parbattanews

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেড় মাসে ৮ শতাধিক রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম, ৩০ হাজারের অধিক নারী গর্ভবতী

টেকনাফ প্রতিনিধি:

আরকান থেকে বিড়াড়িত আশ্রয় নেওয়া “বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক” এর মধ্যে ৩০ হাজারের অধিক গর্ভবতী নারী রয়েছে এবং দেড় মাসে ৮ শতাধিক শিশুর জম্ম হয়েছে।

গত ২৫ আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিশু জন্ম হয়েছে ৮ শতাধিক। আর প্রাথমিক হিসেবে গর্ভবতী রোহিঙ্গা নারী রয়েছে ৩০ হাজারের অধিক।  তাদের অনেকের কাছে ৫-৬ টি এমনকি ৮-১০ টি পর্যন্ত সন্তান রয়েছে।

রোহিঙ্গাদের মাঝে জন্ম নিয়ন্ত্রেনের ব্যবস্থা না থাকার এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আর এই সমস্যা যদি বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে অব্যাহত থাকে তা বড় ধরণের সমস্যার সৃষ্টি হবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে সংশ্লিষ্টরা জানান, অস্থায়ীভাবে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের জন্ম নিয়ন্ত্রনে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। জন্ম নিয়ন্ত্রনে ইনজেকশন, খাবার বড়ি এবং কনডম দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে ক্যাম্পে চালানো হচ্ছে জন্ম নিয়ন্ত্রনের প্রচারণা।

এ পর্যন্ত ১১ শত ৮০ জন নারীকে ৩ মাস মেয়াদের জন্মনিয়ন্ত্রন ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রন বড়ি খাওয়ানো হয়েছে ১ হাজারেরও বেশি নারীকে। আর ১৫ এর অধিক কনডম দেওয়া হয়েছে পুরুষদের।

প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, মিয়ানমারে থাকাকালীন এসব রোহিঙ্গা নারীদের কাছে জন্মনিয়ন্ত্রনের খবর পৌছায়নি। যার ফলে তারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ সর্ম্পকে অবগত নন।

এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, সেটি মিয়ানমারের সমস্যা বা সেদেশের চিত্র। কিন্তু জনসংখ্যা বহুল ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য এই চর্চা কোনভাবে কাম্য নয়। তাই অস্থায়ীভাবে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা সেবা সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি জন্মনিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা করতে হবে। আর এটি জরুরী হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ মহল বলেন, বেশিরভাগ রোহিঙ্গা অজ্ঞ। তাই তারা জন্মনিয়ন্ত্রন সর্ম্পকে অবগত নয়। এছাড়া হয়ত মিয়ানমারে তাদেরকে এ বিষয়ে অবগত করা হয়নি। তাই খুব দ্রুত তাদেরকে জন্ম নিয়ন্ত্রনের ব্যাপারে অবগত করানো উচিত। আবার পুরাতন অনেক রোহিঙ্গাদের কাছে জন্ম নিয়ন্ত্রনের বার্তা পৌছানো হলেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছেনা। ফলে বরাবরই রোহিঙ্গা নারীদের শিশুর সংখ্যা বেশি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) টেকনাফ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জানান, মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে এদেশে থাকতে দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসাসহ নানা ভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাই বলে এই নয় যে জনবহুল দেশে অপরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গার সংখ্যা বাড়তে থাকুক। তার জন্য সংশ্লিষ্ট  কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদেরও সচেতন থাকতে হবে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. পিন্টু কান্তি ভট্টাচার্য্য জানান, মন্ত্রানালয়ের সিন্ধান্তে শুধু পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের জন্ম নিয়ন্ত্রন সহ অন্যান্য চিকিৎসা সেবা প্রদানে ৭ টি মেডিকেল টিম করা হয়েছে। তার মধ্যে ৪টি উখিয়ায় এবং ৩টি টেকনাফে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ২০০ জন।

তারা ক্যাম্পে ক্যাম্পে গিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্ম নিয়ন্ত্রন সর্ম্পকে অবহিত করছে। ৩ পদ্ধতিতে তাদের জন্ম নিয়ন্ত্রন করানো হচ্ছে, একটি হল ৩ মাস মেয়াদী ইনজেকশন, জন্ম নিয়ন্ত্রন বড়ি ও কনডম। গতকাল পর্যন্ত ১১ শত রোহিঙ্গা নারীকে ইনজেকজন দেওয়া হয়েছে। খাওয়ার বড়ি দেওয়া হয়েছে ১ হাজারেরও বেশি নারীকে। আর কনডম দেওয়া হয়েছে ৯ শত এর বেশি। রোহিঙ্গাদের জন্ম নিয়ন্ত্রন নিয়ে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ সফলতার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে।

Exit mobile version