parbattanews

রোহিঙ্গারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় পুলিশে উদ্বেগ

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে রোহিঙ্গাদের জড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন পুলিশ কর্মকর্তারা। সোমবার পুলিশ সদর দফতরে ত্রৈমাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা। পরে এই বিষয়ে আরও সতর্ক থাকতে মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশ দেন আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক।

এছাড়া রোহিঙ্গারা যেন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেন তিনি। গত ক’দিনে কক্সবাজারের কুতুপালং ও রামুতে রোহিঙ্গাদের হাতে একটি হত্যাকাণ্ডসহ সংঘটিত কয়েকটি ঘটনা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে সোমবার (৩০ অক্টোবর) পুলিশ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত ত্রৈমাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় দেশের সব পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপার, ঢাকায় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান ও পুলিশ সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভাসূত্র জানায়, ত্রৈমাসিক অপরাধ পর্যালোচনার বেশিরভাগজুড়েই ছিল রোহিঙ্গা ইস্যুটি। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প এলাকায় কী পরিমাণ ক্যাম্প স্থাপন জরুরি, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যেন দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া রাখাইনে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে রোহিঙ্গাদেরও চিহ্নিত করার কাজ চলছে। বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে গোয়েন্দারা এরইমধ্যে চিহ্নিত করেছেন। তাদের মধ্যে ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’র (আরসা) কোনও সদস্য আত্মগোপনে রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল মিয়ানমার সফর করেছে।

প্রতিনিধি দলে পুলিশের আইজিও ছিলেন। ওই সময় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আরসার সদস্যদের একটি তালিকাও দিয়েছিল। সেগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এখনপর্যন্ত এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে সূত্রটি।

রবিবার (২৯ অক্টোবর) সচিবালয়ে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকেও রোহিঙ্গাদের অপরাধে জড়িয়ে পড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গারা যেন কোনও ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াতে না পারে, সে জন্য কঠোর নজরদারি করতেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর নজর রাখতে কক্সবাজারের কুতুপালং ও রামুর আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় পাঁচটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ত্রৈমাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ বিভাগের এআইজি সহেলী ফেরদৌস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের অপরাধে জড়িয়ে পড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা যেন বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারণ আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারলে অপরাধও কম হবে।’

সহেলী ফেরদৌস আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা মিয়ানমারে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া আরসার কোনও সদস্য ক্যাম্পে আত্মগোপনে আছে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়। সব বিষয়ই গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষেই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়কেন্দ্র এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব,  ক্যাম্প স্থাপন করা হবে।’

সভায় পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) আবু হাসান মুহম্মদ তারিক জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসের সার্বিক অপরাধ চিত্র তুলে ধরেন। অপহরণ, খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন, মাদকদ্রব্য, চোরাচালান দ্রব্য, অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার, সড়ক দুর্ঘটনা, গাড়ি চুরি, রাজনৈতিক সহিংসতা, অপমৃত্যু ও পুলিশ আক্রান্ত মামলাসহ দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। এতে দেখা যায়, দস্যুতা, খুন, অপহরণ ও নারী নির্যাতনের মামলার সংখ্যা বেড়েছে।

রাজধানীসহ সারাদেশে যথাযথভাবে ট্রাফিক আইন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যানজট নিরসন ও সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বজায় রাখার লক্ষ্যে উল্টো পথে যেন কোনও সাধারণ যানবাহন চলাচল করতে না পারে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের গাড়িও উল্টো পথে না চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে থানায় নারী ও শিশুবান্ধব পরিবেশ এবং প্রতিটি থানায় শিশু অধিকার সেল গঠনের জন্য আলাদা কক্ষ গড়ে তোলারও নির্দেশনা দেওয়া হয় পুলিশ কর্মকর্তাদের।

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Exit mobile version