parbattanews

রোহিঙ্গা ইস্যুতে হঠাৎ কেন তৎপর মিয়ানমার, কী করা উচিত বাংলাদেশের

দশ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে মাত্র এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করার জন্য একটি পাইলট প্রকল্প নিয়ে গত দুই বছর ধরে আলোচনা করছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। তবে হঠাৎ করে মিয়ানমার গত এক মাস ধরে এ বিষয়ে তৎপর হয়ে ওঠে। দেশটির ‘অকৃত্রিম বন্ধু’ চীনের সহযোগিতায় কুনমিংয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের ব্যবস্থা হয় যেখানে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন অংশ নেন। বর্ষার আগেই পাইলট প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু করতে চায় সবপক্ষ। বিশেষজ্ঞ ও সাবেক কূটনীতিকদের মতে, ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে আগামী ২৪ মে কাউন্টার মেমোরিয়াল জমা দিতে হবে মিয়ানমারকে। ওই নথিতে প্রত্যাবাসন বিষয়টি উল্লেখ করে দায়বদ্ধতা ও বিচারের দিকটি হালকা করতে চায় দেশটি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রোহিঙ্গা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিদের দায়বদ্ধতার আওতায় না আনা হলে এবং তাদের বিচার নিশ্চিত না হলে রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে ভয় পাবে। এজন্য আন্তর্জাতিক কোর্টে চলমান মামলাগুলোতে বাংলাদেশের সর্বাত্নক সহায়তা দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তারা। চীন বা অন্য কোনও দেশের প্ররোচনায় আন্তর্জাতিক মামলাগুলোতে বাংলাদেশ অনীহা প্রদর্শন করলে সেটি দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে।

এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘মিয়ানমার এখন বিভিন্ন মুখি চাপের মধ্যে আছে। এ মূহুর্তে প্রত্যাবাসন হলে সেটি মিয়ানমারের পক্ষে যাবে।’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের ভূমিকা কী এবং মিয়ানমার কেন এখন প্রত্যাবাসন করতে চাইছে সেটি বিশ্লেষণ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ’আমরা চাই রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফেরত চলে যাক। তবে আন্তর্জাতিক কোর্টে চলমান মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ কী সেটি আমাদের মাথায় রাখতে হবে।’

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে পাইলট প্রকল্প নিয়ে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে অভ্যন্তরে এখনও অনেক রোহিঙ্গা আছে, যারা আইডিপি ক্যাম্পে আছে। তাদের পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে নিজ গ্রামে পুনর্বাসন করা হলে বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা আরও বেশি আত্মবিশ্বাস ফেরত পাবে।’

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা শাস্তি না পেলে রোহিঙ্গারো ফেরত যেতে আগ্রহী হবে না।’

দ্বিপক্ষীয়ভাবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পক্ষে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য আন্তর্জাতিক কোর্টের একটি দিক নির্দেশনা প্রয়োজন হবে।

আর্তর্জাতিক কোর্টে চলমান মামলাগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশের অনীহা প্রদর্শন ‘আত্নহত্যার’ শামিল হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দায়বদ্ধতা নিশ্চিত না করে প্রত্যাবাসন তৈরির একটি আবহ তৈরি করলে সেটি মিয়ানমারের পক্ষে যাবে।’

বেইজিং এর মধ্যস্থতার বিষযে তিনি বলেন, চীন এখনও এমন কোনও উদাহরণ সৃষ্টি করেনি যেটি দেখে বলা যাবে দেশটি নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখছে। চীন সবসময় মিয়ানমারের বড় বন্ধু ছিল এবং এখনও আছে।

তিনি বলেন, ‘এটি দুঃখজনক যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে সেভাবে দাঁড়ায়নি। দায়বদ্ধতা নিশ্চিত ও দোষি ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার সেটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালায় মিয়ানমার সামরিক বাহিনী। নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে আট লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। ২০১৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসে রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে গাম্বিয়া।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Exit mobile version