parbattanews

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কাল বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার

প্রতীকী ছবি

পাইলট প্রকল্পের আওতায় চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কিছু রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে মিয়ানমারের দিক থেকেও সম্মতি থাকায় নেপিদোতে সোমবার মহাপরিচালক পর্যায়ের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

ঢাকা ও নেপিদোর কূটনৈতিক সূত্রগুলো থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, চীনের মধ্যস্থতায় যেকোনো সময়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করতে রাজি আছে মিয়ানমার। তবে অতীত অভিজ্ঞতা বিবেচনায় হিসাব-নিকাশ কষেই প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় ঢাকা। মিয়ানমারে হতে যাওয়া মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠকে শুরুতে কত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করতে চায় নেপিদো, প্রত্যাবাসন শুরুর পর পরবর্তী ব্যাচ শুরুর প্রক্রিয়া এবং রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফেরার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের উদ্যোগ, বিশেষ করে রোহিঙ্গা ফেরত যাওয়ার আস্থা অর্জনের বিষয়ে জোর দেবে ঢাকা।

নেপিদোর একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ২ সেপ্টেম্বর একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে নেইপিদো গেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির। ৪ সেপ্টেম্বর প্রত্যাবাসন শুরু করাসহ রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই নিয়ে আলোচনা করতে দুই দেশের মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠক হবে। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ফিরতি সফরে তাদের রাখাইনে ফেরানো নিয়ে মনোবল বাড়াতে নেইপিদোর একটি প্রতিনিধিদলের কক্সবাজারে কবে নাগাদ আসবে, তা চূড়ান্ত হবে।

ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, নির্বাচনের আগে কিছু রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করতে চায় সরকার। এখনও নিশ্চিত করে বলা যাবে না, ঠিক কবে থেকে এটা শুরু হবে। মিয়ানমারে মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠকের পর নেপিদোর একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজার সফর করবে। যেসব রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় রাখাইনে যেতে চান, তাদের তালিকা চূড়ান্ত হলে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল এসে তার জন্য কাজ করবে। মূলকথা মনোবল বৃদ্ধি, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। এ বৈঠক থেকে প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্ত হবে এমনটা ভাবা ঠিক হবে না, এরপরও পর্যায়ক্রমে বৈঠক চলবে। এটা একটা প্রক্রিয়া।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, পাইলট প্রকল্পের আওতায় তিন হাজার রোহিঙ্গাকে রাখাইনে প্রত্যাবাসন করার জন্য তালিকা করেছে সরকার। এদের মধ্য থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হলে প্রথম ব্যাচে হাজারখানেক রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ একই পরিবার এবং এলাকার রোহিঙ্গাদের পাঠানোর পক্ষে।

ঢাকার জ্যৈষ্ঠ এক কূটনীতিক বলেন, চীন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা নিয়ে খুবই আন্তরিক। মিয়ানমারের আন্তরিকতা দেখে ইতিবাচক মনে হচ্ছে। তবে প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়া অবধি অপেক্ষা করতে হবে। এর আগেও কিন্তু প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা করেও কিন্তু সফলতা আসেনি। সেজন্য আমাদের সতর্কতার সঙ্গে পা বাড়াতে হবে। প্রত্যাবাসন আমাদের মূল অগ্রাধিকার।

চীনের মধ্যস্থতায় গত চার থেকে পাঁচ মাসে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। এসময়ে পশ্চিমা দেশ এবং সংস্থাগুলো প্রত্যাবাসন শুরু না করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। এতে করে বিব্রত পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে ঢাকা। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে রেখে দেওয়ার প্রস্তাব আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে। জবাবে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের রেখে দেওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে।

রোহিঙ্গাদের রেখে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের অগ্রাধিকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন। রোহিঙ্গাদের রেখে দেওয়ার প্রস্তাবে বাংলাদেশ কখনো রাজি হবে না। বরং যারা এ ধরণের প্রস্তাব দিচ্ছে, তাদের উচিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুতে ভূমিকা রাখা। তাছাড়া তারা তো চাইলে কিছু রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসন করতে পারে। এতে করে আমাদের ওপর থেকে কিছুটা চাপ কমত।

Exit mobile version