parbattanews

রোহিঙ্গা সংকটে ভারতের অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশের জনমনে ক্ষোভ তীব্র

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমার থেকে গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশ অভিমুখে শরণার্থীর ঢল নেমেছে। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অতি সম্প্রতি মিয়ানমার সফরে গিয়ে এই ইস্যু নিয়ে কোন কথা বলেননি। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের জনমনে। দেশটির সরকারেও এ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তীব্র চাপে থাকা মিয়ানমার সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে ভারত। কিন্তু দিল্লি’র এই সমর্থন শেখ হাসিনা সরকারের জন্য এক অসম্ভব সমস্যা তৈরি করেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রথম এত বিপুল সংখ্যক শরণার্থী নিয়ে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা জনিত গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হলো।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশের জনমনে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি এবং ঢাকার কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে নয়া দিল্লি তার অবস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুকে একটি সংকট বলে এখন তারা স্বীকার করছে।

কয়েক দিন আগে মিয়ানমারের কার্যত নেত্রী অং সাং সু চি’র পাশে দাঁড়িয়ে মোদি বলেন যে দিল্লি ও নেপাইথো পরস্পরের সঙ্গী। তারা রাখাইন রাজ্যে “চরমপন্থী সহিংসতায়” জীবনহানীতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ভারত-মিয়ানমার যৌথবিবৃতিতে ভারতের ওই অবস্থানের প্রতিফলন ঘটে। তাতে শুধু রোহিঙ্গা জঙ্গিরা সহিংসতা করছে বলে উল্লেখ করা হয়।

মোদি’র এই বক্তব্য মিয়ানমারের ব্যাপারে ভারতের অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। কিন্তু ভারত এমন এক সময় মিয়ানমার থেকে এই বিবৃতি দেয় যখন সীমান্তের ওপার থেকে শরণার্থীর ঢল সামলাতে বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে।

গত শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্করের সঙ্গে তার সাউথ ব্লকের অফিসে গিয়ে সাক্ষাত করেন এবং রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। প্রবীণ এই কূটনীতিক দি ওয়্যার’কে বলেন, “আমি দ্বিপাক্ষিক ইস্যু এবং নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমণের বিষয়টি তাকে অবহিত করেছি।”

জাতিসংঘের হিসেবে মাত্র দুই সপ্তাহে ৩,০০,০০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর ফাঁড়িতে জঙ্গি হামলার জেরে সেখানে সেনাবাহিনী দমন অভিযান শুরু করলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলেন, “এরা মিয়ানমারের নাগরিক। এদেরকে ফিরিয়ে নিতে হবে মিয়ানমারকে। তারা যেন সেখানে শান্তি ও পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারে। শরণার্থীরা প্রতিবেশি যেকোন দেশে আশ্রয় নিতে পারলেও তা সাময়িক। দীর্ঘ-মেয়াদি একমাত্র সমাধান হলো তাদেরকে মিয়ানমারে পুনর্বাসন।”

মাঠের এ বাস্তবতা মিয়ানমার সরকারকে বুঝানোর জন্য আঞ্চলিক প্রতিবেশী দেশগুলোকে তাদের সুসম্পর্কটিকে কাজে লাগাতে হবে বলেও এই রাষ্ট্রদূত মনে করেন।

মিয়ানমারের সমর্থনে ভারতের বিবৃতি বাংলাদেশ আমলে নিয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করা হলো নয়াদিল্লি তার অবস্থান পরিবর্তন করবে বলে আলি ইংগিত দেন।

জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের কয়েক ঘন্টার মধ্যে আলি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন যে, ভারত মিয়ানমারের ব্যাপারে তার প্রকাশ্য অবস্থান বদল করবে বলে তিনি আশা করছেন। পরে ওই দিন রাতে ভারত ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি’ নিয়ে নতুন করে বিবৃতি দেয়। ওই বিবৃতিতে প্রথমবারের মতো ভারত শরণার্থী সমস্যার কথা স্বীকার করে। দেশটির বক্তব্য তখন আর শুধু রোহিঙ্গা জঙ্গিদের সৃষ্ট সহিংসতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি।

ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতিতে বলা হয়,“রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি এবং এই অঞ্চলে শরণার্থীর বহির্মুখি প্রবাহ সৃষ্ট হওয়ায় ভারত গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।”

বিবৃতির পরের তিনটি অনুচ্ছেদে প্রধানমন্ত্রীর মিয়ানমার সফরের বিবরণ ও বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করা হলেও এতে নতুন কিছু বক্তব্য সংযোজন করা হয়। তাতে ভারত “সংযম ও পরিপক্কতা’ প্রদর্শনের জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানায় এবং “বেসামরিক জনগণের কল্যাণের” প্রতি মনযোগ দেয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেয়।

মিয়ানমারে মোদির সফর এবং তার বিবৃতি বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় এবং তা দেশটির জনমনে গুরুতর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। আকস্মিক শরণার্থী স্রোত, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে লিয়ে দেয়ার খবর হাসিনা সরকারকে চাপে ফেলে দেয়।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের “অত্যন্ত তীব্র” জনমত তৈরির খবর দিল্লি’র সাউথ ব্লকে আসছিলো আলি’র সাক্ষাতের আগের দু’দিন ধরে। এই বিরূপ জনমত নয়া দিল্লি-ঢাকা সম্পর্কের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলবে বলে আশংকা তৈরি হয়।

সূত্র মতে সাউথ ব্লকের বৈঠকে বাংলাদেশ হাই কমিশনার দিল্লি’র কাছে সুনির্দিষ্ট কোন দাবি উত্থাপন করেননি। কিন্তু ভেতরের ভাষাটি ছিলো স্পষ্ট: “আমরা ওই উদ্বেগগুলো তুলে ধরছি। এই বিবৃতি তার প্রথম পদক্ষেপ।”

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্কে রোহিঙ্গা ইস্যুটি দীর্ঘদিন ধরে ছায়াপাত করে আছে। মিয়ানমারের রাখাইন ও শিন রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের ২৭১ কি.মি. সীমান্ত রয়েছে। এর আগেও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমণ ঘটেছে। কিন্তু এবারের সংখ্যাটি আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

মিয়ানমার ১৯৭৪ ও ১৯৮২ সালে দুই দফা আইন করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়। ১৯৭৮ সালে মিয়ানমারে আদমশুমারির আগে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা বিতাড়ন শুরু করে। তখন দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এরপর ১৯৯১ সালে ফের মিয়ানমার সেনাবাহিনী বিতাড়ন অভিযান শুরু করলে আরো আড়াই লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তবে, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দু’বারই কিছু রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে বাধ্য হয় মিয়ানমার।

বাংলাদেশ হাই কমিশনার আরো বলেন যে, আমাদের এই অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকা তার বন্ধুদের কাছ থেকে সাহায্য চায়। তিনি ইংগিত দেন যে, শরণার্থী আগমনের ফলে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। কারণ তা ইসলামিস্ট গ্রুপগুলোর নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করবে।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। তাই সন্ত্রাসীদের সম্ভাব্য জনবল সংগ্রহের ক্ষেত্র হিসেবে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে দীর্ঘ সময়ের জন্য নিজ মাটিতে আশ্রয় দিয়ে রাখা ঢাকার জন্য কোন সুখবর নয়।

গত ২৬ অক্টোবর ভোররাতে রাখাইনের সীমান্ত এলাকায় কিছু পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ)। গত বছর অক্টোবরেও মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশের ওপর হামলার জন্য এই গ্রুপটিকে দায়ি করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মতে, ২০১২ সালে রাখাইনে দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর এআরএসএ সংগঠিত হয়। আগে এর নাম ছিলো হারাকাহ আল-ইয়াকিন। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ভারতের অবস্থানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তীব্র হতে থাকে।

বিবেকানন্দ ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের সম্মানিত ফেলো করিম বলেন, “বাংলাদেশ যে মানবিক ও নিরাপত্তা সমস্যায় ভুগছে তা ভারত আমলে নিচ্ছে না বলে বাংলাদেশের আমি প্রচুর বক্তব্য শুনেছি। এই দুই মাথার জন্তুটিকে সামলাতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “ভারত মিয়ানমারে তার কৌশলগত  লক্ষ্যগুলোকেই গুরুত্ব দিচ্ছে – বাংলাদেশে বিশেষভাবে এমন ধারণা তৈরি হয়েছে। ভারত তার নিজের স্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে বাংলাদেশের কৌশলগত সমস্যাগুলো আমলে নিচ্ছে না। তাই দেশটির জনগণ বলতে শুরু করেছে যে আমরা ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগ কমানোর জন্য অনেক কিছু করেছি। কিন্তু এখন যখন আমাদের নিরাপত্তা সমস্যা দেখা দিয়েছে তখন ভারত দূরে সরে থেকে শুধু নিজের নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে।”

চলতি বছর এপ্রিলে শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে দু’দেশের মধ্যে ব্যাপক দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা সহযোগিতার কথা উল্লেখ করা হয়।

করিম বলেন, “আমি অবাক হবো না বাংলাদেশীরা এখন যদি বলতে শুরু করে যে ঠিক আছে ভারতীয়রা যখন আমাদের প্রতি সহযোগিতা দেখাতে রাজি নয় তাহলে আমরা চীনের কাছে গিয়ে দেখি কিছু পাওয়া যায় কিনা।”

অন্যদিকে চীনও বলতে পারে “আমরা তোমাদের সাহায্য করবো কিন্তু এর জন্য কিছু ছাড় দিতে হবে। বাংলাদেশকে এভাবে এক কোণায় ঠেলে দেয়া ভারতের জন্য ঠিক হবে না।”

ভারত থেকে রোহিঙ্গাদের বহিষ্কার করা হবে বলে কেন্দ্রিয় সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যও বাংলাদেশী মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। ভারতের মিয়ানমার নীতি নিয়ে বিভিন্ন নিবন্ধে এসব বক্তব্য রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।

অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের জৈতা ভট্টাচার্য উল্লেখ করেন যে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ভারত এখন এমন সংকটে পড়েছে যা তার এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দু’দেশকেই ভারতের প্রয়োজন। ভারতের ‘লুক ইস্ট’ নীতি ও কানেকটিভিটি’র জন্যও তাদের দরকার। মিয়ানমারের প্রতি ভারতের সমর্থনের কারণে বাংলাদেশ ইসলামী ব্লকের দেশগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন।

ভারতের ব্যাপারে বাংলাদেশের মনোভাবে পরিবর্তন ঘটেছে বলে দেশটির নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ স্বীকার করেছেন। তবে, মুসলিম দেশগুলোর ব্যাপারে মনোভাব এখনো মিশ্র। এর বদলে জাতিসংঘ, পশ্চিমা বিশ্ব ও আসিয়ানের মুসলিম সদস্যদের দিকে ঢাকা ঝুঁকছে। ওআইসি থেকে দ্রুত ও কার্যকর সাড়া পেতে চায় ঢাকা। তুরস্ক, ইরান, ইরাক সাড়া দিলেও সৌদি আবর ও তার মিত্ররা এখনো নীরব। রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিজ চোখে দেখতে তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনে এরদোগান গত শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির সফর করে গেছেন।

রোহিঙ্গাদের এই দুর্দশা ভারত উপেক্ষা করায় তা বাংলাদেশে ইসলামী ও ভারত-বিরোধী মনোভাব জোরদার করেছে বলে রশিদ উল্লেখ করেন।

ভারতের সর্বশেষ বিবৃতি প্রসঙ্গে করিম বলেন যে এটা একটি নিরপেক্ষ অবস্থান। তবে তা দিয়ে বাংলাদেশকে সন্তুষ্ট করা যাবে কিনা সে বিষয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন।

রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনের দৃশ্যপটে প্রভাব ফেলতে পারে বলে সাবেক এই কূটনীতিকের আশংকা। আগামী বছরের শেষ দিকে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর তা বিগত নির্বাচনের মতো এক দলীয় হবে না, এমন ইংগিত পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গত এক সপ্তাহ ধরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ক্ষমতাসীন কোয়ালিশন সরকার ও ভারতের সমালোচনা করে চলেছে। গণজাগরণ মঞ্চের মতো নাগরিক আন্দোলনগুলো মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে, ইসলামপন্থী হেফাজতে ইসলাম বলেছে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ না হলে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর তারা মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও করবে।

বাংলদেশে জনরোষ ফুঁসতে থাকলেও রোহিঙ্গা শরণার্থী স্রোত শুরু হওয়ার পর প্রথম ১০ দিন দেশটির সরকার তুলনামূলক চুপ ছিলো। আসলে বাংলাদেশ সরকার তখন মোদি’র মিয়ানমার সফরের ফলাফল দেখার অপেক্ষায় ছিলো। মোদি’র সফরের ফলাফল পাওয়ার পর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রনীতি এখন রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে আন্তর্জাতিকীকরণের দিকে ঝুঁকেছে। গত কয়েক দিনে এটা স্পষ্ট হয়। ক্ষমতাসীন দলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে সরকার এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক প্রচারণা শুরু করবে।

গত ৮ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা ইস্যুতে ওয়ার্ল্ড পার্লামেন্টারি ফোরামের বালি ঘোষণায় স্বাক্ষর করতে ভারত অস্বীকৃতি জানায়। এতে বাংলাদেশ আরো ক্ষুব্ধ হয়। এর আগের দিন বিমসটেকের বিদায়ী মহাসচিব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করতে যান। ভারত এই ফোরামটিকে সার্ক-এর বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। কিন্তু বৈঠকে হাসিনা আকস্মিকভাবে রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন।

রোহিঙ্গা সমস্যার গুরুত্ব বুঝানোর জন্য শেখ হাসিনা যে ইচ্ছাকৃতভাবে বিমসটেক ফোরামে এই ইস্যু তুলছেন কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মনে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

সমস্যার একটি আপাত সমাধান হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ানমারের মধ্যে একটি ‘নিরাপদ জোন’ সৃষ্টির প্রস্তাব নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এই জোন প্রতিষ্ঠায় ভারত, জার্মানি, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক রেডক্রসকে পাশে চায় ঢাকা। ইস্যুটি জাতিসংঘে তোলারও প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদশে।

 

সূত্র: southasianmonitor

Exit mobile version