রোহিঙ্গা সাড়াদান কার্যক্রমে যুব অংশগ্রহণ আরো বৃদ্ধি করা জরুরি

fec-image

রোহিঙ্গা সাড়াদান কার্যক্রমে যুব অংশগ্রহণ আরো বৃদ্ধি করা জরুরি মনে করেছন কক্সবাজারের নাগরিক সমাজ।

বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে রবিবার (১৯ জুন) উখিয়ার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয় হল রুমে “শান্তির্পূণ সহাবস্থান নিশ্চিতকরণে এবং সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে যুব অংশগ্রহণ বৃদ্ধি” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এই মন্তব্য করেন।

প্রত্যাবাসনের আগ পর্যন্ত রোহিঙ্গা এবং স্থানীয়দের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখতে স্থানীয় যুবকদের আরো কার্যকর ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়েছেন তারা।

দেশের অন্যতম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ফাউন্ডেশন ইউএনএইসসিআর-এর আর্থিক সহায়তায় সামাজিক সংযোগ বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উখিয়া উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আইয়ুব আলী।

কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক ও আঞ্চলিক টিম লিডার জাহাঙ্গীর আলম।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ইউএনএইসসিআর-এর লাইভলিহুড অফিসার সুব্রত কুমার চক্রবর্তী ও সহকারী লাইভলিহুড অফিসার নাহিদ হাসান রাজু, রাজাপালং ৯ নং ওর্য়াড ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন, কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রিতা বালা দে, রাজাপালং ৪, ৫ ও ৬ নং ওর্য়াড মহিলা ইউপি সদস্য খুরশিদা হক এবং স্থানীয় বিভিন্ন যুব ক্লাবের সদস্যগণ। আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের মিজানুর রহমান বাহাদুর।

আইয়ুব আলী বলেন, যেকোন সংকটে এবং তার সমাধানে যুবকরা একটি গুরুত্বর্পূণ অংশ। রোহিঙ্গা সংকটে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ক্ষেত্রে আমাদের সবসময় খেয়াল রাখতে হবে যেন তারা বিপথগামী না হয়। এজন্য তাদের কর্মব্যস্ত রাখা জরুরি। সেক্ষেত্রে তাদের জন্য দরকার বাস্তবসম্মত প্রশিক্ষণ, কাজের সুযোগ তৈরি, খেলাধুলার আয়োজন এবং সামাজিক ইস্যুতে সচেতনতা বৃদ্ধি।

বিশ্ব শরণার্থী দিবসের বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করে সুব্রত কুমার বলেন, মানুষ হিসেবে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে এবং যেকোন মূহুর্তে প্রত্যেকের নিরাপত্তা লাভের অধিকার রয়েছে যা মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সামাজিক সংযোগ অত্যন্ত জরুরি। রোহিঙ্গা অগমনের পর থেকে এখন পর্যন্ত স্থানীয়দের আতিথেয়তায় এবং যুব সমাজের সম্পৃক্ততায় শান্তিপুর্ণ সহাবস্থান ও সামাজিক সংযোগ বিরাজ করেছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে রোহিঙ্গা সাড়াদান র্কাযক্রমে যুব অংশগ্রহণ আরো বৃদ্ধি করা জরুরি।

সভার সভাপতি এম এ মান্নান বলেন, একজন শরণার্থীর কি করুন অবস্থা তা আমরা রোহিঙ্গাদের দিকে তাকালে বুঝতে পারি। এই সংকট মোকাবেলায় যুবকদেরকে আরো শক্তিশালী হতে হবে। অপরাজনীতি, অপসংস্কৃতি এবং নিষিদ্ধ কাজের সাথে সম্পৃক্ত না হয়ে সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে সহযোগিতা করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

মেম্বার হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রত্যাবাসন দেরি হওয়াতে উভয়ের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই হতাশা যাতে ক্ষোভে পরিণত না হয় সে ব্যাপারে আমাদের সমসময় সচেতন থাকতে হবে। পাশাপািশ স্থানীয় যুবকদের কর্মদক্ষ জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তুলতে বাস্তবসম্মত প্রশিক্ষণ কর্মসুচি হাতে নেওয়ার আহবান জানান।

খুরশিদা হক বলেন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিতে স্থানীয় প্রতিনিধিরা কাজ করে যাচ্ছে এবং করবে। প্রত্যাবাসন যেন দ্রূত হয় সে বিষয়ে চতুর্মুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

রিতা বালা দে বলেন, শিক্ষা থেকে কাউকে বঞ্চিত রাখা উচিত না। রোহিঙ্গাদের মায়ানমারের নিজস্ব কারিকুলামে শিক্ষা কার্যক্রম আরো জোরদার করা উচিত বলে আমি মনে করি। কারণ যদি তারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়, যখন তারা দেশে ফেরত যাবে বয়সের কারণে তারা শিক্ষার আর সুযোগ পাবে না।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে জাহাঙ্গীর আলম যুবকদেরকে অনুপ্রেরণা দিয়ে বলেন, সবকিছুর আগে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে হবে। এই অঞ্চলের নেতৃত্ব দিতে হবে তোমাদেরকে। এমনভাবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে যেন সবাই তোমাদেরকে নিয়ে গর্ববোধ করে। তোমাদের নেতৃত্বেই সামাজিক সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত হবে।

স্থানীয় যুব সংঘের প্রতিনিধিরা বলেন, স্থানীয় যুব সম্প্রদায়কে বিভিন্ন সামাজিক কাজে উদ্বুদ্ধ করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে রোহিঙ্গা যুবকরা অধিকাংশই কর্মহীন বা নিজেকে ব্যস্ত রাখার সুযোগ নেই। রোহিঙ্গা সংকটে যুবকদের আরো বেশি অংশগ্রহণ বাড়াতে এনজিও, আইএনজিও, ইউএন এবং আন্তর্জাতিক মহলকে আহবান জানান যুব সংঘের প্রতিনিধিরা। এছাড়া তারা রোহিঙ্গাদের নিজের দেশপ্রেম এবং নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে র্কমসূচি হাতে নেওয়ার জন্য ইউএন এবং আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহবান জানান।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: যুব অংশগ্রহণ, রোহিঙ্গা, সাড়াদান কার্যক্রম
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন