রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার ফতোয়াদাতা আরসা নেতা কারাগারে মৃত্যু

fec-image

কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যার ফতোয়াদাতা ও মামলার অন্যতম আসামি মৌলভী জকোরিয়া (৫৩) চট্টগ্রামে কারাগারে মারা গেছেন। শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়ান মোহাম্মদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মৌলভী জকোরিয়া উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ১-ইস্ট, ব্লক ডি/৮-এর বাসিন্দা মৃত আব্দুল করিমের ছেলে (এফসিএন নম্বর ১৪৭৯৬৭)। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন।

কক্সবাজার কারাগারের জেলার কামাল উদ্দিন বলেন, ‘জকোরিয়া মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার ১৪ নম্বর আসামি। তাঁকে কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

চট্টগ্রাম কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়ান মোহাম্মদ জানান, শুক্রবার মধ্যরাতে কারাগারে প্রাথমিক চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। তাঁকে কয়েক দিন আগে চট্টগ্রাম কারাগারে আনা হয়।

২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ায় লাম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একদল দুর্বৃত্তরা আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে পালিয়ে যায়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের সপ্তাহ খানেক আগে আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহকে পৃথিবীকে সরিয়ে দেওয়ার ফতোয়া দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান মৌলিভী জকোরিয়া। চলতি বছরের ৫ মার্চ মহিবুল্লাহকে হত্যার ফতোয়া দেওয়ার অভিযোগ এনে উখিয়ার লম্বাশিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ১৪ এপিবিএন।

গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্থিরতা তৈরির মদদদাতাদের একজন শীর্ষ পরামর্শক হিসেবে জকোরিয়াকে বিবেচনা করা হয়।

রোহিঙ্গাদের কথিত উগ্রপন্থী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির (আরসা) ওলামা কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে আরসা প্রধানের নির্দেশনায় মহিবুল্লাহকে হত্যার জন্য ফতোয়া দেওয়ার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্বীকার করেন জকোরিয়া।

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের উত্তর মংডুর বাসিন্দা মৌলভি জকোরিয়া ২০১৫ সালে বাংলাদেশে এলেও পরে মিয়ানমারে ফিরে যান। ২০১৭ সালের আগস্টে আবার অনুপ্রবেশ করে লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেন।

২০১৯ সালে তাঁকে নিজেদের ফতোয়া বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব দেয় আরসা। এরপর ২০২০ সাল থেকে আরসার ধর্মীয় শাখা ওলামা কাউন্সিলের কুতুপালং এলাকার প্রধান কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন জকোরিয়া।

এদিকে, গত ১১ সেপ্টেম্বর মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার আসামিদের বিচার শুরু হয়েছে। এর আগে ১৩ জুন ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।

মুহিবুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান ছিলেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বড় ভূমিকা ছিল তাঁর। ঘটনার পর ১৫ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার মধ্যে ৬ জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। সাড়ে আট মাস তদন্তের পর ওই দিন দুপুরে ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট আদালতের ডকেট শাখায় জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও উখিয়া থানার ওসি তদন্ত গাজী সালাউদ্দিন।

২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ায় লাম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একদল দুর্বৃত্তরা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে পালিয়ে যায়। এরপর তাঁর ভাই হাবিবুল্লাহ মামলা করেন। তাতে অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। তিনি হামলাকারী কয়েকজনকে চেনার কথা সাংবাদিকদের জানালেও মামলায় আসামির তালিকায় কারও নাম দেওয়া হয়নি সে সময়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আরসা, কারাগার, মুহিবুল্লাহ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন