parbattanews

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এত আগুন কেন?

গেল একটি বছরে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরপর তিনটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের ২২ মার্চ রাতে উখিয়ার ৮ ও ৯ নম্বর ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনে বহু বসতবাড়ি পুড়ে যায়। এ সব ঘটনায় ১১ জন নিহত হয়। এ ছাড়া গত ২ জানুয়ারি অগ্নিকাণ্ডে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা (আইওএম) পরিচালিত একটি করোনা হাসপাতাল ও তার পাশের কয়েকটি বসতি পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রন্ত হয় স্থানীয় বসতিও। যার প্রভাব পড়েছে জীবনযাত্রায়।

সর্বশেষ গতকাল রোববার (৯ জানুয়ারি) বিকালে উখিয়ার ১৬ নম্বর শফিউল্লাহ কাটা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে প্রায় ৬০০ শেড আগুনে পুড়েছে বলে তথ্য দিয়েছেন ক্যাম্পে নিয়োজিত ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক মো. নাইমুল হক।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কেন বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরাও উদ্বিগ্ন। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দ্রুত অগ্নিনির্বাপনের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত পানি মজুত ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন দরকার বলে জানান অধিনায়ক মো. নাইমুল হক।

রবিবারের অগ্নিকাণ্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর থেমে থেমে জ্বলছিল। প্রাথমিক তথ্যে জানা যায়, প্রায় ৬০০শেড পুড়ে গেছে। কক্সবাজার ও উখিয়ার ফায়ারসার্ভিস আগুন নেভানোর কাজ করে। প্রায় ৩ ঘন্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ক্যাম্প-১৬ এর ইলিয়াস মাঝি এবং আবুল সৈয়দ মাঝির রান্নাঘরের গ্যাসের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বসতির বাসিন্দারা ক্যাম্পের বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থান নিয়েছে।

তবে, অগ্নিকাণ্ডে কারো দূরভিসন্ধি আছে কিনা অনুসন্ধান করার দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। তারা বলছে, ঘটনার সাথে উশৃঙ্খল একটি চক্রের হাত থাকতে পারে। প্রত্যাবাসন বিরোধীতা তাতে ইন্ধন যোগাচ্ছে। অনেকে মনে করছে, চাকুরির মেয়াদ বৃদ্ধি ও প্রকল্প প্রাপ্তির সুবিধার্থে অসাধু এনজিওর সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।

এদিকে, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়েছে ছয় শতাধিক রোহিঙ্গা বসতি। সবকিছু হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিন কাটছে তাদের। তবে দ্রুত রোহিঙ্গাদের শেল্টার নির্মাণ করে দেওয়াসহ সমস্যা লাঘবে কাজ করছে বলে জানিয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন।

সোমবার (১০ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিন দেখা যায়, করুণ চিত্র। চারিদিকে আগুনে পোড়া গন্ধ। তাতে দুঃখভরে হাঁটছে ক্ষতিগ্রস্তরা। পোড়া অঙ্গারে হেঁটে হেঁটে কেঁদে ফেলছে অনেকে। পুড়ে ছাই হওয়া বসতি খুঁজে বেড়াচ্ছে। দেখছে কিছু পাওয়া যায় কিনা। কিন্তু নেই। কিচ্ছুই নেই। সব শেষ। আগুনে কেড়ে নিয়েছে সব সম্বল। শুধু দাঁড়িয়ে আছে বসতির পিলারগুলো।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামছু দ্দৌজা জানান, কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। তবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

তিনি জানিয়েছেন, আগুনে পুড়ে ঘরহারা রোহিঙ্গাদের শিক্ষাকেন্দ্র, মাদ্রাসা-মক্তব, উইমেন ফ্রেন্ডলি স্পেস ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে রাখা হয়েছে। এনজিও সংস্থাগুলো তাদের জরুরি খাবার সরবরাহ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের দ্রুত পুনর্বাসনসহ শীতবস্ত্র দেওয়া হবে।

Exit mobile version