parbattanews

রোহিঙ্গা আগমনের ৬ বছরে দেড় লাখ শিশুর জন্ম, প্রত্যাবাসনে অগ্রগতি নেই

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের ছয় বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০১৭ সালের এদিনে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত সহিংসতায় বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত অতিক্রম করে এদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা। নতুন ঢল ও পূর্বে কয়েক দফায় আসা রোহিঙ্গা মিলে উখিয়া-টেকনাফে এখন সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গার বাস। রোহিঙ্গা আগমনের গত ছয় বছরে কয়েক দফা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল প্রত্যাবাসনের। কিন্তু মিয়ানমারের টালবাহানা এবং রোহিঙ্গাদের নানাশর্ত ও অজুহাতে এ পর্যন্ত প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হয়েছে।

তবে উখিয়া-টেকনাফ ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ঘনত্ব কমাতে নোয়াখালীর ভাসানচরে গড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ইতিমধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানে ১ লাখ রোহিঙ্গার আবাস গড়া হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। এদিকে যতই দিন যাচ্ছে, ক্যাম্পে বাড়ছে রোহিঙ্গা শিশু জন্মের হার। গত ছয় বছরে ক্যাম্পে প্রায় দেড় লাখ শিশু জন্ম নিয়েছে দাবি করেছেন ক্যাম্প ম্যানেজমেন্ট সংশ্লিষ্টরা।

সূত্রমতে, দিন দিন রোহিঙ্গা ইস্যুটি সরকারের জন্য বাড়তি বোঝা ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আন্তর্জাতিক ফোরামে বিষয়টি বারবার উঠলেও সমস্যা সমাধানের কোনো উপায় বের হচ্ছে না। রোহিঙ্গা ইস্যুতে পুরো কক্সবাজার অঞ্চলের স্থানীয়রা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গারা তুচ্ছ ঘটনায় খুনোখুনি ছাড়াও মাদক ব্যবসা, অপহরণ ও ধর্ষণের মতো নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।

গত ছয় বছরে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহসহ ১৩১টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে। তবে বিভিন্ন সংস্থা ও বেসরকারি তথ্যমতে, ছয় বছরে ক্যাম্পে দুই শতাধিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের ঠাঁই দিতে গিয়ে প্রায় ৮ হাজার একরের বেশি বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। বিপর্যয় ঘটেছে পরিবেশের। এ কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে পাহাড় ধসের ঘটনাও।

অভিযোগ আছে, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলে কিছু কার্যক্রম দেখালেও ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সন্ত্রাসী সৃষ্টি করছে। আন্তর্জাতিক মহলে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসেবে প্রমাণ করে প্রত্যাবাসন ঠেকানোই তাদের মূল লক্ষ্য, এমনটি দাবি খোদ রোহিঙ্গাদের।

কুতুপালং মধুরছড়ার রোহিঙ্গা নেতা সালামত খান বলেন, ক্যাম্পে খুন ও বিশৃঙ্খলায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মদদ রয়েছে বলে আমরা খবর পাই। ইয়াবা ব্যবসায় যুক্ত রোহিঙ্গারা সকলেই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সোর্স হিসেবে কাজ করছে। অনেকে এসব কথা জানলেও ভয়ে মুখ খুলেন না।

রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, যত দ্রুত সম্ভব মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন, মিয়ানমারের বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইন বাতিল, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রত্যাবাসনের পর আইডিপি ক্যাম্পের পরিবর্তে নিজস্ব গ্রামে ফিরে যাবার সুযোগ ও বসবাসের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করলে আমরা সব রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে প্রস্তুত।

এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। রোহিঙ্গারা তুচ্ছ ঘটনায় দলবেঁধে বাড়ি ঘেরাও করে স্থানীয়দের মারধর এবং অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। এসব কারণে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন, কক্সবাজারে বাস করা রোহিঙ্গাদের শনাক্তকরণ, এনআইডি-জন্মনিবন্ধন- পাসপোর্ট বাতিল করে ক্যাম্পে ফেরত নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছিল কক্সবাজারের স্থানীয় জনসাধারণ। কক্সবাজার পৌরসভার সামনে সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের ২১ আগস্ট পর্যন্ত ৩ হাজার ২০টি মামলা হয়েছে। যেখানে আসামি করা হয়েছে ৬ হাজার ৮৩৭ জন রোহিঙ্গাকে। খুনোখুনি, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, মানব পাচার, অগ্নিসংযোগসহ ১৪ ধরনের অপরাধে এসব মামলা হয়েছে।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই আমাদের শেষ লক্ষ্য। তবে এখন পরিস্থিতি এমন, আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া ছাড়া কিছু নেই। এখনো পর্যন্ত প্রত্যাবাসন নিয়ে কোনো আশার আলো দেখছি না।

Exit mobile version