেলে মেয়েদের এ অনাথালয়ে রেখে পাড়া লেখার সুযোগ দিয়ে আসছে। অনাথালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে উ. নাইন্দিয়া ভিক্ষু বলেন এ আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বিহারে অধ্যক্ষ ভদন্ত উন্দিগ্ ামহাথেরো এক কঠিন রোগে ২০১০ সালে ১১ মে মহাপ্রয়ান লাভ করেন।

ছাত্রীনিবাসের দিকে হাত দেখিয়ে বলে ঘরটি পুরানো হয়ে গেছে। টিনের ছাদ থেকে বৃষ্টি পড়ে। খুব অসুবিধা বোধ করি। বাঁশ ও গাছের তৈরি এ ঘরটি। তাছাড়া বৃষ্টি পড়লে আমাদের ঘরটি কখন যে, পাহাড় ধসে চলে যায়। মাঝে-মধ্যে খুব ভয় করি। এসব কথা বলার সময় পাশে বিহারের উপাধ্যক্ষ উ: পইনিয়া ভিক্ষুও ছিলেন।

এ ব্যাপারে বিহারের অধ্যক্ষ উ: নাইন্দিয়া ভিক্ষু বলেন মেয়ে শিক্ষার্থীদের সবদিক দিয়ে নিরাপত্তার বিবেচনায় ছাত্রীদের থাকার জন্য একটি পাকা ভবন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। ছাত্রীনিবাস নির্মাণের জন্য বিভিন্ন অফিসে ঘুরাঘুরি করেছি অনেক। এ ব্যাপারে শুধু আশ্বাস পেয়েছি, ছাত্রীনিবাসটি করিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি এখনো। তাছাড়া কোনো সংস্থা থেকে সহযোগিতা বা বরাদ্ধ না পাওয়ায় ছাত্রাবাসের প্রায় ৯০ জন শিক্ষার্থীদের দু‘বেলা খাওয়া নিয়েও এখন খুব দুশ্চিন্তায় ভোগছেন বলে জানিয়েছেন নাইন্দিয়া ভিক্ষু। বিষয়টি পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

Exit mobile version