parbattanews

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টর্চার সেল, রয়েছে গোপন আস্তানা!

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের গোপন আস্তানা

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক রোহিঙ্গা অন্য রোহিঙ্গাকে গলা কেটে হত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করে না। রোহিঙ্গাদের মধ্যে একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে। ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঘটে অনাকাঙ্খিত ঘটনা। ক্যাম্পের ভিতরে বেআইনি কাজসহ চলছে ইয়াবার রমরমা ব্যবসা। খালি হাতে এক কাপড়ে আসা রোহিঙ্গারা আর আগের মতো নেই। তারা বৈধ-অবৈধ বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িত।

আগে রোহিঙ্গারা ইয়াবা বহন করতো, এখন রোহিঙ্গারাই ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার ঘটাতে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয়। নির্যাতনে শিউরে ওঠার মতো তথ্য বেরিয়ে আসছে সাধারণ রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে। প্রতিটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে রয়েছে টর্চার সেল। সাধারণ রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে তুলে নিয়ে টর্চার সেলে নির্যাতন করা হয়।

তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যেই একাধিক রোহিঙ্গা নেতাকে গলা কেটে হত্যার ঘটনাও ঘটিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শক্ত অবস্থানের ফলে ক্যাম্পে হত্যাকান্ডের ঘটনা এখন কমে আসলেও সম্প্রতি মাথা নাড়া দিয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি, অপহরণ ও আধিপত্য বিস্তার। গেল এক সপ্তাহ ধরে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নতুন ও পুরনো রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। তার মধ্যে অপহরণের শিকার হয়েছে অন্তত ১৫ জন রোহিঙ্গা। তাদের মধ্যে ৬ রোহিঙ্গা মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসলেও অন্যদের এখনো খোঁজ নেই বলে জানা গেছে।

এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে অন্য একটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ উসকে দিয়ে ক্ষোভে উত্তাল করে তুলতে পারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। তাই অনাখাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদা প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রোহিঙ্গা এই প্রতিবেদককে জানান, ক্যাম্পে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। রোহিঙ্গা শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপ মুন্না গ্রুপ গত কয়েক দিনে ১৫ জন রোহিঙ্গাকে অপহরণ করেছে। এর মধ্যে মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এসেছে ৬ জন। বাকিরা এখনো তাদের টর্চার সেলে জিম্মিদশায় রয়েছে বলে দাবি তাদের।

জানা গেছে, গত ২৬ আগস্ট রাতে সন্ত্রাসী গ্রুপের এক নেতা নেছার আহমদের ছেলে সদ্য জেলফেরত আবুল কালামকে অপহরণের জের ধরে একের পর এক সংঘর্ষ ও অপহরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে। স্বামীকে অপহরণের ঘটনায় স্ত্রী আবুল কালামের স্ত্রী নুর জাহান বেগম বাদী হয়ে গত শনিবার রাতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আব্দুল হামিদসহ ১১ জনকে আসামি করে উখিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এর পর থেকে অপহরণকারীরা আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

গত এক সপ্তাহ ধরে অপহরণ, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রেজিষ্ট্রাট ক্যাম্পের ই-ব্লকের মোহাম্মদ ফরিদ ও এফ ব্লকের নুর হাশিম, মাষ্টার মুন্না এবং আনরেজির্ষ্ট্রাড ক্যাম্পের নেতা রফিক উদ্দিন, হাফেজ জাবেদ ও সাইফুলের মধ্যে অন্তঃকোন্দল শুরু হয়। এর পর থেকে ক্যাম্পের পরিবেশ অশান্ত হয়ে ওঠে।

তবে কুতুপালং রেজিষ্ট্রার্ড ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত এপিবিএনের পরির্দশক মো. সালেহ আহমদ পাঠান সাংবাদিকদের বলেন, ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মাঝে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে। বর্তমানে ক্যাম্পের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি করছেন তিনি।

গেল ৩ বছরে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কর্মকান্ডে স্থানীয়রা চরম উৎকন্ঠায় রয়েছেন। পরিকল্পিত উখিয়া চাই এর আহবায়ক সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছিলাম। এখনো যদি তাদের সন্ত্রাসী কাজ চলতে থাকে তাহলে তো আমরা ভয়ঙ্কর অন্ধকারের দিকে যাচ্ছি। অধিকাংশ রোহিঙ্গাই শান্তিপ্রিয়। কয়েক সন্ত্রাসী রোহিঙ্গার কারণে পরিবেশ ধ্বংস হতে দেয়া যায় না।

তিনি বলেন, তিন বছরে রোহিঙ্গাদের হাতেই অনেক রোহিঙ্গাই নিহত হয়েছেন। খুন, অপহরণ,চাঁদাবাজি ও রোহিঙ্গা নারীদের দিয়ে পতিতাবৃত্তি এবং মরণ নেশায় ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রোহিঙ্গারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাই আগামী প্রজন্মের নিরাপত্তার স্বার্থে শক্ত হাতে এদের দমন করা দরকার।

Exit mobile version