parbattanews

লংগদুতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৭ জন গ্রেফতার, ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার

18903030_725602370975697_210424456_n

নিজস্ব প্রতিনিধি:

রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় সংগঠিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো তিন শতাধিক অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। এ পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শনিবার সকালে জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ক্ষতিগ্রস্ত ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেন। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদানে কমিটি গঠন করা হবে। শুক্রবার দুপুরে জারি করা ১৪৪ ধারা শনিবার দুপুরে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।

জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান বলেন, নয়নকে হত্যা করা হয়েছে। সেতো ফিরে আসবে না। তেমনিভাবে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে যে ক্ষতি করা হয়েছে, সেটাও ঠিক না।  এর মাধ্যমে পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে বিশ্বাস ও সম্প্রীতি নষ্ট করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান বলেন, পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দিতে পারব। কিন্তু যে বিশ্বাস নষ্ট হয়েছে তা কিভাবে ফিরবে।

তিনি পাড়ায় পাড়ায় পাহাড়ি-বাঙালি মিলে কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেন। এর মাধ্যমে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে বলেন।

তিনি বলেন, নয়নকে হত্যা করেছে সেটিও বের করতে হবে। সবাই সব জানে, ঘটনা কে ঘটিয়েছে। এ যে আঞ্চলিক সংগঠনগুলো জেএসএস, ইউপিডিএফ, জেএসএস (সংস্কার) প্রত্যেকে এখানে অন্যায় করে যাচ্ছে। আমাদের কাছে এ ধরনের তথ্য আছে একজন পাহাড়ি ব্যক্তি জুম চাষের অথবা কলা নিয়ে বাজারে বিক্রি করতে আসে তাকেও চাঁদা দিতে হয়। এ অন্যায়গুলো বন্ধ না করলে তো এ ধরনের অন্যায় চলতে থাকবে। এসব চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। চাঁদাবাজির মূলে রয়েছে অবৈধ অস্ত্র। অস্ত্র না থাকলে আপনাকে কেউ চাঁদা দিবে না। অস্ত্র দেখালে ভয় পাবে আর এ ভয় দেখিয়েই চাঁদা তোলা হচ্ছে।

উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, জেলা পরিষদ সদস্য মো. জানে আলম, লংগদু জোনের সেনা অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আবদুল আলিম চৌধুরী, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন, উপজেলা জেএসএস’র সাধারণ সম্পাদক মনিশংকর চাকমা, ইউপি চেয়ারম্যান কল্যান মিত্র চাকমা প্রমুখ।

ইউপি চেয়ারম্যান কল্যান মিত্র চাকমা বলেন, ভয়ে আতঙ্কে লোকজন বিহারে ও একেক জায়গায় চলে গিয়েছে। সবার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
জেএসএস লংগদু উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মনি শংকর চাকমা জানান, বৃহস্পতিবারও যাদের সাথে বসে চা খেয়েছি। শুক্রবারে এসে কেমনে আমার বাড়িঘরে সে আগুন দিল এটা মাথায় আসে না।

তিনি বলেন, নিরাপত্তার জন্য একেকজন একেক জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। সবার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। অনেককেই ফিরে আসার জন্য বলেছি। কিন্তু তারা এখনো আতঙ্কের মধ্যে আছে। আমাদের কথায় তারা আশ্বস্থ হতে পারছেন না।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। লোকজন ফিরে আসছে। কাল থেকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।

শুক্রবারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮ জন পলাতক রয়েছে এবং ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হল- সাইফুল (৩০), শাহ আলম(৩৪), মো. শহিদ মিয়া (৩৫), আবুল খায়ের (৩৮), শরিফুল ইসলাম সবুজ (৩৫), মো. মোক্তার হোসেন (২০) ও শরিফ (৩১)।

পলাতক আসামীরা হল- সাইফুল ইসলাম (৫২), মো. জুয়েল (৩৪), মো. রফিক (৩২), খাইয়ুম প্রকাশ খাইয়ুম মেম্বার(২৮), মো. শুক্কুর (৪২), মো. মামুন (২৬), কাউছার প্রকাশ ঢালি (৩৫), মো. জামাল (২৮)।

এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরো তিন শতাধিককে আসামী করা হয়েছে। ঘটনার সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল ও গুলি ছোঁড়ে। এসময় হামলাকারীদের ইটের আঘাতে চার পুলিশ আহত হয়েছেন। তারা হলেন-কনস্টেবল মো মাহফুজ, মশিউর রহমান, আবাবিল, সাইফুল ইসলাম। তারা লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মামলার বাদি এসআই দুলাল হোসেন পিপিএম জানান, শুক্রবারের ঘটনায় তিন শতাধিক অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে কোর্টে পাঠানো হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেফতারের জন্য পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় ভাড়ায় চালিত মোটরবাইক চালক নয়নকে হত্যা করা হয়। শুক্রবার দুপুরে নয়নের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন স্থানীয়রা।  এসময় মিছিল থেকে উত্তেজিত জনতা রাস্তার পাশের জেএসএসের কার্যালয় ভাংচুর ও তিনটিলা নামক স্থানে পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এতে কেউ হতাহত হয়নি। বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

Exit mobile version