parbattanews

রোহিঙ্গা শিশুদের হাতে হাতে ‘বন্দুক’

সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে উৎসব ও আনন্দের মধ্যদিয়ে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে ক্যাম্পে সবচেয়ে বেশি আনন্দে মেতে রয়েছেন রোহিঙ্গারা শিশুরা। ক্যাম্পের রাস্তায় রাস্তায় বসেছে অস্থায়ী দোকানপাট। সেখানে বিক্রি হচ্ছে প্লাস্টিকের খেলনার বন্দুক। যার ক্রেতা হচ্ছে রোহিঙ্গা শিশুরা। এসব খেলনার বন্দুক নিয়ে একে অপরকে ভয় দেখাচ্ছে এবং দৌড়াদৌড়ি করছে।

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্যাম্প ঘুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাম্পগুলোর প্রবেশদ্বারে বেলুন আর ঈদ মোবারক লেখা ব্যানারে গেইট বানিয়ে রঙ-বেরঙের কাগজ দিয়ে সাজানো হয়েছে। এসব ক্যাম্পে শিশুরা সকাল থেকেই সেজেগুজে, নতুন জামা-কাপড় পরে ক্যাম্পের রাস্তায় হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দে মেতে উঠেছে। তবে শিশুরা প্লাস্টিকের খেলনা বন্দুক হাতে নিয়ে ঘোরাঘুরি ও নাগরদোলায় চড়ে আনন্দ উপভোগ করছে। আবার অনেকে নতুন জামা, গেঞ্জি, মাথায় টুপি ও চশমা পরে দল বেঁধে আনন্দে মেতে উঠছে।

কুতুপালং ক্যাম্প ৫ এ রোহিঙ্গা শিশু রাবেয়া (১০) ও কুলছুমা (১২) বলেন, আজ সারাদিন ঘুরে বেড়াবে। প্রচণ্ড রোদের কারণে বেশি আইসক্রিম আর চকলেট খাব, আর দোলনা চরব।

এদিকে উখিয়ার প্রতিটি ক্যাম্পে রাস্তার পাশে অস্থায়ীভাবে দোকান বসিয়ে প্লাস্টিকের খেলনা ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের বন্দুক বিক্রি করছে দোকানিরা। এসব দোকানে শিশুদের ভিড় দেখা যায়।

লম্বাশিয়া ক্যাম্প-১ এর রাস্তার পাশে খেলনা বিক্রেতা রফিক বলেন, ‘ঈদের সময় আসলে আমরা কয়েকজন মিলে প্লাস্টিকের বিভিন্ন ধরনের খেলনা বিক্রি করে থাকি। ঈদের তিন দিন এ ব্যবসা চলবে। অন্য বছরের তুলনার এবার বিক্রি বেড়েছে।

এসব খেলনার মধ্যে প্লাস্টিকের বন্দুকই দেখা গেছে বেশি। এ বিষয়ে এই ব্যবসায়ীর ভাষ্য, ‘শিশুরা বন্দুক নিয়ে খেলতে বেশি পছন্দ করে।’
খেলনা বন্দুক দিয়ে খেলাধুলায় শিশুদের মনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।

রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের কুতুপালংস্থ ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, ক্যাম্পে অস্থায়ী দোকান বসানো সম্পূর্ণ নিষেধ। কিন্তু রাস্তার পাশে এভাবে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে যেভাবে শিশুদের খেলনার বন্দুক বিক্রি করছে এটা কোনোভাবেই উচিত নয়। কারণ এসব শিশুরা মিয়ানমারে অস্ত্রের ব্যবহার দেখেছে, কিভাবে তাদের স্বজনদের হত্যা করা হয়েছে এসব অস্ত্রের মাধ্যমে। এটা শিশুদেরকে সামনের দিনগুলোতে অস্ত্র ব্যবহারে প্রলুব্ধ করবে। যা দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এদিকে ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এপিবিএন বলছে, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঈদে উপলক্ষে নজরদারিতে রাখা হয়েছে ক্যাম্পগুলো। উখিয়াস্থ ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক মো. আমির জাফর বলেন, ক্যাম্পে অস্থায়ী দোকানপাট বসিয়ে শিশুদের খেলনার বন্দুক বিক্রি করা হচ্ছে। এটা শিশুদেরকে অস্ত্রের প্রতি আগ্রহী করে তুলবে। বিশেষটি নজরে এসেছে এবং এখন অস্থায়ী দোকান-পাট যেসবে খেলনার বন্দুক বিক্রি করা হচ্ছে তা উচ্ছেদ করা হচ্ছে।

মো. আমির জাফর আরও বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে সকল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঈদের নামাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঈদে উপলক্ষে নজরদারিতে রাখা হয়েছে ক্যাম্পগুলো।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। সবমিলিয়ে এখন উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্প ও ভাসানচরে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের বসবাস। তারা এ পর্যন্ত ৭টি ঈদ কাটিয়েছেন ক্যাম্পে।

রোহিঙ্গাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের ৩২টি ক্যাম্পে অবস্থিত ৩ হাজারের মতো মসজিদ ও নূরানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব মসজিদ ও নূরানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন রোহিঙ্গারা।

Exit mobile version