parbattanews

রুমায় বম ও মারমাদের সংঘাত নিরসনে সুশীল সমাজের আহ্বান

সম্প্রতি বান্দরবানের রুমায় বম ও মারমাদের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান জানিয়েছে সুশীল সমাজের নেতারা।

শনিবার (১ বিকালে) ছাইপো পাড়া এলাকায় বৌদ্ধ ভিক্ষু ও মারমা সম্প্রদায়ের সুশীল নেতৃবৃন্দ এক সভায় এ আহবান জানান।

সভায় রুমা সদর ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীগের সভাপতি শৈমং মারমা ওরফে শৈবং বলেন, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রিজুক পাড়া এক নিরীহ ব্যক্তিকে গুলি করার প্রতিবাদে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। বিষয়টি বম সুশীল সমাজের সাথে উভয়পক্ষ বসে অনাকাঙ্খিত ঘটনার বিষয়টি নিরসনের আলোচনা প্রক্রিয়া চলছে। কাজেই এসময়ে সবাই সংযত মনোভাব নিয়ে ধৈর্য্য ধারণ করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি আরো বলেন, সংঘাত ও মারামারি কোনো সম্প্রদায়ের ভাল ফল বয়ে আনবে না।

এসময় আরো বক্তব্য রক্তব্য দেন উ নাইন্দিয়া মহাথের ও শিক্ষক ঞোহ্রামং মারমা, শৈহ্রাপ্রু মারমা ও সভা পরিচালনা করেন দেব বৌদ্ধ বিহারে বিহারাধ্যক্ষ উ চাইন্দাছারা মহাথের।

এতে উপস্থিত ছিলেন রুমা সাঙ্গু কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুইপ্রুচিং মারমা, মারমা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়াশনের সভাপতি উথোয়াইচিং মারমা, পলি মৌজা হেডম্যান চিংসাঅং মারমা, কোলাদী মৌজা হেডম্যান সুইচিংথুই মারমা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নুম্রাউ মারমা, যুব নেতা অংচওয়াং মারমা, সাবেক মেম্বার উচহ্লাসহ বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ এবং মারমা সম্প্রদায়ের সুশীল সমাজের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

এতে সভাপতিত্ব করেন পাইন্দু হেডম্যান পাড়া বৌদ্ধ বিহারাধ্যক্ষ উ গুন্ডালা মহাথরো।

তিনি বলেন, মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন সবাই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। এ ধর্মে একে-অপরের সাথে মারামারি ও সংঘাতের কোনো সুযোগ নেই।

বুদ্ধ ধর্মে মূলনীতির “অহিংসা পরম ধর্ম” এ কথা উল্লেখ করে গুন্দালা ভান্তে বলেন, মন্যুষ কর্মে সবচেয়ে গুরুত্বের বিষয় হচ্ছে – ধৈর্য ধারণ ও সংযমি। তাই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মতো সংঘাত থেকে বিরত থাকতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

প্রসঙ্গত; ১৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে রুমা সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের রিজুক-কোলাদী পাড়া বাসিন্দা ক্যসিংমং মারমা নামে এক নিরীহ ব্যক্তিকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা।

পাড়াবাসীর অভিযোগ করে, ওই সময় পাড়ার মধ্যে প্রায় ২০০ রাউন্ড ফাঁকাগুলি করে পাড়ার প্রায় ৩০ পরিবারে তাণ্ডব চালায়- বম পার্টি খ্যাত বিচ্ছিন্নতাবাদী কেএনএফ। পরে পাড়াবাসী গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে উদ্ধার করে প্রথমে রুমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন “রুমা সচেতন নাগরিক সমাজ”- এই ব্যানারে ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে রুমা বাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সমাবেশের এক পর্যায়ে উচ্ছৃঙ্খল কিছু যুবক উপজলা ভাইস চেয়ারম্যান থাংখামলিয়ান এর বাসায় হামলা ও বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাচুরের ঘটনা ঘটে।

এসময় বিক্ষোভকারীদের আঘাতে জাইঅন পাড়াপ্রধান জৌসাং লুসাই কারবারী আহত হয়। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

এদিকে রিজুক পাড়ার নিরীহ ব্যক্তিকে গুলি করে আহত করার ঘটনা নিয়ে কুকি-চিন ন্যাশনার ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর সশস্ত্র শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) এর প্যাডে স্বাক্ষর বিহীন ক্যাপ্টেন ফ্লেমিং নামে এক বিজ্ঞপ্তিতে বন্ধুক যুদ্ধে জেএসএসের এক সদস্য গুলিবিদ্ধ হবার কথা দাবি করে।

অন্যদিকে কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিরীহ পাড়াবাসীকে গুলি করে আহত করার ঘটনাটি দিবালোকের মত পরিস্কার উল্লেখ করে জনসংহতি সমিতির প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রুমার ঘটনায় জনসংহতি সমিতিকে জড়িত করে বম পার্টি খ্যাত তথাকথিত কেএনএফ-কেএনএ এর বক্তব্যের জন্য প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে জনসংহতি সমিতি।

Exit mobile version