parbattanews

রোহিঙ্গা সমস্যা আলোচনায় আসছেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি:

রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য মঙ্গলবার বাংলাদেশে আসছেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি। রোববার ঢাকায় ইন্দোনেশিয়া দূতাবাসের এক কূটনীতিক এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

ইন্দোনেশীয় দূতাবাসের ওই কূটনীতিক জানান, রোববার রেতনো মারসুদি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তিনি এ সময় বাংলাদেশে আসার আগ্রহের কথা জানান। এর পাশাপাশি তিনি রোহিঙ্গা সমস্যায় বাংলাদেশের ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানান। রেতনো মারসুদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এও জানান যে, বাংলাদেশ সফরের আগে তিনি মিয়ানমার সফর করবেন। এ সময় তিনি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থিন কিউ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান এবং দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবেন।

সিঙ্গাপুরের চ্যানেল নিউজ এশিয়া জানায়, রোববার সন্ধ্যায় রেতনো মারসুদির মিয়ানমার চলে যাওয়ার কথা।

এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে মারসুদি বাংলাদেশ সফর করেন। গত বছরের অক্টোবর মাসে মিয়ানমারে রাখাইনের সীমান্তচৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার পর সশস্ত্র বাহিনী ব্যাপক নিধনযজ্ঞ শুরু করে। ওই ঘটনার পর বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। এ বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। সরকারি হিসাবে আরও প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা আগে থেকে বাংলাদেশে আছে। গত বছরের এই এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই রেতনো মারসুদি বাংলাদেশ এসেছিলেন।

ওই সফরের সময় রেতনো মারসুদি ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া তিনি কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গাদের একটি নিবন্ধিত শরণার্থীশিবির এবং একটি অস্থায়ী শিবির পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের দায়িত্ব নেওয়া উচিত বলে মনে করে ইন্দোনেশিয়া। কারণ, রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর যে মানবিক সংকটের শুরু, এর উৎস মিয়ানমারেই। কাজেই মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব নিতে হবে।

গত বছরের বাংলাদেশ সফরের আগে মারসুদি মিয়ানমারে গিয়ে অং সান সুচির সঙ্গে বৈঠক করেন।

গত বছরের অক্টোবরের পর গত ২৪ আগস্ট রাখাইনে আবার নতুন করে নিরাপত্তা বাহিনী ও মুসলিম বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। এতে অন্তত ৮৯ জন নিহত হয় বলে জানায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চির দপ্তর। এদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য এবং বাকিরা ‘জঙ্গি’ বলে জানায় তারা। বৃহস্পতিবারই জাতিসংঘের কফি আনান মিয়ানমারে উন্নয়ন সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জমা দেন।

ওই প্রতিবেদনে দেওয়া ৮৮ দফা সুপারিশের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়া এবং তাদের চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর একদিন না যেতেই নতুন করে সংঘাত শুরু হয়। নতুন করে সংঘাত শুরুর পর গত নয় দিনে অন্তত ৬০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে বলে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআর গতকাল শনিবার জানায়।

ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র ভিভিয়ান ট্যান বলেন, ‘এ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে আসা মানুষের আনুমানিক সংখ্যা ৫৮ হাজার ৬০০। এ সংখ্যা ক্রমে বাড়ছেই।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ পর্যন্ত আরাকানে অন্তত ৪০০ মানুষ নিহত হয়েছে। ১১ হাজার ৭০০ ‘জাতিগত অধিবাসী’ তাদের বাসস্থান ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার উপগ্রহ চিত্র পাওয়া গেছে।

Exit mobile version