parbattanews

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঘটনা বহুল ২০২২ সাল

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ব্রিটিশ শাসিত অঞ্চল থেকে মুক্ত হয় বার্মা। এরপর জাতিগত সংঘাত, বিদ্বেষ পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকে। বিভিন্ন সময়ে সরকারি বিভিন্ন আইনের মারপ্যাঁচে আরাকান প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার পরও নির্যাতিত হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র বাংলাদেশে কয়েকদফা পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে আবার স্বদেশে ফিরেছে। বিশেষ করে ১৯৭৮ সাল, ১৯৯০-৯১ সালে আরাকান রাজ্য থেকে দুই থেকে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্ত উপজেলাগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিল। আবার দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে মিয়ানমার ফিরিয়েও নিয়েছিল এসব রোহিঙ্গাদের। তবে এদের মধ্যে ১৯৯০-৯১ সালে আসা প্রায় ২৫ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা ফিরতে পারেননি। যারা কিনা কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং ও টেকনাফের নয়া পাড়া ক্যাম্পে অবস্থান করছে এখনো। তাছাড়া ২০১২ সালে, ২০১৬ সালে এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা আবার মিয়ানমারের নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে। যার পরিমাণ ১১ লাখেরও অধিক। ৫ বছরের অধিক সময় ধরে এসব রোহিঙ্গা কক্সবাজারের ৩৪টি ক্যাম্পে অবস্থান করছে। আর এসব রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে প্রতিনিয়তই ঘটছে নানান ঘটনা। গেল বছর ২০২২ সালে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো চোখ বুলিয়ে নিতে পারি।

অগ্নিকাণ্ড

কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুন লাগে রবিবার (৯ জানুয়ারি) বিকাল ৫টার দিকে পালংখালী ইউনিয়নের শফিউল্লাহ কাটা ১৬ নং ক্যাম্পে। এতে ১২ শত ঘর পুড়ে যায়। এর আগে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি উখিয়া বালুখালী ২০ নম্বর ক্যাম্পে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা (আইওএম) পরিচালিত করোনা হাসপাতালে আগুন লাগে।

বুধবার (১৩ জানুয়ারি) টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পে আগুন লেগে পাঁচ শতাধিক ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ ছাড়াও গত বছরের ২২ মার্চ উখিয়ার বালুখালীতে আগুনে পুড়ে মারা যান ১৫ জন রোহিঙ্গা। তখন ১০ হাজারের মতো ঘর পুড়ে ছাই হয়েছিল।

মানবপাচার, নৌকা ডুবিতে মৃত্যু, উদ্ধার

শীত মৌসুমের শুরুতে কক্সবাজারের টেকনাফ বাহারছড়ার বঙ্গোপসাগরে মালয়েশিয়াগামী ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। এসময় ৩ নারীকে মৃত ও ৪৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করে পুলিশ ও কোস্টগার্ড। উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন বাংলাদেশি। বাকিরা সবাই টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক নুর মোহাম্মদ।

এ ছাড়াও আন্দামান সাগরে ডুবন্ত নৌকা থেকে ১৫৪ রোহিঙ্গা উদ্ধার করে তুলে দেওয়া হয় মিয়ানমারের হাতে। আন্দামান সাগরে ডুবে যাওয়া একটি নৌকা থেকে ১৫৪ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে ভিয়েতনামি একটি নৌযান। পরে তাদের মিয়ানমারের নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) ভিয়েতনামের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ভিটিসি নিউজ এ তথ্য দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে গেল রোহিঙ্গা শরণার্থীর প্রথম দল

বাংলাদেশ থেকে ২৪ জনের রোহিঙ্গা শরণার্থীর প্রথম দলটি বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। মাইনুল কবির নামে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। রোহিঙ্গাদের এ দলটি সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের জন্য চিহ্নিত প্রথম ব্যাচের ৬২ জনের মধ্য থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৩০০-৮০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের সুযোগ পেতে পারে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে প্রধানমন্ত্রীর ৫ প্রস্তাব

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা দেওয়াসহ পাঁচটি পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফররত প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) লোটে প্যালেস হোটেলে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেন।

১. রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদান।
২. আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়াকে সমর্থন করাসহ আন্তর্জাতিক বিচার আদালত, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং জাতীয় আদালতের কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করা।
৩. জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অব্যাহত দমন-পীড়ন বন্ধে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
৪. আসিয়ানের পাঁচ-দফা ঐক্যমত মেনে চলার অঙ্গীকার পূরণে মিয়ানমারকে দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানানো।
৫. মিয়ানমার যাতে বাধাহীন মানবিক প্রবেশাধিকারে রাজি হয় সেজন্য উদ্যোগ নেওয়া।

মিয়ানমারে ফিরে যেতে ‘গো হোম’ কর্মসূচি

নাগরিকত্ব প্রদানের মাধ্যমে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিসহ নানা দাবি নিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে বিক্ষোভ করছেন রোহিঙ্গারা। ১৯ জুন (রোববার) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, লম্বাশিয়া, টেকনাফের শালবাগান, নয়াপাডা, লেদাসহ ৩৪টি ক্যাম্পে একযোগে বিক্ষোভ শুরু হয়। মিছিল ও সমাবেশের মাধ্যমে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে অনুরোধ জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা। ‘ব্যাক টু হোম’ স্লোগানে এই বিক্ষোভে লাখো রোহিঙ্গা অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ ছাড়লো মুহিবুল্লাহর পরিবার

সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর পরিবারের ১১ সদস্য কানাডার উদ্দেশে বাংলাদেশ ছেড়েছেন। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল ২০২২) রাত পৌনে ১২টায় টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তারা কানাডার উদ্দেশে রওনা হন। ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কুতুপালং-১ (ইস্ট) লম্বাশিয়া ক্যাম্পের ডি-৮ ব্লকে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান ও রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ। নিজ অফিসে অস্ত্রধারীরা তাকে পাঁচ রাউন্ড গুলি করে। এ সময় তিন রাউন্ড গুলি তার বুকে লাগে। খবর পেয়ে এপিবিএন সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে ‘এমএসএফ’ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

Exit mobile version