parbattanews

রোহিঙ্গা হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা রুশনা শীলের

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

 

মিয়ানমারের সেনাদের নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন ও হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন হিন্দু রোহিঙ্গা রুশনা শীল। নিজের চোখের সামনে তিনি দেখেছেন মা-বাবা, ভাইবোনের হত্যাকাণ্ড। তিনি বলেন, সেনারা তার মা-বাবা, ভাইবোনকে প্রথমে গুলি করে। এরপর একে একে প্রত্যেকের গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং হিন্দু শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া রুশনা বৃহস্পতিবার দুপুরে যুগান্তরের এ প্রতিবেদকের কাছে এ লোমহর্ষক বর্ণনা দেন। রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা শতাধিক হিন্দু রোহিঙ্গা পরিবার উখিয়ার শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। রুশনা তাদের একজন।

রুশনা আরও জানান, তার পরিবারের সদস্যদের মতো অনেক হিন্দু পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করেছে সেনারা। হিন্দু ও মুসলমান সব রোহিঙ্গাকেই ভিটেমাটি ছাড়া করতে তারা হত্যা-নির্যাতন করছে। তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে আসতে না পারলেও নিজের জীবন বাঁচাতে নৌকায় ভেসে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন।

তিনি জানান, রাখাইনের চিকুনছুড়ি গ্রামের ফকিরাবাজার থানায় তাদের বাড়ি। চার বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। তিনি জানান, ঘটনার দিন রাতে হঠাৎ গুলির শব্দে তাদের ঘুম ভেঙে যায়। সেনারা তাদের বাড়ি ঘিরে ফেলে। অন্য ঘরে থাকায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান।

এ সময় মায়ের ঘরের জানালা দিয়ে ঘরের মধ্যে তিনি দেখেন কালো পোশাক পরা ১০-১২ জন সেনা। বাবা প্রদীপ, মা পঞ্চমালা, তিন বোন কাজল, রাধিকা, কৃষ্ণকলি ও দুই মাসের ভাই কৃষ্ণকে প্রথমে চোখ ও হাত বেঁধে গুলি ও মৃত্যু নিশ্চিত করতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের গলা কেটে ফেলে সেনারা। রক্তে ঘরের মেঝে ভেসে যায়।

রুশনা আরও জানান, এ দৃশ্য দেখে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ ঘটনার পর প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে এবং তাদের সঙ্গে পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন।

নির্যাতনের ভয়াবহতা তুলে ধরে রুশনা আরও বলেন, সংখ্যালঘু হওয়ায় তাদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা ছিল ভয়াবহ। তিনি বলেন, তার দুই মাসের ভাইও সেনাদের হিংস্রতা থেকে রক্ষা পায়নি। ওরা মানুষ না, মানুষখেকো সেনা, হায়ানার দল। এ কথা বলতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। বারবার আঁচলে চোখ মোছেন তিনি।

রুশনা আরও জানান, মিয়ানমারের সেনা আর ‘মারমা’ বা ‘মগ’ জনগোষ্ঠী মিলে হিন্দু রোহিঙ্গাদের গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে। প্রথমে গ্রামগুলো তারা ঘিরে ফেলে। এরপর সেনারা নির্বিচারে গুলি চালায়। গুলির পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলা কেটে ফেলে। এই ঘটনার পর তার স্বামীকেও আর পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

শুধু রুশনাই নন কুতুপালং হিন্দু শরণার্থী শিবিরে এমন অনেক নারীই আশ্রয় নিয়েছেন। সব হারিয়ে যাদের শেষ সম্বল এখন চোখের পানি। অনেক নারী ধর্ষণেরও শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে।

 

সূত্র: যুগান্তর

 

Exit mobile version