parbattanews

রোহিঙ্গা ইস্যু পার্বত্য চট্টগ্রামের উপর চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার :

রোহিঙ্গা ইস্যু জঙ্গি ঝুঁকি বাড়াবে- এমন আশংকা করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুর্নীতিবিরোধী এ সংস্থাটি মনে করছে, এ সংকটের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যোগসাজশের ঝুঁকি রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটটি পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। একই সাথে রোহিঙ্গা সংকটে ভারত ও চীনের মতো পরাশক্তিকে দায়ী করে টিআইবি বলছে, শুধু ত্রাণকেন্দ্রিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না।  দ্বিপাক্ষিক আলোচনার নামে সময় ক্ষেপণ না করে আন্তর্জাতিকভাবেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।

গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজস্ব কার্যালয়ে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির সার্বিক বিষয় তুলে ধরতে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ আশঙ্কা ও অভিমত তুলে ধরা হয়েছে টিআইবি’র পক্ষ থেকে। উক্ত সাংবাদিক সম্মেলনে টিআইবি ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে অবস্থানজনিত সমস্যা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ বিষয়ক সমীক্ষা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

সম্মেলনে আলোচ্য প্রতিবেদন তুলে ধরার পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন টিআইব’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।  এতে আরো উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র উপদেষ্টা, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। সমীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবি’র জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন ইউনিটের প্রোগ্রাম ম্যানেজার গোলাম মহিউদ্দিন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী টিআইবি’র জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন ইউনিটের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার, গবেষণা মো: রাজু আহমেদ মাসুম।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে সরকার বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে। রোহিঙ্গারা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু ত্রাণকেন্দ্রিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। আন্তর্জাতিকভাবেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। কূটনৈতিক চাপে এ সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ সামর্থ্য রাখে।

রোহিঙ্গা সংকটে ভারত ও চীনের মতো পরাশক্তিরা দায়ী উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, মিয়ানমারের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণেই রোহিঙ্গাদের উপর এ জাতিগত নিধন। এটি একটি গণহত্যা। ভারত ও চীন বাংলাদেশের ভালো বন্ধু। এ দুটি দেশকে বোঝানোর ব্যাপার বাংলাদেশের। মিয়ানমারের উপর প্রয়োজনে সামরিকসহ সকল প্রকার নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি রাখে।

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করা হলে ক্যাম্পগুলোতে নানাবিধ অপরাধ এবং সহিংসতা বৃদ্ধি পাবে, যা ইতোমধ্যেই লক্ষণীয়। এ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক নানাবিধ অপরাধে রোহিঙ্গাদের জড়িত করার ঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে সাংগঠনিক ক্ষমতা কাঠামো তৈরি হচ্ছে, যা শুরু থেকে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হিসেবে পরিগণিত হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশে নিবন্ধিত হলে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা নিজ ভূমি মিয়ানমারে ফিরে যাবে বলে কিছু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বায়োমেট্রিককে নিরুৎসাহিত করছে। কেন ও কোন সংস্থাগুলো নিবন্ধিত হতে রোহিঙ্গাদের নিরুৎসাহিত করছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কারা নিরুৎসাহিত করছে তা প্রাতিষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

তবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় সংস্থা এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। নিবন্ধিত হলেই মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে এমন কারণ বলা হচ্ছে। ফিরে তো যেতেই হবে। কিন্তু তার আগে পরিবেশ সৃষ্টি হবে। তখন ফেরত পাঠানো হবে। এই সমস্যা সমাধানে প্রচারণা বৃদ্ধির পাশাপাশি ত্রাণের সঙ্গে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ রেখেছে টিআইবি।

বাংলাদেশে অবস্থানরত বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নাগরিক রোহিঙ্গাদের ত্রাণ ও আশ্রয় ব্যবস্থাপনার ওপর একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জসমূহ চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে সমীক্ষাটি চলতি বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে পরিচালিত হয়।

গুণগত এ গবেষণায় সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক সংস্থা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র, সাংবাদিক, স্থানীয় বাংলাদেশি নাগরিক ও আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তথ্যের প্রাথমিক উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। পরোক্ষ উৎস হিসেবে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের ওয়েবসাইট এবং গণমাধ্যমের তথ্য ব্যবহৃত হয়েছে।

