parbattanews

লংগদুতে অগ্নিসংযোগকারীদের অচিরেই গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি নাগরিক সমাজের

_MG_7202 copy

প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

সচেতন নাগরিক সমাজের উদ্যোগে ঢাকার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে রাঙ্গামাটি জেলার লংগদুতে পাহাড়ি গ্রামে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে রোববার সকাল ১১টায় নাগরিক প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নাগরিক প্রতিবাদ সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. জোবাইদা নাসরিন কণার সঞ্চালনায় এবং বিশিষ্ট কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সদস্য উষাতন তালুকদার এমপি, সাবেক তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের সদস্য খুশী কবীর, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিয়াউদ্দিন তারিক আলী, বিশিষ্ট নাট্যকার মামুনুর রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবি মুহাম্মদ সামাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেজবাহ কামাল, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রাণা দাশ গুপ্ত, মানবাধিকার কর্মী নুমান আহম্মদ খান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুথ।

প্রতিবাদ সমাবেশে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য ও দাবিনামা পেশ করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে টিএসসি গিয়ে শেষ হয়।

প্রতিবাদ সমাবেশে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, কোন গণতান্ত্রিক দেশে গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে এ ধরনের ঘটনা সত্যিই ন্যক্কারজনক ও নিন্দনীয়। একটা খুনের বিপরীতে কেন ৩০০টি ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হবে। তিনি এ ঘটনার সাথে জড়িতদের তদন্তপূর্বক দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন এবং লংগদুতে পাহাড়িদের বাড়িঘর নির্মানের দাবি জানান। লংগদু ঘটনায় অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজের নেতৃত্বে একজন জনসংহতি সমিতির সদস্য এবং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত দিনের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করারও তিনি দাবি জানান।

অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে উপজাতিদেরও অবদান ছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামে বহুত্ববাদ প্রচলন রয়েছে। কেউ যদি সন্ত্রাসী হামলায় শিকার হয়ে মারা যায় তাহলে সেখানে দেশের রাষ্ট্রীয় আইনে দোষীদের শাস্তি দেয়া উচিত। কিন্তু সেটা না করে সেখানে পাহাড়িদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার কোন যোক্তিকতা আসে না ।

তিনি আরও বলেন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার যেভাবে চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য এগিয়ে এসেছিল সেভাবে সরকারকে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণকে আস্থায় নিয়ে এসে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

উষাতন তালুকদার বলেন, ১৯৮৯ সালে ৪মে সেখানে গণহত্যা সংঘঠিত হয়েছিল। এযাবত এধরনের ঘটনার কোনটাই বিচার হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো সরকার বাস্তবায়ন করছেনা। পাহাড়িরা এখন মানবেতর দিনযাপন করছে। তিনি সকল প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোকে এ ঘটনার ব্যাপারে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, লংগদু ঘটনার দোষীদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং অগ্নিসংযোগ ও সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ  এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান। পাশাপাশি নুরূল ইসলাম নয়নের হত্যাকারীকে আইনের আওতায় এনে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেয়ার আহ্বান জানান।

খুশি কবির বলেন, লংগদু ঘটনায় দেশের সরকার নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এদেশে একটি ধর্ম, একটি জাতি ছাড়া অন্য কাউকে বাঁচতে দেয়া হবে না, তাদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা ন্যাক্কারজনক। তিনি আরও বলেন এ সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৪০০জনকে আসামী করে মামলা হয়েছে।  তবে এ ঘটনায় সম্পৃক্ততার জন্য স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত।

পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগে  দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করে এবং সমাবেশ থেকে কিছু দাবি জানায়। দাবি সমূহ:

১. লংগদুতে পাহাড়ি গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলাকারী ও অগ্নিসংযোগকারীদের অচিরেই গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।

২. অগ্নিসংযোগ ও সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং তাদের জীবন ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ, দ্রুত ও যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য অবিলম্বে সময়সূচি ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।

৪.  পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক সকল অস্থায়ী ক্যাম্প ও অপারেশন উত্তরণ প্রত্যাহার করতে হবে।

৫. পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৬.  সেটেলার বাঙালিদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনক পুনর্বাসন প্রদান করতে হবে।

Exit mobile version