parbattanews

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করার দাবি

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সকল ধরণের প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজ। সেই সঙ্গে ইসিএ আইন লঙ্ঘন করে অপরিকল্পিত স্থাপনা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা।

‘আমাদের পৃথিবী একটাই: তাঁকে রক্ষায় বাঁচাতে হবে প্রকৃতি-পরিবেশ’ এই স্লোগানে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কক্সবাজার মিলনায়তনে আলাচনা সভায় এমন দাবি জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ) এর যৌথ সভায় বক্তারা বলেন, পরিবেশের সাথে সমন্বয় রেখে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোন উন্নয়ন বা অবকাঠামো নির্মাণ উচিৎ নয়। পরিবেশ বাঁচলে আমরা বাঁচি, পৃথিবী বাঁচবে। সুরক্ষা হবে জীববৈচিত্র।
বাপা কক্সবাজার জেলা সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার।

তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সমূহ পরিচালনার ক্ষেত্রে আরো দায়িত্বশীলতা আনয়ন দরকার। নিজ নিজ অবস্থান থেকে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। উন্নয়ন কাজের আড়ালে দুর্নীতি কোনভাবে কাম্য নয়। দুর্নীতিবাজরা দেশের শত্রু।

উন্নয়নকর্মী মিজানুর রহমান বাহাদুরের সঞ্চালনায় পরিবেশ দিবসের এই সভায় বক্তব্য দেন, সিসিএনএফের সদস্য সচিব ও কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, বাপার সহসভাপতি সাংবাদিক ফরিদুল আলম শাহীন, সাংবাদিক মো. নেজাম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ কলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম, যুগ্মসম্পাদক কবি জসিম উদ্দিন, ইপসার সমন্বয়ক মো. হারুন, একলাবের উত্তম কুমার সরকার, বাপা কক্সবাজার শহরের সাধারণ সম্পাদক ইরফান উল হাসান, পরিবেশ সংগঠক মো. ইলিয়াছ মিয়া প্রমুখ।

বাপা সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী তার সভাপতির বক্তব্যে বলেন, কক্সবাজারের পরিবেশ আজ হুমকির মুখে। অধিক গাছপালা কাটার ফলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কক্সবাজার জেলায় প্রায় ২৪ লাখ মানুষের পাশাপাশি উখিয়া টেকনাফে ১০ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাপ রয়েছে। যার ফলে কক্সবাজারে পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে এবং পানি হয়ে যাচ্ছে লবণাক্ত। ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে বিভিন্ন আইএনজিও এবং ইউএন এনজিওদের প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানাই।

তিনি আরো বলেন, কক্সবাজারে প্রতিদিন টন টন প্লাষ্টিকের বর্জ্য যুক্ত হচ্ছে। বর্ষার সময় এসব বর্জ্য গিয়ে মিশছে সাগরে, নদীতে এবং মাটিতে। প্লাষ্টিক বর্জ্যের কারণে নদীর তলদেশ ভরাট হচ্ছে, নদী হারাচ্ছে নাব্যতা। প্রায় পাঁচ লক্ষ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি দশ লক্ষের বিশাল রোহিঙ্গা প্রতিদিন তৈরি করছে টন টন প্লাস্টিক বর্জ্য যা স্থানীয় পরিবেশে মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনছে। প্লাস্টিকের বিকল্পও রয়েছে। ক্যাম্পে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার বন্ধে আইএনজিও এবং জাতিসংঘ সংস্থাগুলো এগিয়ে আসতে হবে।

বক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে উখিয়া এবং টেকনাফের মোট ১৭৬ হেক্টর আবাদি জমি দখল হয়েছে। ক্যাম্পের ১০ লক্ষ জনগোষ্ঠীর প্রতিদিনের প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে প্রায় ৯৩ হেক্টর জমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। জমিগুলোকে চাষযোগ্য করে তুলতে জরুরি উদ্যোগ প্রয়োজন।

তাদের মতে, কক্সবাজারের অন্যতম প্রধান দুটি নদী বাঁকখালী আর কোহেলিয়া আজ দখলবাজদের কারণে বিপন্ন হতে চলেছে। নিয়মিতভাবে এই নদীগুলো ভরাট হচ্ছে। নদীগুলো অবৈধ দখল-দূষণমুক্ত করণ এবং অবিলম্বে পাহাড় কাটা বন্ধের দাবি জানান পরিবেশ নেতারা।

পরিবেশ দিবসের আলোচনা সভায় ৬টি দাবি উত্থাপিত হয়েছে। দাবিসমূহ হলো-রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ কক্সবাজারে প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধকরণ, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে জাতিসংঘের এনজিও এবং আইএনজিও গুলোর জরুরি পদক্ষেপ, রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ কক্সবাজারে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধকরণ, ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার নিশ্চিত, নাফ নদীর পানি সংশোধন করে এবং বৃষ্টির পানি ধরে তা পুনর্ব্যবহার করার উদ্যোগ, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তড়িৎ পদক্ষেপ এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নষ্ট হওয়া ফসলী জমি পুনরায় চাষযোগ্য করতে পদক্ষেপ গ্রহণ।

Exit mobile version