সমীক্ষায় দেখা যায়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মৌলিক চাহিদাসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ সত্ত্বেও তারা খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানসহ বিশুদ্ধ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যজনতি ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শরণার্থীদের প্রতিনিধি, স্থানীয় কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং এক শ্রেণির অসাধু চক্র কর্তৃক যোগসাজশের মাধ্যমে ত্রাণসামগ্রী আত্মসাৎ ও চাঁদাবাজির কারণে বিভিন্নভাবে প্রতারিত হচ্ছে বাস্তুচ্যুত শরণার্থীরা।

বিপুল সংখ্যক শরণার্থী ব্যবস্থাপনায় জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ সামাজিক, অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্য, ও পরিবেশগত দীর্ঘমেয়াদী বিপর্যয়ের ঝুঁকির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের কোনো পূর্ণাঙ্গ তালিকা না থাকায় ত্রাণ বিতরণসহ অন্যান্য সহায়তার ক্ষেত্রে সমতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। নিরাপদ খাবার পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার এখনো ব্যাপক অপ্রতুলতা রয়েছে।

এ সংক্রান্ত যে সকল স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে তার তদারকি ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে। স্থাপিত নলকূপগুলোর ৩০ শতাংশ দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন। উপযুক্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। এছাড়া প্রদত্ত অস্থায়ী টয়লেটগুলোর ৩৬ শতাংশ অল্প দিনের মধ্যেই ভরাট হয়ে যাবে।

সমীক্ষাটির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, শরণার্থীদের চাহিদার তুলনায় স্বাস্থ্যসেবা অত্যন্ত অপ্রতুল এবং তার ওপর বিভিন্ন পানিবাহিত ও সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও শরণার্থীদের মধ্যে এইড্স- এ আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে যা বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। প্রতিনিয়ত উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাসহ আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ পরিদর্শকদের প্রটোকল প্রদানে জেলা প্রশাসন ব্যস্ত থাকার কারণে ত্রাণ ব্যবস্থাপনার সার্বিক তদারকিতে প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের ব্যবস্থাপনা ব্যয় সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতি এবং উন্নয়নে বিরূপ প্রভাব ফেলার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় নিয়োজিত ৩৯টি আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ১৬টি জাতীয় বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়কারী দল ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) প্রকাশিত প্রতিষ্ঠানভিত্তিক কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্যের অধিকাংশই উন্মুক্ত নেই।

আইএসসিজি প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ আগস্ট সহিংসতা শুরুর পর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে নতুন করে আশ্রয় নেওয়া ৫ লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর খাদ্য চাহিদা উল্লিখিত সময় পর্যন্ত পূরণ করা সম্ভব হলেও সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক সহায়তায় ত্রাণ সরবরাহ এবং ত্রাণসামগ্রীর পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশ কর্তৃক এই বিপুল জনগোষ্ঠীর বিবিধ চাহিদা পূরণ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

উল্লিখিত সময় পর্যন্ত শরণার্থীদের মধ্যে ৫৫ হাজার গর্ভবতী নারীর পুষ্টিসেবা চাহিদার বিপরীতে মাত্র ১২ হাজার ৬৬২ জন এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী দেড় লাখ শিশুর পুষ্টিসেবা চাহিদার বিপরীতে ৪৯ হাজার ৩০৬ শিশুর পুষ্টিসেবা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে। গত ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত শরণার্থীদের জন্য ২৫ হাজার নলকূপের চাহিদার বিপরীতে মাত্র ৪ হাজার ৩৭০টি নলকূপ, ৩৮ হাজার অস্থায়ী স্যানিটারী টয়লেটের চাহিদার বিপরীতে ২৪ হাজার ৭৭৩টি টয়লেট স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে এবং ১১ লাখ ৬৬ হাজার মানুষের পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সেবার আওতায় নিয়ে আসার চাহিদার বিপরীতে ৫ লাখ ৩০ হাজার মানুষকে এ সেবার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। গত ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেড় লাখ শিশুর জন্য পোলিও ভ্যাকসিন ও ভিটামিন এ ক্যাপসুলের চাহিদার বিপরীতে ৭২ হাজার ৩৩৪ শিশুকে এ সেবা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে।

সমীক্ষায় দেখা যায়, সীমান্ত অতিক্রম থেকে আশ্রয়স্থলে পৌঁছানো ও আশ্রয় শিবিরে পুনর্বাসন পর্যন্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বিভিন্ন অসাধু চক্রের হাতে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতারণা ও চাঁদাবাজির শিকার হয়েছে। প্রকৃত ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা হলেও, সীমান্ত পাড়ির সময় মিয়ানমারের নৌকার মাঝিদের জনপ্রতি গড়ে ৫ হাজার থেকে  ১৫ হাজার টাকা অথবা অর্থের বদলে সোনার গহনা দিতে হচ্ছে।

মুদ্রা বিনিময়ের ক্ষেত্রে প্রতি এক লাখ কিয়াটের বিপরীতে ৬ হাজার টাকা প্রাপ্তির কথা থাকলেও দালালদের কাছ থেকে তারা পাচ্ছে ২ হাজার থেকে ৪ হাজার পাঁচশ টাকা এবং বাংলাদেশি মুদ্রার মান জানা না থাকায় স্থানীয় যানবাহন ব্যবহারের ক্ষেত্রে শরণার্থীদের অতিরিক্ত ভাড়া প্রদান করতে হচ্ছে। এছাড়াও, আশ্রয়ঘর নির্মাণের জন্য প্রতিটি পরিবার কর্তৃক একটি অসাধু চক্রকে গড়ে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে এবং প্রতিটি ধাপের প্রতারণার সাথেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোহিঙ্গা প্রতিনিধি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে যোগসাজশের মাধ্যমে ত্রাণের টোকেন বিক্রয়, ত্রাণসামগ্রী আত্মসাৎ ও রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে অবৈধ উপায়ে অর্থ আদায়সহ তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধ ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, রোহিঙ্গা সংকট পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এ সংকটের সুযোগে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সাথে রোহিঙ্গাদের যোগসাজশ প্রতিষ্ঠার ঝুঁকি রয়েছে। রোহিঙ্গা নারীদের যৌন ব্যবসায় জড়িয়ে ফেলার ঝুঁকিসহ রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের অন্যান্য জেলায় ছড়িয়ে গেলে তা বহুমুখী সামাজিক, অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকির কারণ হবে।

রোহিঙ্গাদের মধ্যে সাংগঠনিক ক্ষমতা কাঠামো তৈরি হচ্ছে যা শুরু থেকে নিয়ন্ত্রণ না করলে একটি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হিসেবে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অবাধ সীমান্ত অতিক্রমের সুযোগ ব্যবহার করে মাদক চোরাচালান ও মানব পাচারসহ বিভিন্ন ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার তথ্যও সমীক্ষায় পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং আর্থ-সামাজিক ও নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, দাতা সংস্থা, রাষ্ট্র এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিবেচনার জন্য সমীক্ষায় বেশ কিছু সুপারিশ প্রদান করেছে টিআইবি।

এসব সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সম্পৃক্ত করে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারকরণ, আন্তর্জাতিক সংস্থা, রাষ্ট্র ও দাতা সংস্থাসমূহের বিবেচনার জন্য ত্রাণের পাশাপাশি মিয়ানমারের ওপর সমন্বিত কূটনৈতিক প্রভাব, বিশেষ করে সুনির্দিষ্ট চাপ প্রয়োগ করার সুপারিশ করা হয়। ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের উদ্দেশে পর্যাপ্ত জনবল সরবরাহের মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব সকল রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্নকরণ।

পরিবেশ, বনায়ন ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি রোধে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদের সমন্বয়ে অবিলম্বে একটি পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ; রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে সীমান্তে একটি প্রাথমিক তালিকাভুক্তির ব্যবস্থা করা, প্রতিবন্ধী ও অনাথ শিশুদের তালিকা দ্রুত সম্পন্নকরণ এবং রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সকল সরকারি ও বেসরকারি বিস্তারিত তথ্যের জন্য একটি সমন্বিত ওয়েবসাইট তৈরি করাসহ নির্দিষ্ট সময় পর তা হালনাগাদকরণ।

Exit mobile version