parbattanews

‘রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি জ্বালালে কি পরিচয়পত্র থাকবে?’

 

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশ সরকার বলেছে, রোহিঙ্গা সমস্যার উৎপত্তি মিয়ানমারে, ফলে এর সমাধানের দায়িত্বও দেশটিকেই নিতে হবে।

রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে রাজধানী ঢাকায় ইউরোপ এবং আরব দেশসমূহের রাষ্ট্রদূতদের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।

মানবিকতার স্বার্থে এখন বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও মিয়ানমারের একজন মন্ত্রী “যে রোহিঙ্গা মুসলিমরা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে তাদের সবাইকে দেশে ফিরে আসতে দেয়া হবে না” বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাকে অগ্রহণযোগ্য বলেও মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।

এদিকে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা রবিবার তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর তা সামাল দিতে হিমিসিম খাচ্ছে ত্রাণ সংস্থাগুলো।

অন্য দিকে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের একত্রে রাখার জন্য উখিয়ার বালুখালীতে নির্মাণ করা হচ্ছে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র।

রাষ্ট্রদূতদের সাথে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে মি আলী পরিষ্কার জানিয়ে দেন যেহেতু রোহিঙ্গা সমস্যার উৎপত্তি মিয়ানমারে – ফলে এর সমাধানের দায়িত্বও তাদেরই, বাংলাদেশের নয়।

তিনি আরও বলেন, “মিয়ানমারের একজন মন্ত্রী ও সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মন্তব্য করেছেন রোহিঙ্গাদের প্রমাণপত্র থাকলে তবেই একমাত্র তাদের ফেরানো হবে। কিন্তু তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিলে কীভাবে প্রমাণপত্র থাকবে?”

“আর প্রমাণ তো আছে এমনিতেই। এই রোহিঙ্গারা যে মিয়ানমারেরই লোক তা তো সবারই জানা”, বলেন মি আলী।

এর আগে রাষ্ট্রদূতদের সাথে বৈঠকেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, হাজার বছর ধরে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক, এবং এখন তাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার যে অস্বীকার করছে তা গ্রহণযোগ্য নয়।

দেশটির ওপর চাপ প্রয়োগের ব্যপারে এসব দেশ সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। এছাড়া ইউরোপ এবং আরব দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতেরা রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এর আগে মিয়ানমারের পুনর্বাসন বিষয়ক মন্ত্রী ইন মিয়াট আয় বিবিসিকে বলেছেন, যেসব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে তাদের সবাইকে নিজের দেশে ফিরে আসতে দেয়া হবে না।

তিনি জানান, যে রোহিঙ্গারা প্রমাণ করতে পারবে যে তারা মিয়ানমারে বাস করতো, এবং মিয়ানমারের নাগরিক – শুধু তারাই ফিরে যেতে পারবে।

এদিকে, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গার স্রোত রবিবারেও অব্যহত রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হিসেব অনুযায়ী, এই সংখ্যা এদিন তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

আর অল্প সময়ে আসা এই বিপুল রোহিঙ্গার আশ্রয়, খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তার ব্যবস্থা করতে হিমসিম খাচ্ছে ত্রান সংস্থাগুলো।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব মজহারুল হক বলছেন, পরিস্থিতির বিচারে ত্রাণ সংস্থাগুলোর প্রস্তুতি অপ্রতুল।

তিনি জানাচ্ছেন, “নতুন করে যে তিন লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা এসেছেন, আমরা তাদের মধ্যে দশ হাজারের মতো পরিবারকে টার্গেট করে তাদের কাছে ত্রাণ পৌঁছনোর চেষ্টা করছি। তবে যেহেতু আগে থেকেই আমরা দেশের ৩২টি জেলায় বন্যাপীড়িতদের মধ্যে কাজ করছিলাম, তাই এখন রোহিঙ্গাদের জন্য কতটুকু কী করতে পারব তা নির্ভর করবে কতটুকু সম্পদ ও রসদ জোগাড় হয় তার ওপর।”

ওদিকে, কক্সবাজার ও বান্দরবানের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের পর রোহিঙ্গারা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে বলে জানাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। এখন তাদের এক জায়গায় রাখতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেছেন, উখিয়ার বালুখালীতে দু লাখ রোহিঙ্গার জন্যেএকটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।

তার কথায়, “এই মানুষজন রাস্তার আশেপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে আছেন। তাদের এক জায়গায় নিয়ে এসে সাময়িকভাবে রাখার জন্যই আমরা এই আশ্রয়কেন্দ্র বানানোর পরিকল্পনা নিয়েছি।”

এদিকে কক্সবাজারে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আলাদা সেল করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে আগামিকাল থেকে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন শুরুরও ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

সূত্র: বিবিসি

Exit mobile version