এসিএফ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ,

রোহিঙ্গাদের বরাদ্দকৃত চাল খোলা বাজারে বিক্রি

fec-image

রোহিঙ্গাদের বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাৎ করে খোলা বাজারে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে কথিত রোহিঙ্গা দরদি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।

টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়া ও লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নামে বেনামে রোহিঙ্গাদের কার্ড ও ভূয়া মাস্টার রোল তৈরি করে চাল, ডাল ও তেল আত্মসাৎ করছে এসিএফ (এ্যাকশন এগেইনস্ট হাঙ্গার) এর কতিপয় কর্মকর্তারা।

এনিয়ে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। কেবল বেসরকারি সংস্থা এসিএফ নয়, বিভিন্ন এনজিও সংস্থা ও কর্মকর্তা কর্মচারীগণ নানা অনিয়ম দূর্নীতি ও অপরাধে নিমজ্জিত খবরা খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও তেমন কোনো তদারকি হচ্ছেনা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮ সালের মার্চ মাস থেকে জেনারেল ফুড ডিস্ট্রিবিউশনের আওতায় নয়াপাড়া ক্যাম্প ২৬ ও লেদা ক্যাম্প ২৪ এলাকায় পৃথক দুটি বিতরণ কেন্দ্র থেকে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর (ডব্লিউএফপি) আওতায় রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয় আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এসিএফকে। এর আওতায় ৬ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পরিবারকে নিয়মিত চাল-ডাল-তৈল বিতরণ করে আসছিল সংস্থাটি।

অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সময় সংস্থার অসাধু কর্মকর্তারা মিলেমিশে রোহিঙ্গাদের নামে বেনামে ভূয়া কার্ড তৈরি করে ভূয়া মাস্টার রোলে ভূয়া টিপসই বানিয়ে নানা কৌশল অবলম্বন করে লাখ লাখ টাকার চাল, ডালসহ ত্রাণ সামগ্রী আত্মসাত করে খোলাবাজারে বিক্রি করে আসছিলেন।

এভাবে তারা প্রতিমাসে হাতিয়ে নিচ্ছিলেন লাখ লাখ টাকা। আর এতে জড়িত রয়েছে নয়াপাড়া বিতরণ কেন্দ্রের রাশেদুল কবির, মো. রাফিউল, ইউছুপ, রোহিঙ্গা মাঝি হাশিম, লেদা বিতরণ কেন্দ্রের মিজান, হারুনসহ একটি চক্র। তারা কখনো রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে ত্রাণ সামগ্রী উত্তোলন করে আবার কখনো সরাসরি বিতরণ কেন্দ্র হতে মিনি ট্রাকে করে এসব সামগ্রী আত্মসাত করে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে দেন।

এভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ চক্রটি ত্রাণ সামগ্রী আত্মসাত করে আসলেও গত ২৩ জুলাই ত্রাণের চাল বিতরণ কেন্দ্র থেকে মিনি ট্রাক বোঝাই করে চাল সরানোর সময় স্থানীয়দের নজরে আসে। উক্ত মিনি ট্রাকে করে বেশ কয়েক দফায় চাল গুলো সরানো হয় বলে জানান তারা।

স্থানীয় একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২৩ জুলাই একদিনেই প্রতিটি ৩০ কেজি ওজনের প্রায় ৬০০ বস্তা চাল লেদা এলাকার জাফর মার্কেটের চাল ব্যবসায়ী শামসু, গাফফার ও টাওয়ার এলাকার জাহাঙ্গীরের দোকানে চোরাই পথে সরবরাহ করা হয়। এসময় শামসুর দোকানে গিয়ে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার শত শত বস্তা চালের অস্থিত্ব পাওয়া যায়। উক্ত ব্যবসায়ীর কর্মচারীদের তড়িগড়ি করে ৩০ কেজির সেসব চালের বস্তা খুলে ৫০ কেজির সাধারণ বস্তায় ভর্তি করতে দেখা যায়।

এব্যাপারে চাল ব্যবসায়ী শামসুর কাছে জানতে চাইলে তিনি রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে সেসব চাল ক্রয় করেছেন বলে জানান। একই এলাকার অপর এক ব্যবসায়ী জানান, এসিএফ এর এক কর্মকর্তার মাধ্যমে তিনি নিজেও বিভিন্ন সময় ত্রাণের চাল-ডাল ক্রয় করেছিলেন।

এব্যাপারে জানতে চাইলে ক্যাম্প ২৬ ও ২৭ এর নয়াপাড়া জিএফডি বিতরণ কেন্দ্রের সুপার ভাইজার রাশেদুল কবির এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এধরনের অনিয়মের প্রশ্নই উঠেনা। কাগজপত্র যাচাই করে দেখতে পারেন।

এদিকে বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও ওই কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে ম্যানেজ করার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। সংস্থার বিভাগীয় পরিচালক মোহাম্মদ মাহদী জানান, এব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, রোহিঙ্গারা আসার পর থেকে তাদের সেবা দানকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের কতিপয় কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ অনিয়ম ও দূর্নীতি করে লাখ লাখ টাকা পকেটস্থ করছে। কেউ কেউ মাদকাসক্ত ও ইয়াবা পাচারে জড়িয়ে পড়েছে। অনেক বেসরকারি সংস্থায় ঘাপটি মেরে থাকা কর্মকর্তা কর্মচারীগণ সরকার বিরোধী কার্যকলাপ লিপ্ত রয়েছে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাস বিরোধী কাজ করছে বলেও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা থেকে জানা গেছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অভিযোগ, এসিএফ, বরাদ্দকৃত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন