parbattanews

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোরবানির পশু বিতরণের নামে লুটপাটের আশঙ্কা

উখিয়া-টেকনাফর ৩২টি ক্যাম্প আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝে প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার পরিবারকে কোরবানির মাংশ বিতরণের উদ্যােগ নিয়েছে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা। এসব এনজিও সংস্থা ইতিমধ্যে তালিকা প্রণয়ণের কাজ প্রায় চুড়ান্ত করেছে।

এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের মাঝেও বিতরণ করা হবে কোরবানির মাংস। কোরবানির মাংশ বিতরণের জন্য পশু ক্রয়-বিক্রয়ের নামে একটি মহল কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে থাকে প্রতি বছর। যা প্রশাসন অবগত থাকলেও অদৃশ্য কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না। এবারও সেই মহলটি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বসিয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পশুর হাট। যাতে তাদের সুবিধা হয়, গরু ক্রয়ে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, তুরস্ক ভিত্তিক এনজিও ডায়নট ফাউন্ডশন ৫০ হাজার কেজি মাংশ বিতরণ করবে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মাঝে। ওই এনজিওর একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিশ্বের ১৬০টি দেশে তাঁরা কোরবানির মাংশ বিতরণ করবেন। এবার সর্বোচ্চ বিতরণ হবে কক্সবাজারর উখিয়া-টেকনাফ আশ্রিত রোহিঙ্গাদর ও স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে। আশাকরি ২/১ দিনের মধ্যে সবকিছু চুড়ান্ত করে তালিকা প্রকাশ করতে পারব।

রোহিঙ্গা ও স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সুষ্ঠুভাবে কোরবানির মাংস বিতরণের প্রশাসনিক উদ্যােগের বাইরেও কিছু দালাল চক্র বিছিন্নভাবে মাংস বিতরণের তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। এই চক্র রোহিঙ্গাদের মাঝে গরুর মাংস বিতরণের নামে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে প্রতিবছর মোটা অংকের টাকা লোপাট করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এই উদ্যোগকে বিঘ্ন ঘটানোর পাশাপাশি ওই চক্র নিজেদের স্বার্থ ও আর্থিক ফায়দা লোটার কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে বলে অভিযােগ রয়েছে।

এদিকে দেখাগেছে এই দালালচক্র ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ পশু হাট বসিয়েছে। যাতে গরু ক্রয় বিক্রয়ের তাদের সুবিধা হয়ে থাকে। এছাড়াও তাদের সাথে যোগসাজস রয়েছে দেশি-বিদেশী কিছু বিতর্কিত সংগঠনের সঙ্গে। যারা প্রতি কোরবানির সময় বিভিন্ন নিষিদ্ধ সংগঠনের টাকা এনে রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণের নামে লুটপাট করে থাকে।

উখিয়ার ৫নং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা আবু তালেব জানান, গত ২ বছর তারা অনেকটা পূর্ব স্মৃতি ভুলে যেতে বসেছে। তাই এবার ঈদ আনন্দ কিছুটা হলেও উপভােগ করবেন বলে সে জানায়।

মরিয়ম বেগম নামের এক রোহিঙ্গা নারী জানায়, গত দুই বছর আগে কোরবানির ঈদের দিন ঠিক এই সময় তাদের নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে বাংলাদশে। এখান এবার সহ দু’বার আমরা কোরবানির ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছি। গত বারের ন্যায় একটু আনন্দে ঈদ কাটাব এবার।

উখিয়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মাে. নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, এনজিও বা আইএনজিও পক্ষ থেকে এখনো উল্লখ্যযোগ্য কোন গরু বরাদ্দ পায়নি। তবে রোহিঙ্গা ও ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের জন্য মাংশ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এছাড়া সরকারি উদ্যোগের বাইরে কেউ গরু অথবা মাংশ বিতরণের সুযাগ নেই।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানিয়েছেন, রােহিঙ্গা ক্যাম্পে মাংশ বিতরণের তালিকা প্রণয়ণের কাজ চলছে। প্রতি পরিবারের মাঝে কত কেজি করে মাংস বিতরণ হবে এটি চুড়ান্ত হয়নি। তবে বিতরণের জন্য যত মাংস নির্ধারণ হবে তার ৩০ ভাগ স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের নির্দেশনা রয়েছে। ৭০ ভাগ বিতরণ হবে আশ্রিত রোহিঙ্গা পরিবারের মাঝে। প্রতিটি পরিবার কােরবানির মাংস পাবে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) আবুল কালাম বলেন, আমরা বিভিন্ন ব্যক্তি ও এনজিওর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্য যেসব গরু পেতে যাছি এ সংখ্যা কত হয় তা চুড়ান্ত হয়নি। সেগুলো একত্রিত করে যেখানে, যতটা দরকার ততটা হিসাব করে পাঠানা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ক্যাম্প ইনচার্জদের তত্ত্বাবধানে মাংস বণ্টন করা হবে। তিনি বলেন, জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গা পরিবার রয়েছে প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার।

Exit mobile version