র‌্যাব যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে

ডেস্ক নিউজ:

এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) নতুন ইউনিট হচ্ছে তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে। এসব জেলায় খুন, গুম, সংঘর্ষ, অপহরণ, পাল্টা অপহরণ এবং চাঁদাবাজি ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে পার্বত্য জেলাগুলোতে র‌্যাবের ক্যাম্প স্থাপন নিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মানবজমিনে প্রকাশিত এক সংবাদে এ খবর দেয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠিটি চলতি বছরের ৬ই মার্চ র‌্যাবের কাছে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া দেশের দক্ষিণাঞ্চলে র‌্যাবের দুটি ব্যাটালিয়ন গঠনের বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব ও কাউন্সিলর অফিসার মো. আবদুল মালেক স্বাক্ষরিত প্রতিবেদন সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটিকে দেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এক-দশমাংশ আয়তনজুড়ে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড গ্রহণ করে যাচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক অধিকার এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে। তথাপি সাম্প্রতিককালে পার্বত্য অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু বিষয় প্রতীয়মান হয়।

এসবের মধ্যে রয়েছে- পার্বত্য জেলাসমূহ খুন, গুম, সংঘর্ষ, অপহরণ, পাল্টা অপহরণ এবং চাঁদাবাজি ইত্যাদির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ এলাকার জনসংখ্যাও নিয়ত বর্ধনশীল। সন্ত্রাসীরা এ এলাকায় ঘাঁটি করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। জেলা সদর কিংবা শহর এলাকায় ভীতি কিছুটা কম থাকলেও দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় তা বিরাজমান।

র‌্যাব-৭ কর্তৃক স্বল্প সংখ্যক র‌্যাব সদস্য দ্বারা বৃহত্তর চট্টগ্রামের কক্সবাজার এবং ফেনী জেলায় কর্তব্য পালনের পাশাপাশি রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবনের মতো দুর্গম ও বিশাল এলাকায় কর্তব্য পালন করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। বর্তমান মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ডিউটির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি অপতৎপরতার অংশ হিসেবে হালকা বা ভারী আগ্নেয়াস্ত্র, বুলেট, ম্যাগজিন এবং গান পাউডার বাংলাদেশে চোরাচালান হয়ে আসা বন্ধ করতে পাহাড়ি জেলাগুলোয় শান্তিচুক্তির আগে স্থাপিত সেনাবাহিনীর ক্যাম্পসমূহ বর্তমানে নেই। ওই সমস্ত এলাকায় বিজিবি/পুলিশ/র‌্যাবের ক্যাম্প স্থাপন করা যেতে পারে মর্মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় স্মারক নং-০৩.০৭৯.০১৬.০৪.০০.২২.২০১৬-২০ তারিখ ৪ঠা জানুয়ারি ২০১৭-এর মাধ্যমে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।

চিঠিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং-৪৪.০০.০০০০.০৭৭.০১.০০২.১৪-২৭৯ তারিখ ৬ই মার্চ ২০১৭-এর মাধ্যমে র‌্যাব বরাবর পাঠানো হয়। এমতাবস্থায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে র‌্যাবের ১টি ব্যাটালিয়ন গঠনের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। এদিকে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বৈঠকে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে শিগগিরই ওই তিন পার্বত্য জেলায় র‌্যাবের ইউনিট স্থাপন করা হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে র‌্যাব প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, র‌্যাব ফোর্সেস বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি
এলিট ফোর্স। এই বাহিনীতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ প্রেষণে নিয়োজিত থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। র‌্যাব ফোর্সেস-এর ওপর সরকার কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে দিন দিন উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখছে।

প্রাথমিক অবস্থায় র‌্যাবের কার্যক্রম স্বল্প পরিসরে আরম্ভ হলেও বর্তমানে এই বাহিনীর আভিযানিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সে বাস্তবতার নিরিখে র‌্যাব সদস্যদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য র‌্যাব ফোর্সেস ট্রেনিং স্কুল-এর কর্মপরিধিও ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। র‌্যাবের এ ক্রমাগত উন্নয়ন, আধুনিকায়ন এবং যুগোপনীয় প্রশিক্ষণ এর জন্য র‌্যাবের সাংগঠনিক কাঠামোতে র‌্যাব ফোর্সেস ট্রেনিং স্কুল-এর জনবল ও সরঞ্জামাদি বৃদ্ধি করে একটি পূর্ণাঙ্গ ট্রেনিং স্কুলে রূপান্তর করা একান্ত অপরিহার্য।

এমতাবস্থায়, র‌্যাবের সাংগঠনিক কাঠামোতে র‌্যাব ফোর্সেস ট্রেনিং স্কুল-এর জনবল ও সরঞ্জামাদি বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রতিবেদনে র‌্যাবের যানবাহন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার নিমিত্ত এবং র‌্যাব ফোর্সেস এর সার্বিক কার্যক্রমকে গতিশীল রাখার ক্ষেত্রে যানবাহনের গুরুত্ব অপরিসীম।

র‌্যাব ফোর্সেস এর আভিযানিক, প্রশিক্ষণ এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে মন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ১০০০ কোটি টাকার যানবাহন ক্রয়-সংক্রান্ত বিষয়ে সম্মতি প্রকাশ করেছেন। সে আলোকে অনধিক ৫০০ কোটি টাকার দুটি খসড়া ডিপিপি প্রস্তুত করে র‌্যাব সদর দপ্তরের স্মারক নং-৩৩০/৩/যানবাহন/অপারেশন/১৭০, তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৬-এর মাধ্যমে ইতিমধ্যে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এ পাঠানো হয়েছে। ওই খসড়া ডিপিপি দ্রুততম সময়ে অনুমোদিত হলে, র‌্যাব ফোর্সেস এর আভিযানিক এবং প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড বেগবান হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন