parbattanews

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা

উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে দেশি-বিদেশি নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে যে কোন সময় অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে বলেও মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল। তাই রোহিঙ্গাদের স্বদেশভূমি মিয়ানমারে যথাসম্ভব দ্রুত প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান বলেই মনে করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের পশ্চিমাংশের নাগরিক হলেও ইতিহাসের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের মূখে তারা আজ বাস্তুচ্যুত। সর্বশেষ ২০১৭ সালের আগষ্ট-সেপ্টেম্বরে সেনাবাহিনী ও মঘ দস্যুদের পরিকল্পিত রোহিঙ্গা নির্মূল অভিযানে ব্যাপক হারে রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে বাংলাদেশ পালিয়ে আসে। বাংলাদেশ সরকার মানবিক বিবেচনায় তাদের আশ্রয় দেয়।

উখিয়া-টেকনাফের ৩৪ টি ক্যাম্পে ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা এখন বসবাস করছে। প্রায় আট হাজার একর বনভূমিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প বিস্তৃত। সরকার দেশী-বিদেশী সহায়তায় রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। ত্রাণ সহায়তায় শৃঙ্খলা বিধানে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। ক্যাম্পে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ১০ টি পুলিশ ক্যাম্পও স্থাপন করেছে সরকার। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে মিয়ানমারের সাথে দ্বিপাক্ষিক এবং কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি চীন সফরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে চীনের সহযোগিতা কামনা করেছেন এবং তিনি এ বিষয়ে চীনের সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন। কিন্তু ১৯৮২ সালের কুখ্যাত নাগরিকত্ব আইনে মিয়ানমারের সংবিধানে রোহিঙ্গাদের সবধরনের মৌলিক অধিকার অস্বীকার করা হয়েছে। এমনকি ওই আইনে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বও অস্বীকার করা হয়। এখন রোহিঙ্গারা দেশে ফিরতে চাইলেও ওই কালো আইনের কারণে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের সহজে ফিরিয়ে নিতে পারছেনা বলে বাহানা করছে। আর রোহিঙ্গা কেন্দ্রিক বিষবাষ্পের সূত্রপাত এখানেই।

এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দাবী জোরদার হয়ে উঠলেও নানা কারণে তা অগ্রগতি হচ্ছেনা। এখন এনিয়ে শুরু হয়েছে বহুমূখী ষড়যন্ত্র। সাধারণ রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরতে চাইলেও ১৯৮২ সালের ওই কালা কানুনের কারণে তারা সহজে ফিরতে পারছেনা। একই কারণে মিয়ানমারও রোহিঙ্গাদের সহজে ফিরিয়ে নিতে পারছেনা। এই সুবাদে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে এক শ্রেনীর রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

তারা জোরদার করে তুলেছে প্রত্যাবাসন বিরোধী তৎপরতা। আর তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদ দিচ্ছে কিছু দেশী বিদেশী এনজিও।

খবর নিয়ে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ দিনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে থাকলেও রাতে ক্যাম্পর নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ওই সন্ত্রাসীদের হাতে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক ওই সন্ত্রসী গ্রুপটিই মূলত এখন নিয়ন্ত্রণ করছে গুম, খুন, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা ও প্রত্যাবাসন বিরোধী তৎপরতা। তাদের হাতে ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গারা জিম্মী বলে জানা গেছে। এদের কারণে কয়েকশ সন্ত্রাসী ঘটনা, শতাধিক গুম-খুনসহ ঘটছে নানা অপরাধ কর্মকান্ড। ওরা রাতের বেলা ক্যাম্প ছেড়ে স্থানীয়দের সাথে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে।

এমনিতেই বাংলাদেশের জন্য বিষফোঁড়া রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় জনসাধারনের জীবন বিপন্ন। এর উপর রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দীর্ঘসূত্রিতা আরো বেশী ক্ষুদ্ধ করে তুলেছে স্থানীয়দের। এখন স্থানীয়দের দাবী, দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জোরদার করা, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের উত্থান কঠোরভাবে দমন করা ও রোহিঙ্গাদের বিচরণ নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পের চারপাশে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে তাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রাখা।

জানা গেছে, এ সব বিবেচনায় আজ (৯ জুলাই) মঙ্গলবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসছেন পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব প্রধানসহ চার বাহিনী প্রধান।

Exit mobile version