parbattanews

রোহিঙ্গা ফেরানোর নীতিতে অবস্থান বদল করলো চীন

রোহিঙ্গা ক্যাম্প: ফাইল ছবি

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ‘যেকোনো উপায়ে’ রাখাইনে ফেরত পাঠানোর কাজ শুরু করতে এত দিন যে তাগিদ দিয়ে আসছিল চীন এখন সে নীতি থেকে সরে এসেছে। আবার যেনতেন উপায়ে প্রত্যাবাসনে বাগড়া দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা কয়েকটি দেশ, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসা চীনের এশিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত দেং সিজুন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে দেশটির দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তনের আভাসই দিলেন।

সোমবার (৩১ জুলাই) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে আলোচনায় দেং সিজুন স্বীকার করেন, প্রত্যাবাসন টেকসই হতে হলে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য পরিবেশ অনুকূল হতে হবে। আর তাদের ফেরাও স্বেচ্ছায় হতে হবে।

অনেকটা চুপিসারে এই সফর শেষে গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঢাকা ছেড়েছেন চীনের এই বিশেষ দূত।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে চীনের অবস্থান পরিবর্তনের সঙ্গে মিয়ানমারের ভেতর-বাইরে দেশটির সামরিক জান্তার অবস্থা ও ভাবমূর্তি এবং ফিরে যাওয়া নিয়ে রোহিঙ্গাদের আগ্রহ বাড়তে থাকার সম্পর্ক আছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সাবেক চেয়ারম্যান মুন্সি ফয়েজ আহমেদ।

চীনের অবস্থানের পরিবর্তন ইতিবাচক বলে মনে করেন দেশটিতে বাংলাদেশের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া আরও গতিশীল করতে হবে। আর রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিবেশ তৈরির জন্য মিয়ানমার যেসব অঙ্গীকার করবে, সেগুলো যাতে বাস্তবায়িত হয়, তা নিশ্চিত করাও চীন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থায় রোহিঙ্গাদের ফেরানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলাপের জন্য বাংলাদেশে আসার আগে দেং সিজুন মিয়ানমার গিয়েছিলেন। দেশটির সরকারি মুখপত্র দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারের তথ্য অনুযায়ী, ওই সফরে তিনি মিয়ানমারের সেনাশাসক মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। মিয়ানমারের শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি রাখাইন ছেড়ে যাওয়া ‘প্রবাসীদের’ ফেরানোর প্রস্তুতির বিষয়ে তাঁরা কথা বলেন।

রোহিঙ্গাদের উল্লেখ করতে গিয়ে মিয়ানমারের সরকারি মুখপত্রে ‘প্রবাসী’ শব্দটির ব্যবহারও সম্প্রদায়টির পরিচয় প্রকাশের ক্ষেত্রে দেশটির সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির নড়চড় হওয়ার প্রমাণ বলে মনে করছেন বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা। তাঁরা বলছেন, অং সান সু চির সরকারের সময় রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয় প্রকাশের ক্ষেত্রে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার না করে ‘রাখাইনের মুসলিম’ বলা হতো।

কূটনীতিকেরা জানান, তিন দেশ পরীক্ষামূলক প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ১৭৬ জন রোহিঙ্গাকে পাঠানোর প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছে। তবে যেনতেন উপায়ে প্রত্যাবাসনে শুরু থেকেই বাগড়া দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা কয়েকটি দেশ, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি না হওয়ায় এবং খানিকটা পশ্চিমা দেশগুলোর চাপে সরকার প্রত্যাবাসন শুরুর ক্ষেত্রে কিছুটা ধীরে চলছিল।

চীনা উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে রোহিঙ্গাদের পাঠানোর বিষয়টি জুলাইয়ের মাঝামাঝি মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়াকে তাঁর ঢাকা সফরের সময় জানানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।

যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে কিছু মতামত দিয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, সরকার এমন কিছু করবে না, যাতে রোহিঙ্গাদের বিপন্ন হতে হয়।

মার্কিন এই কর্মকর্তা ১৩ জুলাই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় মিয়ানমার ফিরে যাবার মতো পরিস্থিতি এই মুহূর্তে নেই।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ঢল শুরুর হওয়ার পর বাংলাদেশ অনেকটা তড়িঘড়ি করে একই বছর নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে। প্রতিদিন ৩০০ মানুষ এই চুক্তির আওতায় রাখাইনে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা রয়েছে। তবে এ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার আওতায় সেখানে ফিরে যায়নি বলে কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পুরোনো ৩৭ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গাসহ বাংলাদেশে বর্তমানে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা আছে ৯ লাখ ৬০ হাজার ৫৩৯ জন। সরকারি সূত্রগুলোর তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের সঙ্গে শিথিল সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের আসা অব্যাহত থাকার সুযোগে অনিবন্ধিত বেশ কয়েক হাজার রোহিঙ্গাও বাংলাদেশে আছে। সূত্র: আজকের পত্রিকা

Exit mobile version