লংগদুতে সাম্প্রদায়িক হামলা সংক্রান্ত মামলা সিআইডি কর্তৃক তদন্তের নির্দেশ

আলমগীর মানিক, রাঙামাটি:
রাঙামাটির লংগদু উপজেলার গুলশাখালী ও বগাচতর ইউনিয়নে বাঙালি কর্তৃক তিনটি পাহাড়ি গ্রামে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় পুলিশের রিপোর্ট আবারো প্রত্যাখ্যান করেছেন বাদী মিলন চাকমা। গত ২১ আগস্ট বুধবার রাঙামাটি জেলার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে নারাজি আবেদন করেছেন তিনি। আবেদনে তিনি সিআইডি’র তদন্ত দাবী করলে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট তাহমিনা আফরোজ চৌধুরী সিআইডিকে মামলাটি তদন্তের আদেশ দেন।

উল্লেখ্য যে, সাবের আলী নামে মানসিক প্রতিবন্ধী এক বাঙালির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ২০১১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলার গুলশাখালী ও বগাচতর ইউনিয়নের রনজিত পাড়া, রাঙ্গীপাড়া ও শান্তিনগর নামে তিনটি পাহাড়ি গ্রামে স্থানীয়রা সংঘবদ্ধ হয়ে হামলা ও ঘরবাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করে। সে সময় বাঙালিরা পাহাড়িদের ২৪টি বাড়ী সম্পূর্ণভাবে পুড়িয়ে দেয় এবং ৬টি বাড়ী লুঠপাট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছে ক্ষতিগ্রস্থ পাহাড়িরা। ঐ ঘটনার প্রেক্ষিতে রনজিত পাড়ার অধিবাসী মিলন চাকমা গত ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৭ তারিখে লংগদু থানায় ১৮ জন বাঙালির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।

বাদীর উল্লেখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয় লংগদু থানার পিএসআই মো: আশরাফ কামাল মিয়াকে। গত ৬ মার্চ ২০১২ তারিখে তিনি আদালতে চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। রিপোর্টে তদন্ত কর্মকর্তা মো: আশরাফ কামাল মিয়া উল্লেখ করেন, ঘটনা সংঘঠনের সত্যতা পাওয়া গেলেও মামলার উল্লেখিত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কোন প্রমাণ পাননি।  তিনি অভিযুক্ত আসামীদের দায় হতে অব্যাহতি প্রদানের জন্য তিনি আদালতে প্রার্থনা জানান।
এ প্রেক্ষিতে তদন্ত রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে মিলন চাকমা আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে নারাজি আবেদন দাখিল করে সিআইডি কতৃক তদন্তের আবেদন জানান। কিন্তু আদালত সিআইডি তদন্তের পরিবর্তে লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্তের আদেশ দেন।

লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ আলী তদন্ত শেষে  গত ২৯ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে আদালতে আগের মতই  চূড়ান্ত  রিপোর্ট দাখিল করেন। এসআই মোহাম্মদ আলী তাঁর রিপোর্টে পূর্ববর্তী তদন্ত কর্মকর্তার অনুরুপ রিপোর্ট দিয়ে অভিযুক্ত আসামীদের দায় হতে অব্যাহতি দেয়ার জন্য প্রার্থনা জানান এবং ভবিষ্যতে কোন তথ্য পাওয়া গেলে মামলাটি পুনর্জীবিত করা হবে বলেও উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে রাঙামাটি থেকে ফেরার পথে লংগদু উপজেলার কাট্টলী বিল হ্রদ এলাকার জোড়াটিলা নামক স্থান থেকে একটি আঞ্চলিক সংগঠনের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে মামলার বাদী মিলন চাকমা অপহৃত হলে পরবর্তীতে মামলায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। প্রায় ছয় মাস পর গত ২৮ জুলাই ২০১৩ তারিখে সন্ত্রাসীদের কবল থেকে মুক্তি পেলে মামলার শুনানীতে আবার অংশগ্রহণ করেন।

মিলন চাকমা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী কর্তৃক দাখিলকৃত তদন্ত রিপোর্ট আবারও প্রত্যাখ্যান করে গত ২১ আগস্ট ২০১৩ তারিখে আদালতে নারাজি জানিয়ে সিআইডি তদন্তের আবেদন জানান এবং আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত সিআইডিকে তদন্তের আদেশ প্রদান করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন