parbattanews

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে গঠনমূলক পদক্ষেপ প্রয়োজন: জয়শংকর

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শংকর বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারের রাখাইনে ফিরে যেতে হবে। এ সমস্যার সমাধানে গঠনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। বৃহস্পতিবার বঙ্গোপসাগর ও এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে ভারত-জাপান সহযোগিতা বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।

এস জয়শংকর বলেন, দক্ষিণ এশিয়া এবং বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে ভারতের আচরণ দিল্লিকে এ অঞ্চলের প্রধান শক্তি হিসেবে তুলে ধরে না। বরং এতে দিল্লিকে উচ্চাভিলাষী নেতৃস্থানীয় শক্তি হিসেবে প্রতীয়মান হয়; যার কাঁধে আঞ্চলিক দায়িত্ব রয়েছে।

তিনি বলেন, রাখাইন থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষের বাংলাদেশমুখী স্রোত স্পষ্টতই উদ্বেগজনক। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, কিভাবে এই মানুষগুলো তাদের নিজ জন্মস্থানে ফিরতে পারেন সেই বিষয়টি দেখা। তবে এটা খুব সহজ কাজ নয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলছি।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, আমরা মনে করি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতির অপেক্ষাকৃত উন্নতি হতে পারে। খুব জোরালো ভাষায় নিন্দা করে অন্য ইস্যুতে যাওয়ার চেয়ে এটি অধিক মাত্রায় কার্যকর। তবে পালিয়ে আসা বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর জন্য এখন শান্ত, সংযত ও সংবেদনশীল পদক্ষেপ প্রয়োজন। যোগাযোগ, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং মানবিক প্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

আঞ্চলিক সংস্থা বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (বিমসটেক) নিয়েও কথা বলেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব। তিনি বলেন, বিমসটেকে একটি এজেন্ডা হচ্ছে মানবিক সাহায্য ও দুর্যোগজনিত ত্রাণ সরবরাহে সমন্বয় ও সহযোগিতা। আমরা চাই এ সংস্থার সদস্য দেশগুলোকে এ দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে মানবিক সাহায্যের ব্যাপারে একযোগে কাজ করবে।

গত তিন বছরে মালদ্বীপের পানি সমস্যা, ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে ভারতের অবস্থান এবং নেপালের ভূমিকম্পে ত্রাণ সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অপারেশন ইনসানিয়াতের মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ভারতের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়েছে। এগুলো পরাশক্তিসুলভ আচরণ নয়; বরং এতে দিল্লির নেতৃত্বের উচ্চাভিলাষের বিষয়টি উঠে এসেছে।

এদিকে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় দুই মাসে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪ হাজার।  এই সংকটের স্থায়ী সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি বাস্তুচ্যুতদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক সাহায্য আরো বাড়ানো দরকার বলে মনে করছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো।

২৫ আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের হামলার পর ক্লিয়ারেন্স অপারেশন জোরদার করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তখন থেকেই মিলতে থাকে বেসামরিক নিধনযজ্ঞের আলামত। পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশতে শুরু করে মৌসুমী বাতাসে। মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে শূন্যে ছুড়ে দেয় সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হয় তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় মানুষকে। সেই থেকে গত দুই মাসে বাংলাদেশে প্রবেশ করা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৬ লাখ ৪ হাজারে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন ইন্টারসেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ- আইএসসিজি।

আইএসসিজি বলছে, আশ্রিত অনেককেই এখনো খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ অতিপ্রয়োজনীয় সেবার বাইরে। তবে দিনে দিনে উন্নতি হচ্ছে পরিস্থিতির।

জাতিসংঘ সম্প্রতি প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য ৪৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে। এর তিন সংস্থার এক যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নিশ্চিতে সীমান্ত খুলে দিয়েছে। পালিয়ে আসা মানুষদের জন্য নিশ্চিত করেছে নিরাপত্তা আর আশ্রয়। রোহিঙ্গাদের প্রতি স্থানীয়দের আর্তি আর উদারতা আমাদের হৃদয়ে নাড়া দিয়ে গেছে। জাতিসংঘের মতে, এ অঞ্চলে কয়েক দশকের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বেশি সংখ্যাক ‘শরণার্থীর’ প্রবেশ। সোমবার ওই বিশ্বসংস্থাসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কুয়েতের উদ্যোগে সুইজার‍ল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত  আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি সম্মেলনে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা (৩৬০ মিলিয়ন ডলার) সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Exit mobile version